ঊনপঞ্চাশ বাতাস: আমাদের মনে সত্যিই সুবাতাস এনে দিল

 

চয়নিকা চৌধুরী : একটা কথাই আছে, ‘সহজ কথা যায় না বলা সহজে’। আর সেই সহজ কথা সহজ করে লেখা আরো অনেক বেশি কঠিন। প্রথমেই বলে নিচ্ছি, এই লেখাটা কিন্ত শুধু আমার নিজের প্রতিক্রিয়া। আমি আমার ভাবনাটাই কেবল লেখার চেষ্টা করছি। এটা কোন রিভিউ না।

২৭ অক্টোবর গিয়েছিলাম একা একাই বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্স এ, মাসুদ হাসান উজ্জ্বল (Masud Hasan Ujjal) এর ঊনপঞ্চাশ বাতাস দেখতে। আজ আবারও দেখলাম পরিবারের সাথে স্টার সিনেপ্লেক্স, মহাখালীতে।

এবং সত্যি যদি বলি, আমি ধরেই নিয়েছিলাম বিজ্ঞাপনের মত ঝকঝকে একটি সিনেমা দেখে ফিরে আসব যেই সিনেমা সবাইকে নিয়ে বসে দেখা যায়, যেই সিনেমা হবে গল্প নির্ভর হবে, হয়ত এমন কিছু থাকবে যা বুঝতে আমার দেরি হতে পারে। কারণ, এই পরিচালক কেমন কাজ করেন,তা আমরা সকলেই জানি।

তিনি শীর্ষ পরিচালকের একজন যিনি পড়াশোনা জানা একজন মানুষ! মাঝে মাঝে তার নাটক-টেলিফিল্ম বুঝতে আমার দেরী হয়ে যায়। তাই এমন ভাবনা ছিল। কিন্ত সিনেমা দেখতে গিয়ে সত্যি আমি কখনোই ভাবিনি নিটোল একটা প্রেমের, আধুনিক মানের ভালোবাসার সিনেমা দেখতে পাবো এই গুণী পরিচালকের।

এত সহজ সুন্দর! সেই আগের ভালোবাসা..যে ভালোবাসা ভালোলাগা দেখে বড় হয়েছি। কারণ, সেই ভালোবাসায় থাকতো আবেগ, যত্ন, ব্যাক্তিত্ব এবং রুচিশীল ভদ্রতাবোধ। কী দারুণ গল্পের মালা গাথা। আহা! পুরানো ঢাকার মেয়ে আমি।সেই পুরানো ঢাকাকে কী সুন্দর করে তুলে ধরা হয়েছে! বোঝাই যায় পরিচালক যথেষ্ট খেটেছেন তার ফুল টীম নিয়ে।

নীরা আর অয়ন এর জন্যে যে তীব্র কষ্ট হয়েছে তা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি। সত্যি এমন ভালোবাসা কি আছে? আমি নিশ্চিত আছে। আসলে কখন যে শেষ হলো ছবিটা টের পেলাম না। প্রতিটি গান শ্রুতি মধুর। ভালোবাসতে ইচ্ছা করে।নতুন করে প্রেমে পড়তে ইচ্ছা করে। শার্লিন ফারজানা (Sharlin Farzana) এর ফ্যান এর আগেও ছিলাম।

সব সময় মনে হত এত স্মার্ট, রুচি সম্মত একজন অভিনয়শিল্পী আছে আমাদের? যদিও কয়েকবার ডেট নিয়ে কাজ করা হয়নি তার মায়ের অসুস্থতার কারণে। বেষ্ট কাজটাই তিনি দিয়েছেন নীরা চরিত্রে। এত্ত সুন্দর আর সিম্পল, স্মার্ট লেগেছে তাকে। শেষ সীন অবধি চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। মনে হয়েছে নীরা চরিত্র তাকে নিয়েই লেখা হয়েছে।
অভিনন্দন তোমাকে।

পরিচালক তার কাজটা ঠিক ঠিক বুঝে নিয়েছেন। আর ইমতিয়াজ বর্ষণ (Imtiaz Barshon) সত্যি ভাষা নেই। মনে হলো এই ক্যারেকটারের জন্যে সেই পারফেক্ট। তাকে পাওয়া না গেলে এই চরিত্র হয়ত অন্যরকম হতো। এত সাধারণ থাকতো না। বা কে করতেন জানিনা। কী দারুণ অভিনয়! চোখের জল তো থামছিলই না। সত্যি সত্যি বাসায় এসেও একটা ঘোরের ভিতর ছিলাম। অভিনন্দন অয়নকে।

স্মার্ট ডায়ালগ, ষ্টোরীলাইন, মিউজিক, গান, ফটোগ্রাফি, শিল্পনির্দেশনা, এডিটিং, লোকেশন সবকিছু পারফেক্ট, স্মার্ট মেকিং। মা বাবা বন্ধু সবাই যার যার জায়গাতে ভালো। আর সাংবাদিকের রোলটা এত্ত সুন্দর! এমনি তো হওয়া উচিত।সত্যি। Sabuj Rahman..আমি মুগ্ধ। খুব ভালো করেছ তুমি। ডিওপি অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখেন।

#HridoySharkar সত্যি ভালো একটি কাজের সাথে যুক্ত হয়েছ তুমি। মাসুদ হাসান উজ্জ্বল আপনাকে অভিনন্দন এমন একটি ছবি দিয়ে আমাদের বসিয়ে রাখার জন্যে। এবং ফিরে আসতে আসতে আমাদের ঘোরের ভিতর রাখার জন্যে। স্যালুট টু ইউ।

ঊনপঞ্চাশ বাতাস এই করোনাকালীন সময়ে আমাদের মনে সত্যিই সুবাতাস এনে দিলো। তাই সরকারকে ধন্যবাদ হল খুলে দেবার জন্যে এবং সিনেপ্লেক্সকে ধন্যবাদ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবার কথা ভাবার জন্যে। প্লিজ আপনারা সচেতন হয়ে, নিয়ম মেনে হলে গিয়ে সিনেমাটা দেখলেই পরিচালক প্রযোজক সহ সবার কষ্ট কমে যাবে আনন্দে। আমরা তো চাইলেই এই আনন্দটুকু দিতেই পারি। তাইনা?? জয় হোক বাংলা চলচ্চিত্র এর।

লেখক : চয়নিকা চৌধুরী, নির্মাতা। 

Ad