সিনেমাপ্রেমী তরুণ নির্মাতা সাকিব সনেট

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এখন একটি মন্দা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। হল বন্ধ হয়ে যাওয়া, সিনেমা নির্মাণ কমে যাচ্ছে, চলচ্চিত্র অঙ্গণে দলাদলি, দর্শকদের মুখ ফিরিয়ে নেয়া ইত্যাদি নান বিষয় নিয়ে জর্জরিত আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি। এই অবস্থায় অনেক নামিদামী প্রযোজক পরিচালকেরাই এখন সিনেমা নির্মাণ থেকে সরে এসেছেন।

সেখানে একজন আত্নবিশ্বাসী তরুণ চলচ্চিত্র মাধ্যমকে ভালোবেসে সুস্থধারার মানসম্মত সিনেমা দর্শকদের উপহার দেবার জন্য নিজের ব্যবসার পাশাপাশি নিজেকে যুক্ত করেছেন চলচ্চিত্র অঙ্গণে। তার প্রথম সিনেমা দিয়েই তিনি নাম লিখিয়েছেন সফল বাণিজ্যিক নির্মাতা হিসেবে। বলা হচ্ছে এই সময়ের আলোচিত প্রযোজক এবং পরিচালক সাকিব সনেটের কথা। তার জন্মদিনে তাকে নিয়ে এই বিশেষ ফিচার।

সাংস্কৃতিক জগতে সাকিব সনেটের শুরুটা থিয়েটারের মাধ্যমে। দীর্ঘ সাত বছর দেশের অন্যতম আলোচিত এবং জনপ্রিয় নাট্য সংগঠন ‘ঢাকা পদাতিক’-এর সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। অভিনয় করেছেন সাথে সাথে নির্দেশনার কাজও শিখেছেন থিয়েটারে। মঞ্চ থেকে পরবর্তীতে ছোট পর্দা এবং বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থায় বিভিন্ন বিভাগে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে বড় পর্দায় নিজের দক্ষতা দিয়ে মানসম্মত কিছু করার জন্য।

একটা সময় কাস্টিং ডিরেক্টর থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইভেন্ট বা বিজ্ঞাপনচিত্রে এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবেও কাজ করেছেন নিজেকে দক্ষ করে তোলার জন্য। এসব অভিজ্ঞতা থেকেই চলচ্চিত্র নির্মাণের, চলচ্চিত্র পরিচালনার স্বপ্নটা আস্তে আস্তে বাস্তবে রুপ নেয়। তবে প্রথম চলচ্চিত্রের পরিচালনার ঝক্কি কাধে নিতে চাননি তিনি। শুধুমাত্র প্রযোজক হিসেবেই দায়িত্ব পালন করার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু পরবর্তীতে কিছু বাজে পরিস্থিতি তাকে পরিচালকের দায়িত্ব কাধে নিতে বাধ্য করে।

সাকিব সনেট পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘নোলক’ ব্যবসাসফল হবার পাশাপাশি দেশে এবং দেশের বাইরে থেকেও নানা ফেস্টিভ্যালে সম্মানজনক পুরস্কার জিতে নিয়েছে। কিছুদিন আগে আমাদের দেশে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ইউরো-সিজেএফবি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান। আর এবারের আসরে একভাবে বলা যায় রেকর্ড করেছে সাকিব সনেট প্রযোজিত এবং পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘নোলক’।

এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে নয়টি ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়ে আটটিতেই পুরস্কার পেয়েছে নোলক। এটা বলতে গেলে একটি রেকর্ড। আবার সম্প্রতি ভারতের দিল্লীতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্দুস ভ্যালি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে ‘নোলক’। সাথে এই সিনেমায় অনবদ্য অভিনয় করে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জয় করেছেন অভিনেত্রী ববি।

প্রথম সিনেমা দিয়েই এসব প্রশংসা এবং প্রাপ্তিতে তাই স্বাভাবিকভাবেই আনন্দিত এবং বেশ উচ্ছ্বসিত সিনেমার প্রযোজক এবং পরিচালক সাকিব সনেট। নিজের প্রযোজিত প্রথম সিনেমাতেই এত সাফল্যতার সামনে চলার পথে আরো বেশি সাহস যোগাবে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। প্রথমবার সিনেমা বানালেও প্রোডাকশনে কোনো রকম ছাড় দেননি তিনি। মূলধারার বানিজ্যিক সিনেমা হিসেবে নোলক আলাদা একটা স্বতন্ত্র জায়গা করে নিয়েছিলো খুব সহজেই।

সাকিব সনেট একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ‘নিজের সিনেমা বলে বলছি না, এখন পর্যন্ত যারাই ‘নোলক’ দেখেছেন, সবাই একটি মন্তব্যই করেছেন দীর্ঘদিন পর সম্পূর্ণ বিনোদনমূলক একটি দেশীয় সিনেমা দেখতে পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। দেশীয় ইন্ডাস্ট্রির এই কঠিন সময়ে চলচ্চিত্র মাধ্যমের সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানান তিনি।

করোনা পরিস্থিতি উদয় হবার কিছুদিন আগেই ‘পাক্কি বিরিয়ানি’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট চালু করেছেন সাকিব সনেট। ‘ঢাকাইয়া পাক্কি’র সাথে যুক্ত হওয়া এবং এটা নিয়ে ভবিষ্যৎ প্ল্যান জানতে চাইলে ‘ঢাকাইয়া পাক্কি’র একজন সত্ত্বাধিকারী এবং প্রযোজক, পরিচালক সাকিব সনেট জানান, আসলে ফুড রিলেটেড ভিন্নধর্মী কিছু একটা করার প্ল্যান আগে থেকেই ছিলো। পরবর্তীতে কামরুল ইসলাম সিফাত এবং সজীব রাশিদের সাথে মিলে ‘ঢাকাইয়া পাক্কি’ শুরু করি।

করোনা পরিস্থিতিতে সবকিছু থমকে যাবার কারনে কিছুটা অবসর মিললে তার প্রোডাকশন হাউজ থেকে দুটি সিনেমা নির্মানের প্রস্তুতি নিয়েছেন সাকিব সনেট। একটি উপন্যাস ভিত্তিক এবং অন্যটা থ্রিলার এই দুই জনরার দুটি ভিন্নধর্মী কনটেন্ট নিয়েই সিনেমার গল্প, চিত্রনাট্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

দুটো সিনেমারই প্রি-প্রোডাকশনের কাজ চলছে। একটি সিনেমায় এই সময়ের আলোচিত তিন তারকা সিয়াম আহমেদ, ববি এবং রোশানকে চূড়ান্ত করা হবে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই শিল্পী তালিকা সহ অন্যান্য সবকিছু জানানো হবে।

চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক হিসেবে মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিতি থাকার পাশাপাশি একজন ব্যবসায়ী হিসেবেও সুনাম অর্জন করেছেন সাকিব সনেট। দেশ এবং জনগণের জন্য নিজের জায়গা থেকে সংগঠিত ভাবে কিছু করার ইচ্ছা থেকে রাজনীতিতেও যুক্ত আছেন তিনি। তবে কিছুদিন আগেই নতুন একটি পরিচয়ে সামনে এসেছেন তিনি।

নবগঠিত বাংলাদেশ সাংবাদিক উন্নয়ন সংস্থা’র (বিজেডিও) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সাকিব ইরতিজা চৌধুরী। বাংলাদেশ সাংবাদিক উন্নয়ন সংস্থার নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে ১ বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন তিনি।

নতুন দায়িত্ব পাবার পর অনুভুতি জানতে চাইলে তিনি জানান, অবশ্যই ভালো লাগছে আমার। তবে অনেক বড় দায়িত্ব যেহুতু তাই আমি আমার সর্বোচ্চ চেস্টা করবো যেনো নিজের জায়গা থেকে শতভাগ সৎ থেকে ভালোভাবে দায়িত্বটা পালন করতে পারি।

এক্ষেত্রে এই সংগঠনের সাথে জড়িত সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষায় সংগঠনটি নিরলসভাবে কাজ করে যাবে বলে জানান তিনি। শুভ কামনা রইলো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে ভালোবেসে সবাইকে নিয়ে এই ইন্ডাস্ট্রি আবার ঘুরে দাড়াবে সফলতার সাথে এই স্বপ্ন দেখা সিনেমাপ্রেমী তরুনের জন্য।

Ad