চলচ্চিত্রের সুবাতাস নিয়ে ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : ব্যতিক্রমী নাম, পোস্টার, টিজার, ট্রেলার এবং গান রিলিজ দেবার পরেও বিভিন্ন কারনে মুক্তির তারিখ বেশ কয়েকবার পিছিয়ে দেবার পর এবার গুণী নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের প্রথম সিনেমা ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’র রিলিজ ডেট ঘোষনা দেয়া হয়েছে আগামী ২৩শে অক্টোবর।

আমাদের দেশের তথাকথিত বানিজ্যিক সিনেমার গতানুগতিক ধারার বাইরে এসে একেবারেই ভিন্নধর্মী ট্রেইলারটি রিলিজ দেবার পর থেকেই দর্শকদের মনে তৈরি হয়েছে আগ্রহ এবং নানা রকম জিজ্ঞাসা। সিনেমার গল্পকে ঘিরে সিনেমাপ্রমীদের মধ্যে আগে থেকেই যে আগ্রহ ছিলো সেটি ট্রেলার প্রকাশের পর আরও বেশি আলোচনায় স্থান করে নিয়েছিলো।

ট্রেলারের নানা দৃশ্য ও সংলাপের বেড়াজাল নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে দর্শকদের।সিনেমাটি কী থ্রিলার নাকি সায়েন্সফিকশন না রোমান্টিক? এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত না জানা গেলেও কিছুদিন আগেই নির্মাতা উজ্জ্বল জানিয়েছিলেন- এটা কাঁচের যুগের সিনেমা নয়। এটি একটি অন্যরকম অনুভূতির সিনেমা।

ট্রেলার দেখে যতোটুকু বোঝা যায় সিনেমাটির গল্পের মূল চরিত্র অয়ন ও নীরা। এই দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন নবাগত ইমতিয়াজ বর্ষণ ও শার্লিন ফারজানা। এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইলোরা গওহর, ইনামুল হক, মানস বন্দোপাধ্যায়, ফারিহা শামস সেওতি সহ আরো অনেকে।

এর আগে ‘জাগো’ সিনেমার একটি চরিত্রে অভিনয় করলেও ছোট পর্দার জনপ্রিয় এবং দক্ষ অভিনেত্রী শার্লিন ফারজানার মতে ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমাটিই অভিনেত্রী হিসেবে তার প্রথম সিনেমা। নীরা চরিত্রটি সেলুলয়েড এর পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্য নিজের সেরাটাই দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। ঢাকাই সিনেমার নায়িকা হিসেবে ভিন্নধর্মী এক নতুন চরিত্র নিয়েই হাজির হচ্ছেন তিনি আগামী ২৩ তারিখ।

ট্রেলারে যতোটুকু ভিন্নতা এবং ব্যতিক্রমী নীরাকে দেখা গেছে পুরো সিনেমায় তার বাত্যয় ঘটবে না বলেই আশা রাখা যায়। ভবিষ্যতে সুন্দর গল্পে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলে নিয়মিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন বলে একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন এই সম্ভাবনাময় আলোচিত অভিনেত্রী।

অন্যদিকে ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমার আগে ওয়াহিদ তারেকের ‘আলাগা নোঙর’, এন রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতীর কথা’ ও অঞ্জন সরকার জিমির ‘ক্ষত’তে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। যদিও এর মধ্যে কোনো সিনেমাই এখন পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। সেই হিসেবে তার অভিনীত চতুর্থ সিনেমা ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ তার অভিষেক সিনেমা হতে যাচ্ছে।

বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যমে একটি সিনেমার প্রধান অভিনেতা হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করতে যাচ্ছেন তাই স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে চট্রগ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস এবং ব্যাংকার হিসেবে একটি ব্যাংকে জব করার কারনে ঢাকায় আসা যাবার ব্যাপারে একটা প্রতিবন্ধকতা ছিলো। তবে অভিনেতা হবার ইচ্ছা এবং কাজের প্রতি ভালোবাসা তাকে এই জায়গায় এনেছে এটা বলা যায় নিঃসন্দেহে।

এই সিনেমায় তার চুক্তিবদ্ধ হবার বিষয়টিও মজার। একদিন হঠাৎ করেই পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বল তাকে দেখা করতে বলেন। পরিচালকের অফিসে দেখা করতে গেলে কিছু পৃষ্ঠা ধরিয়ে দিয়ে পড়তে বলেন বর্ষণ সেগুলো পড়েন। এক পর্যায়ে সিনেমার ব্যাপারে সব বলে তাকে পরে জানানো হবে বলে সেদিনের মতো বিদায় নেন পরিচালক।

কিছুপর মাসুদ হাসান উজ্জ্বল আবার বললেন, ‘বর্ষণ তুমি কি আবার একটু আসতে পারবে আমার অফিসে? তখন বর্ষণ বলেন, ‘শুক্রবার আর শনিবার ছাড়া আমি ছুটি পাই না। তখন নির্মাতা বললেন, ঠিক আছে।’ এরপর এক শুক্রবার তিনি নির্মাতার অফিসে গেলেন। তখন আবার তার স্ক্রিন টেষ্ট নেওয়া হলো।

ফের বললেন, কয়েকদিন পর কনফার্ম করবেন। আবার বেশ কিছুদিন যোগাযোগ নেই। আশার আলো যেমন ক্ষীণকায় হয়ে যায়, বর্ষণের অবস্থা ঠিক তেমনই হয়েছিল। কিন্তু না, তার কয়েকদিন পরই তাকে ফোন দিয়ে জানানো হলো- ঢাকায় আসতে হবে।

আনুষ্ঠানিকভাবে ছবিটিতে চুক্তিবদ্ধও হতে হবে। এরপর টানা তিন মাস চলে রিহার্সেল। প্রতি শুক্রবার আর শনিবার ঢাকায় এসে রিহার্সাল করেন তিনি। এতোদিনের সেই কষ্ট এবং পরিশ্রমের ফসল ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ এবার বড় পর্দায়। তাই আনন্দ এবং অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলেই জানান তিনি।

‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমার শুটিং হয়েছে ঢাকার মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকার কিছু লোকেশন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শাহবাগ এবং সদরঘাট সহ আরো কিছু এলাকায়। কোলাহলপূর্ণ এসব জায়গায় শুটিং করাটাও নির্মাতা এবং শিল্পীদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো। তবে ট্রেলারে অনেক দৃশ্যই আলাদা একটা ছাপ ছেড়ে গিয়েছে এটা বলা যায় নিঃসন্দেহে।

প্রায় ১৫ বছর ধরে নাটক ও বিজ্ঞাপন নির্মানের পর ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ এর মধ্য দিয়ে এই প্রথম সিনেমা নির্মান করলেন মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। টেলিভিশনের জনপ্রিয় এবং দক্ষ নির্মাতা হিসেবে নিজেকে আগেই প্রমান করেছিলেন মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। বরাবরই সিনেমা বানানোর স্বপ্ন দেখা এই নির্মাতা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন- টেলিভিশনের জন্য আমি যে কাজগুলো করছিলাম মূলত চলচ্চিত্র নির্মাণের সুযোগ না পেয়েই করছিলাম।

লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় কাজগুলো কিন্তু ফিল্মের ফরমেটেই ছিলো। আসলে টেলিভিশনের এই এক ঘন্টার নাটকের টার্মটা পৃথিবীর কোথাও প্রচলিত নেই। ফলে আমি এক ঘণ্টার নাটক ফিল্ম হিসেবেই নির্মান করতাম। তাই নিজের পরিচালিত প্রথম সিনেমা তার কাছে শুধু একটা সিনেমা নয় একটা অনুভূতি বা তারচেয়ে বেশিকিছু সেটা বলে দেয়া যায়। এবং নির্মাতা হিসেবে তিনি নিরাশ করবেন না এটুকু আশা রাখা যায়।

উল্লেখ্য, পরিচালনার পাশাপাশি ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমার কাহিনি, সংলাপ, চিত্রনাট্য, শিল্প নির্দেশনা এবং সংগীত পরিচালনাও করেছেন মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। শুধু তাই নয়, ফটোগ্রাফি এবং পোস্টার ডিজাইন সবই তার নিজের করা।

২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমায় থাকছে মোট ৫টি গান। যার একটি গান করেছেন দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল অর্থহীনের প্রতিষ্ঠাতা ও দলনেতা সাইদুস সালেহীন খালেদ সুমন। তাই এটিও দর্শকদের জন্য বাড়তি এক চমক বলেই মনে করা হচ্ছে।

গত ১৩ই মার্চ সিনেমাটি মুক্তির কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারনে রিলিজ ডেট পেছানো হয়েছিলো। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রেড অক্টোবরের ব্যানারে চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করছেন আসিফ হানিফ, নির্বাহী প্রযোজকের দায়িত্বে আছেন সৈয়দা শাওন।

আগামী ২৩শে অক্টোবর স্টার সিনেপ্লেক্সের সবগুলো শাখায় কিছুটা সীমিত পরিসরে এই বহুল আলোচিত সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে। দীর্ঘ সাত মাসের বন্ধ কাটিয়ে সিনেমাপ্রেমী দর্শকেরা আবারো ফিরবেন এই সুস্থধারার মানসম্মত ভিন্নধর্মী সিনেমাটি দেখার জন্য এমনটিই আশা করছেন সিনেমা সংশ্লিষ্ট সকলে। শুভ কামনা রইলো পুরো ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ টিমের জন্য।

Ad