আজ হুমায়ূন আহমেদের ৭২তম জন্মদিন

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭২তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৮ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় লেখক হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার।

বলা হয়, বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। ২০১১ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক।

অতুলনীয় জনপ্রিয়তা সত্বেও তিনি অন্তরাল জীবন-যাপন করেন এবং লেখলেখি ও চিত্রনির্মাণের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত।

আজ এই দিনটা না এলে- হিমুরা পথে পথে হলুদ পাঞ্জাবী পরে হাটতো না, রূপারা অমন অদ্ভুত সুন্দর করে কথা বলতে পারতো না, মিসির আলীর অমিমাংসিত জগতের সাথে আমাদের কখনো পরিচয়ই ঘটতো না, মাজেদা খালা, বড় ফুপা নামক চরিত্রগুলি আমাদের এভাবে মন খুলে হাসাতো না।

বর্ষার কদম ফুল, জ্যোৎস্না বিলাস, রাতে শালবনে চাঁদ দেখা, দুপুরের গরমে সংসদ ভবন এলাকায় কৃষ্ণচূড়ার সমাহার আমাদের এভাবে নাড়া দিতোনা। একটা জাতিকে বই পড়ার আনন্দ দিয়েছেন তিনি। কৃতজ্ঞতা বা ধন্যবাদ খুব ছোট শব্দ হয়ে যায় এসব কিছুর কাছে।

১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পর পরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। নব্বই দশকের মাঝামাঝি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে লেখালেখিতে পুরোপুরি মনোযোগ দেন।

হুমায়ূন আহমেদের লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, গৌরিপুর জংশন, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচীনি দ্বীপ, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমনি, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা ও জননীর গল্প প্রভৃতি।

উপন্যাসে ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়।তিনি এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন, মানুষের হৃদয়ের এতটাই কাছে তার অবস্থান যে, তার একটি নাটকের কাল্পনিক ‘বাকের ভাই’ চরিত্রের জন্য ঢাকার রাস্তায় মিছিল হয়েছিল। তার ‘তুই রাজাকার’ গালিটাতে বাঙালী শিখেছিল রাজাকার আলবদরদের ঘৃণা করার কথা।

কলমের শক্তি ব্যাপারটা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন এই জাতিকে। নাটক এবং সিনেমা নির্মানেও তিনি তার দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে আগুনের পরশমনি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবন মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা ও নয় নম্বর বিপদ সংকেত। তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ও জয় করেছে দর্শক ও সমালোচকদের মন।

বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ূন কাদিও স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন। দেশের বাইরেও তাকে নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। তার প্রমাণ জাপান টেলিভিশন ‘এনএইচকে’ তাকে নিয়ে নির্মাণ করেছে পনের মিনিটের তথ্যচিত্র ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’।

হুমায়ূন আহমেদের শরীরে ২০১১ সালের সেপ্টেস্বর মাসে মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। সেখানে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে এগারোটায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনে হুমায়ুন আহমেদ একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র, এতে কোন সন্দেহ নেই।

হুমায়ুন আহমেদের মত পাঠকপ্রিয় লেখক এই বাংলায় ভবিষ্যতে আর আসবেনা। কিন্তু তার গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমার মধ্য দিয়ে তিনি অমর হয়ে থাকবেন অনন্তকাল সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। জানি অনন্ত নক্ষত্র বিথীর যেখানেই আপনি থাকেন না কেন, আমাদের শুভকামনা ঠিকই পৌছে যাবে আপনার কাছে কারন আপনি ছিলেন, আছেন, থাকবেন।

Ad