মানুষের কল্যানে বি.খন্দকারের ‘ইউজিবি’

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : করোনা মহামারীর কারনে থমকে গেছে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বাংলাদেশে মার্চ মাস থেকেই এর ভয়াবহতা লক্ষ্য করা গেছে। জীবনযাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক হলেও দিনদিন এর ভয়াবহতা বেড়েই চলছে। এই ভয়াবহতার কথা চিন্তা করেই অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বি. খন্দকার ইউনাইটেড গ্রুপ অব বাংলাদেশ (ইউজিবি) নামক একটি নন প্রফিট অরগানাইজেশন গঠন করেন।

ইউজিবি এর মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং করোনা পরবর্তী সময়ে বেকার, অসহায় নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত মানুষের সহায়তায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা।

ইউজিবি গত ৩ মাসে ১২০০০ এর বেশি মানুষকে ইফতারি বিতরণসহ, ২৫০০ পরিবারকে ত্রান, ৫০০ পরিবারকে নগদ ও ঈদ উপহার সামগ্রী, ২০০ এর বেশি পথ কুকুরদের খাবার প্রদান করেছে। এছাড়াও ইউজিবি অস্ট্রেলিয়াতে বিভিন্ন রকমের মানবসেবা মূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। এবং এসব কার্যক্রম ইউজিবি এর চেয়ারম্যান বি.খন্দকারের নিজস্ব অর্থায়নে সম্পন্ন হয়েছে।

ইউজিবি শুরু থেকেই তাদের কার্যক্রম দিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ভালো সাড়া ফেলে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ইউজিবি এর সাথে দেশের অনেক সেলিব্রিটি, রাজনীতিবিদ এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ যোগ দিয়েছেন।

যে মানুষটি নিজের দেশের সাধারন এবং দুস্থ মানুষের অভাব এবং অসহায়ত্ব দেখে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে এসে ইউজিবি প্রতিষ্ঠা করা থেকে শুরু করে এবং গরীব মানুষদের পাশে এসে দাড়িয়েছে সেই বি, খন্দকারের এরকম একটি উদ্যোগ নেয়া এবং সেটি সফলভাবে পরিচালনা করা নিয়ে এই বিশেষ ফিচার।

ইউজিবি’র মতো একটি সংস্থা শুরু করার প্ল্যান বা ভাবনাটা কবে থেকে জানতে চাইলে বি.খন্দকার জানান, ‘আমি সবসময়ই সাধারন এবং অভাবী মানুষের জন্য কাজ করেছি। তবে এবার যখন সারা বিশ্বে করোনা নিয়ে হাহাকার পড়ে যায় তখন আমার মনে হয় বাংলাদেশের কি হবে!! কারন বাংলাদেশ আয়তনে ছোট এবং জনবহুল একটি দেশ।

করোনায় সব বন্ধ করে দিতেই হবে, তখন নিম্নবিত্ত এবং দুস্থ মানুষ কিভাবে জীবন-যাপন করবে!! তিনবেলার খাবার তারা কিভাবে যোগাড় করবে!! এই চিন্তা থেকেই আমি ইউজিবির প্ল্যানটা ডেভেলপ করি। এবং প্ল্যানটা ডেভেলপ করার পর আমি আর দেরি করিনি। কারন ইউজিবির প্ল্যানটা যথেষ্ট স্বচ্ছ এবং যুক্তি সঙ্গত। তাই প্ল্যানটা নিয়ে কাজে নেমে গেছি এপ্রিলের শুরুতেই।

আমি মনে করি যে, আসলে সত্যিকার অর্থে মানুষের সাহায্য করতে কোনো আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন পড়ে না ফিতে কেটে জানান দিয়েও শুরু করার দরকার পড়েনা। তাই অন্যভাবে বলা যায় ইউজিবির শুরুটা আনুষ্ঠানিক ভাবে হয়নি তবে অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর তাগিদে হয়েছে। এটাই আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়েছে।

কোন কোন সেক্টর এবং মানুষকে নিয়ে ইউজিবি কাজ করবে বলে জানতে চাইলে বি.খন্দকার বলেন- ‘ইউজিবি একটি অনেক বড় একটি প্রকল্প। কাজ করতে গয়ে আমি দেখেছি যে, আমাদের দেশের একটা বড় শ্রেনী আছে অভাব-অনটন নিয়েই বেচে থাকে। তাদের নিয়েই কাজ করা মূল লক্ষ্য হলেও আমাদের ইউজিবি একটি সার্বজনীন সংস্থা তাই ইউজিবি সকল ধরনের মানুষকে নিয়েই কাজ করবে ইনশাহআল্লাহ।

যেমন আমাদের একটি বহুল আলোচিত প্রোজেক্ট Hunger Free Bangladesh। ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ায় এই প্রোজেক্টের মূল লক্ষ্য। এছাড়া ইউজিবি বাংলাদেশের শিক্ষিত ও মেধাবী বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কাজ করবে। ইতিমধ্যে এই বিষয়ে অনেকদূর এগিয়েছি আমরা।

খুব শীঘ্রই ইউজিবির Join The Revolution নামক একটি প্রজেক্ট আসতে চলেছে যেটির সাথে সরাসরি আমি যুক্ত থাকবো। এই প্রোজেক্টের মাধ্যমে সামাজিক, পারিবারিক, ব্যক্তিগত জীবনের নানা রকম সমস্যার সমাধান এবং এসব থেকে ওভারকাম করার জন্য নানারকম কোর্স প্রদান করা হবে সম্পুর্ণ বিনামূল্যে। ফ্রী এডুকেশন সার্ভিস সহ আরো অনেক প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করবে ইউজিবি।

সাধারন মানুষদের নিয়ে কার্যক্রম শুরু করার পরে এখন পর্যন্ত কেমন গতিতে এগোচ্ছে ইউজিবির পথচলা জানতে চাইলে বি.খন্দকার জানান- মহান আল্লাহ-তায়ালার রহমতে ইউজিবি এখন পর্যন্ত খুব ভালোভাবে কাজ করতে পারছে। আমরা মানুষের অনেক ভালোবাসা এবং দোয়া পাচ্ছি।

মজার বিষয় হচ্ছে অন্যন্য দেশের মানুষের কাছ থেকেও অনেক পজিটিভ রেসপন্স পাচ্ছি আমরা যেটি আমাদের চিন্তার বাইরে ছিলো। আসলে নিজের জায়গায় সৎ থেকে যদি কাজ করা যায় তবে সেটি বিফলে যায়না ইউজিবি অল্পদিনেই সেটা আবারো প্রমান করেছে। আমরা আমাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের আস্থার মর্যাদা রাখবো ইনশাআল্লাহ।

ইউজিবি নিয়ে ভবিষ্যৎ প্ল্যান সম্পর্কে বি.খন্দকার আরো জানান, যে ইউজিবি বাংলাদেশকে কেন্দ্র করেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে স্পেনে ইউজিবির কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে এবং ওখানে আমরা বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি।

জাপানেও ইউজিবির কার্যক্রম খুব শীঘ্রই শুরু হবে.. আকিফুমি নামের একজন জাপানি কন্সট্রাকশন ব্যবসায়ী ইউজিবিকে ডোনেশন এবং ইউজিবির সাথে কাজ করতে প্রবল ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আকিফুমি জাপানের মাতসুযাওয়া জিস্য (Matsyuawa Jisyo Co. Ltd) নামের একটি রিয়েল স্টেট কোম্পানির মালিক।

অস্ট্রেলিয়াতে বেশ আগে থেকেই ইউজিবি সফলতার সাথে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সামনে আরো অনেক নতুন সম্ভাবনা এবং সুযোগ তৈরী হবে যা বাংলাদেশের একটি অন্যরকম ভাবমূর্তি বিশ্বদরবারে তুলে ধরবে বলেই আমাই মনে করছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ‘Provide service to Everyone, Everywhere’ এই লক্ষ্যেই ইউজিবি ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে চলেছে।

সাক্ষাৎকারের একটা পর্যায়ে ইউজিবির শুরু থেকে যারা সাথে ছিলো বা আছে তাদের নিয়ে যদি কিছু বলতে চেয়েছেন বি.খন্দকার। তিনি বলেন- পুরো ইউজিবির প্ল্যানটা আমি নিজেই ডেভেলপ করেছিলাম কিন্তু অবশ্যই ইউজিবিকে সফল করতে আমার সাথে আরো অনেক মানুষের দরকার হবে সেটা আমি জানতাম। শুরুর দিকে ইউজিবি নিয়ে ফেইসবুকে একটা ভিডিও দেয়ার পরের দিন দেখি ৫০০০ ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এই বিষয়টা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল।

এভাবেই আমার পথ চলার শুরু। শুরু থেকেই মডেল বুলবুল টুম্পা, গায়ক বাপ্পী খন্দকার, চিত্রনায়িকা সাদিয়া পারভীন পপি, ডিজাইনার রাকিব খান সহ আরো অনেকেই ইউজিবির সাথে আছেন। ইউজিবির সকল সদস্যকে আমি মন থেকে ধন্যবাদ জানাই। কারন তারা পাশে না থাকলে আমি একা ইউজিবি’কে এতোদূর নিয়ে আসতে পারতাম না।

এতো বিশাল প্রজেক্ট টেনে নিয়ে যাবার জন্য অর্থনৈতিক সাপোর্ট দরকার। এধরনের প্রজেক্টে সাধারনত আমরা দেখি বিদেশী নানা সংস্থা স্পনসর করে বা ডোনেশন দেয় কিন্তু বি.খন্দকার অনেক প্রস্তাব পেলেও এখনো সেই অর্থে কারোর কাছ থেকে কোনো রকমের ডোনেশন / ফান্ড নেননি বলেই জানিয়েছেন।

ইউজিবির সকল কার্যক্রম তার ব্যক্তিগত ফান্ড বা অর্থায়ন দিয়ে হয়েছে। তবে শ্রীঘই ইউজিবি এর একটি নিজেস্ব অ্যাপ ডেভেলপ করা হবে এবং সেই অ্যাপের মাধ্যমেই ডোনারদের কাছ থেকে ডোনেশন নেয়া এবং অসহায়দের কাছে ডোনেশন ডিস্ট্রিবিউট করা হবে ১০০% স্বচ্ছতা বজায় রেখে বলে জানিয়েছেন মানবতার সেবায় নিয়োজিত এই চমৎকার মানুষটি।

করোনা পরিস্থিতিতে ইউজিবি’র জনসেবামূলক কাজ দেখে সাধারন মানুষ ইউজিবিকে গ্রহণ করছেন বেশ ভালো ভাবেই। বি.খন্দকার বলেন, তারা আস্থা রাখছেন আমাদের উপর এটাই আমাদের জন্য অনেক বড় বিষয়। ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেই আস্থার মর্যাদা রাখবো। সবার দোয়া এবং শুভকামনা আমাদের নিয়ে যাবে সফলতার দ্বারপ্রান্তে এটাই কাম্য।

Ad