গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘পাপ পূন্য’

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : নাম এবং শিল্পী তালিকা ঘোষনার পর থেকেই আলোচনায় আমাদের দেশের দক্ষ নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘পাপ পূন্য’। তার প্রথম দুটি চলচ্চিত্র ‘মনপুরা’ এবং ‘স্বপ্নজাল’এ প্রেম আর ভালোবাসা মূখ্য সাবজেক্ট হিসেবে উপস্থাপন করলেও নান্দনিকতার সাথে তিনি দেখিয়েছেন এই বাংলার চিরায়ত রূপ, বহুকাল ধরে চলে আসা কুসংস্কার, এবং রীতির মতো করেই ক্ষমতাবান ও নিপীড়িতের দ্বন্দ্ব ও সাম্প্রদায়িকতার নানা দিক।

তাই কেমন হবে তার তৃতীয়টি সিনেমাটি সেটা নিয়ে আগ্রহ যেমন ছিলো তেমনি এই সিনেমার ষ্টারকাস্টের দিকে তাকালে সেই আগ্রহ বেড়ে যায় আরো কয়েকগুন।

‘পাপ পূন্য’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, চঞ্চল চৌধুরী, আফসানা মিমি, সিয়াম আহমেদ, ফজলুর রহমান বাবু, ফারজানা চুমকি, গাউসুল আযম শাওন এবং নবাগতা শাহনাজ সুমি। এছাড়া একটি বিশেষ চরিত্রে দেখা যাবে মনির খান শিমুলকেও। এতো দক্ষ তারকা শিল্পীদের নিয়ে নির্মিতব্য এই সিনেমাটি যে নান্দনিক একটি শিল্পকর্ম হিসেবে হাজির হতে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। শ্যুটিং এবং ডাবিং আগেই শেষ হলেও আজ অভিনেতা সিয়াম আহমেদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোষ্টের মাধ্যমে জানা যায় সিনেমার পোষ্ট প্রোডাকশন সহ সব কাজ শেষ হয়েছে।

গতবছরের ২৬শে আগস্ট থেকে চাঁদপুরের হরিপুর চৌধুরী বাড়িতে সিনেমাটির শুটিং শুরু হয়েছিলো। যদিও নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম গল্পের বিষয়ে কিছুই জানান নি। একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন- এই সিনেমায় মানুষের মৌলিক তাড়নাকেই ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন তার নির্মাণ শৈলীর মাধ্যমে। তবে আগের দুটি সিনেমার থেকে ‘পাপ পূন্য’ একদমই আলাদা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।

খুব বেছে বেছে সিনেমায় অভিনয় করলেও চঞ্চল চৌধুরী ইতিমধ্যে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে একটি নির্ভরযোগ্য এবং জনপ্রিয় নাম। মনপুরা, রুপকথার গল্প, টেলিভিশন, আয়নাবাজি, দেবী’র মতো নান্দনিক এবং ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের পরিচালনায় ‘মনপুরা’ চলচ্চিত্রের পর অনেক বছর গ্যাপ দিয়ে এই সিনেমার মধ্য দিয়ে আবারো তার পরিচালনায় হাজির হচ্ছেনন চঞ্চল চৌধুরী। অন্যদিকে ১০ বছর আগে ‘প্রিয়তমেষু’ নামের একটি সিনেমায় শেষ অভিনয় করেছিলেন নব্বই দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আফসানা মিমি। এক দশক পরে শুধুমাত্র গল্প এবং গিয়াস উদ্দিন সেলিম এর উপর আস্থা রেখে সিনেমায় অভিনয় করলেন তিনি। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের পরিচালনায় প্রায় ১৮ বছর পর কাজ করলেন তিনি।

এই প্রজন্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আলোচিত চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন এই সিনেমায়। যদিও এই সময়ে সিনেমা জগতে অত্যন্ত ব্যস্ত এই অভিনেতা একের পর এক ভালো গল্পের সিনেমায় অভিনয় করে যাচ্ছেন। ‘পাপ পূন্য’ ছাড়াও ‘অপারেশন সুন্দরবন’, ‘শান’, ‘ইত্তেফাক’, ‘স্বপ্নবাজী’, ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ এবং মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘বিশ্বসুন্দরী’ সব মিলিয়ে বলা যায় আগামীর সুপারস্টার হতে যাচ্ছেন তিনি।

অন্যদিকে টেলিভিশনের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ফারজানা চুমকি এই সিনেমার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্রে পা রাখতে যাচ্ছেন। একটি দৈনিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রথম সিনেমা হিসেবে কাজ করে আমি ভীষণ সন্তুষ্ট। কারণ একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে সেলিম ভাইয়ের এবং তার সিনেমার গ্রহণযোগ্যতা আছে দর্শকের কাছে, সেটা প্রমাণিত। খুব ভালোভাবে আমরা সবাই একটি পরিবারের মতোই কাজ করছি।’ আমি আশাকরি দর্শকেরা হতাশ হবেনা।

অন্যদিকে এই সিনেমার মাধ্যমে শাহনাজ সুমিরও চলচ্চিত্রে অভিষেক হতে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ের সিজন থ্রি’র সেরা দশে ছিলেন তিনি। তবে জুঁই নারকেল তেলের একটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সবার নজরে আসেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় গিয়াস উদ্দিন সেলিমের সিনেমায় কাজ করার সুযোগ পান তিনি।

এছাড়া একজন মামুনুর রশীদ বা ফজলুর রহমান বাবুর মতো শক্তিশালী অভিনেতাদের নিয়ে নতুন করে কিছু বলা/লেখার নাই। কারন যে চরিত্রেই তাদেরকে উপস্থাপন করা হোক না কেনো তারা যে নিজেদের সেরাটা দিবেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সব মিলিয়ে বলা যায় ভিন্নধর্মী মৌলিক গল্প, নির্মানের মুন্সিয়ানা, দক্ষ শিল্পীদের অভিনয় দক্ষতা সব মিলিয়ে অসাধারন নান্দনিক একটি সিনেমা পেতে যাচ্ছি আমরা। শুভকামনা রইলো ‘পাপ পূন্য’ র পুরো টিমের জন্য।

Ad