‘ক্লাস অফ এইটিথ্রি’ দিয়ে ববি’র ওটিটি যাত্রা

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : বিনোদন জগতের নতুন জনপ্রিয় মাধ্যমে এখন ওটিটি। আমাজন প্রাইম, নেটফ্লিক্স, হইচই এসব প্ল্যাটফর্ম এখন বিনোদনের নতুন নাম। একই সাইটে দাপিয়ে বেড়াছে সারা বিশ্বের নানা প্রান্তের অভিনেতা, অভিনেত্রী, পরিচালক, প্রযোজক সহ সকল শিল্পী কলাকুশলী। ভিন্নধর্মী কনটেন্ট, দক্ষ অভিনয়, নির্মানের মুন্সিয়ানা এসব দিয়েই একের পর এক জনপ্রিয় এবং আলোচিত সিরিজ বা মুভি নিয়ে হাজির হচ্ছেন তারা।

এরই ধারাবাহিকতায় জনপ্রিয় বলিউড তারকারা এখন বেশ ভালোভাবেই ঝুকেছেন এই মাধ্যমে। আশি দশকের মুম্বাই (তৎকালীন বোম্বে) শহর, সেই সময়কার পুলিশ বাহিনী, এনকাউন্টার, এবং আরব সাগরের দুই ধারে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনদের তান্ডব এসব কিছু নিয়েই সম্প্রতি জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ‘ক্লাস অফ এইটিথ্রি’।

আশির দশকের মুম্বাইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ড জগতের অবস্থা নিয়েই বই লিখেছিলেন জনপ্রিয় লেখক সৈয়দ হোসেন জায়দি। বইটার নাম ‘ক্লাস অফ এইটিথ্রি- পানিশারস অফ মুম্বই পুলিশ’। লেখক সেই সময়ে চুরি, খুন, স্মাগলিং, বিদেশী নানা দ্রব্যের চোরাচালানি এবং আন্ডারওয়ার্ল্ড এর ক্ষমতার ছায়া মুম্বাই পুলিশ প্রশাসনে কতোটা প্রভাব ফেলেছিল, সেই বিষয় বেশ ভালোভাবেই বর্ননা করেছেন এই বইতে।

হোসেন জায়দির লেখা সেই বইকে মুল প্লট হিসবে রেখেই পরিচালক অতুল সাভারওয়াল নির্মান করেছেন ‘ক্লাস অফ এইটিথ্রি’। সেই সময়ে মুম্বাই শহরে বাস করে আন্ডারওয়ার্ল্ড জগতের মাফিয়াদের সঙ্গে লড়াই করা যে কতোটা কঠিন ছিলো তাই দেখা গিয়েছে ‘ক্লাস অফ এইটিথ্রি’তে।

এই অসম যুদ্ধে অনেক সৎ পুলিশ অফিসারকেই তা হাড়ে হাড়ে টের পেতে হয়েছে যে মাফিয়াদের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকা কতোটা কঠিন! সিনেমায় বলিউডের ববি দেওলের অভিনীত বিজয় সিং চরিত্রটি মূল চরিত্র রেখে সাজানো হয়েছে পুরো গল্পটি। উল্লেখ্য এই সিনেমার মধ্য দিয়েই প্রথমবার ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অভিষেক হলো ভারতীয় কিংবদন্তি ধর্মেন্দ্রর ছোট পুত্রের।

বলিউডের আলোচিত এবং প্রখ্যাত প্রযোজনা সংস্থা ‘রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্ট’ এর ব্যানারে এই সিনেমা নেটফ্লিক্সে মুক্তির পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। প্লট বা কনটেন্ট দারুন হলেও অভিনয় বা নির্মানের মুন্সিয়ানার ঘাটতি ঠিক জমাতে পারেনাই ‘ক্লাস অফ এইটিথ্রি’।

আশির দশকের রমরমা মাফিয়া দাপটের কারনে নাজেহাল মুম্বাই পুলিশ মাঝেমাঝেই নকল বা ভূয়া এনকাউন্টারের নাটক সাজিয়ে খতম করতেন মাফিয়াদের। অনেক লিমিটেশনের মাঝে থেকে বা সিষ্টেমের মাঝে থেকেই সিষ্টেমের বিপরীতে যেয়ে অন্যরকম যুদ্ধ করা, রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশ এবং প্রভাব, সাথে শহরে গ্যাংষ্টাদের দাপট, এনকাউন্টারের পর মানবাধিকার সংগঠন গুলোর বিরোধিতা সবকিছু সামাল দিয়ে যে যুদ্ধটা সেই সময়ের পুলিশ প্রশাসনের অবস্থা বেশ ভালোভাবেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন পরিচালক।

আর এই চেষ্টায় তার মূল অস্ত্র ববি দেওল। এবং ববি দেওলের সাথে তারই ছাত্রদের একটি ব্যাচের সবচেয়ে খারাপ পাঁচ ব্যাচমেট। বিজয় সিংয়ের পাঁচ ছাত্রের মধ্যে নবাগত হিতেশ ভূজরাজ (বর্দে), সমীর পারাঞ্জপে (আসলাম), ভূপেন্দ্র জারাওয়াত (শুক্ল) সিনেমায় সেরা অভিনয় দেখিয়েছি। বিজয়ের বন্ধু চরিত্রে জয় সেনগুপ্ত ভালো করেছেন। তবে মন্ত্রী মনোহর পাটকরের চরিত্রে ক্রাইম পেট্রোল খ্যাত অনুপ সোনিকে আরও বেশি সময় স্ক্রিনে পাওয়া গেলে ভাল লাগতো বলেই মনে হচ্ছে।

পোড় খাওয়া, সৎ পুলিশ অফিসার চরিত্রে ববি দেওল তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন একথা বলা যায়। কিন্তু সেই সেরাটা হয়তো আরো অসাধারণ হতে পারতো, বিশেষ করে চ্যালেঞ্জিং কিছু দৃশ্যে আবেগ, অনুভূতি এবং যে ধরনের লুক স্ক্রিপ্ট ডিমান্ড করছিলো ঠিক সেরকমটা পাওয়া গেলনা বলেই হতাশা একটু বাড়ে। তবে একটি সিনেমা মানে টিম ওয়ার্ক যেখানে প্রতিটা সেক্টর, প্রতিটা শিল্পী কলাকুশলীদের কাছ থেকে পুরোটা না পাওয়ায় জমজমাট হতে যেয়েও কেনো যেনো খাপছাড়া হয়ে রইলো ‘ক্লাস ওফ এইটিথ্রি’।

অথচ আশির দশকের মুম্বাই ( তৎকালীন বোম্বে) শহর, আন্ডারওয়ার্ল্ড দাপট, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক নানা প্রভাব এবং আইনের নানা ফাক-ফোকড়, মাফিয়া এবং পুলিশের মধ্যকার ইঁদুর-বিড়াল দৌঁড়, খুন, রোমাঞ্চ বা থ্রিল সব উপকরনই মজুত থাকলেও কেমন যেন জমলো না সিনেমাটি। পরিচালক অতুল বহুল পঠিত বইয়ের বাইরে যেয়েও বিভিন্ন মানানসই বিষয় যোগ করেছিলেন কিন্তু তাতেও খুব একটা যেনো লাভ হইলোনা।

তবে স্বীকার করতেই হচ্ছে সিনেমায় কাস্টিংয়ের তেমন কোনো চাকচিক্য ছিলোনা তাই চরিত্রগুলো অবিশ্বাস্য লাগেনাই। পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার গল্পের মনোযোগ দিয়েছেন তবে সেটি দর্শকদের গল্পের সাথে কতোটা বাধতে পাড়লো সেটির দিকে খেয়াল দিয়েছেন বলে মনে হলোনা। পৌনে দুই ঘণ্টারও কম সময়ব্যাপী এই সিনেমা কখনো ছন্দপতন ঘটিয়েছে আবার কখনো স্ক্রিনে টেনে রেখেছে।

প্রথম কয়েকটি দৃশ্যে এবং শক্তিশালী কিছু সংলাপ সিনেমার একটি আমেজ তৈরি করে দিয়েছিলো তবে সেটা সবসময় ধরে রাখতে পারেনি। পরিচালক অতুল সাভারওয়ালের লেখা সংলাপ প্রশংসার দাবিদার। গ্যাংষ্টার-পুলিশ ড্রামা হলেও স্ক্রিনে কিছুক্ষন পরেই বোমা বা গুলির কানফাটা শব্দ অথবা বা অহেতুক লাফঝাপ নেই। যা এই ধরনের ছকের বাইরে এসে ভিন্ন কিছু দেখিয়েছে। তবে মুম্বাই পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বীরগাথা হতে যেয়েও যেনো মধ্যমানের এক সিনেমা হয়েই রয়ে গেলো ‘ক্লাস অফ এইটিথ্রি’।

Ad