প্রশংসা পাচ্ছে ভিকি জাহেদের ‘ইরিনা’

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : গতানুগতিকের বাইরে এসে আমাদের দেশীয় নাটক বা সিনেয়ায় ব্যতিক্রমী কাজ সেভাবে দেখা যায়না বললেই চলে তবে কিছু গুনী নির্মাতা সংখ্যার দিক দিয়ে কম কাজ করলেও ভিন্নধর্মী নানা কনটেন্ট নিয়ে হাজির হচ্ছেন৷

আধুনিকতা এবং টেকনোলজির উপর ভর করে বিনোদনের সংজ্ঞা যেমন বদলে যাচ্ছে তেমনি এসব মানসম্মত নান্দনিক কাজ দর্শকদের কাছেও আলাদা গ্রহনযোগ্যতা পাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে তেমনই একটি কাজ ‘ইরিনা’।

তরুন নির্মাতা ভিকি জাহেদ চ্যানেল আইয়ের জন্মদিন উপলক্ষে প্রচারিত বহুল আলোচিত এবং প্রতীক্ষিত ‘জন্মদাগ’ নাটকের মধ্য দিয়ে নান্দনিকতার যে ধারার কাজ উপহার দিয়েছিলেন এবার ‘ইরিনা’ দিয়ে নিজেই নিজেকে টপকালেন সফলতার সাথে। কনটেন্ট, নির্মান এবং অভিনয় দক্ষতা দিয়ে গতানুগতিক ধারার বাইরে যেয়েও সফলতা পাওয়া যায় সেটা আবারো দেখালেন ভিকি জাহেদ।

এই সময়ের ছোট পর্দার জনপ্রিয় তারকা জুটি আফরান নিশো ও মেহজাবীন চৌধুরী তাদের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অভিনয় নিয়েই হাজির হয়েছেন ‘ইরিনা’ নাটকটিতে। সুযোগ পেলে ভিন্নধর্মী কনটেন্ট দিয়ে আফরান নিশো বা মেহজাবীন যে নিজেদের ছাড়িয়ে যেতে পারেন তা আবারো প্রমানিত হলো।

রোমান্টিক ঘরানার নাটককে পাশ কাটিয়ে ‘এই শহরে’, ‘ইতি মা’ ‘মিস শিউলী’ বা ‘ভিক্টিম’ ‘জন্মদাগ’ বা কয়েকদিন আগে জি-ফাইভে রিলিজ পাওয়া ‘মাইনকার চিপায়’ আফরান নিশো যেনো ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নিজেকেই। তাকে এই সময়ের অন্যতম সেরা ভার্সেটাইল অভিনেতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় সেটা এমনি এমনি নয় তার নতুন প্রমান ‘ইরিনা’।

নিঃসন্দেহে তার এমন গতানুগতিক ধারা ভেঙে মানসম্মত নাটকে অভিনয় তাকে অভিনেতা হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাবে অনেকদুর। অন্যদিকে মেহজাবীন যে সুযোগ পেলে নিজেকে চমৎকার ভাবে ভাঙতে পারেন সেটা তিনি অনেকবারই প্রমান করেছেন।

তবে ‘ইরিনা’ নাটকে নাম ভূমিকায় তার চমকে দেয়া লুক, অভিনয় দক্ষতা, পুরোই নতুন অাঙ্গিকে ডায়লগ ডেলিভারি দিয়ে তিনি নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ভালো নির্মাতা, ভালো কনটেন্ট এবং সংলাপ পেলে রোমান্টিক ঘরানার বাইরে যেয়ে মেহজাবীন যে দক্ষ অভিনেত্রী তা আমাদের মনে করিয়ে দেয়।

টেলিভিশনের এই দুজন জনপ্রিয় তারকাকে ভিন্নধর্মী চরিত্রে কাস্ট করে তাদের কাছ থেকে সুনিপুণ অভিনয় তুলে ধরার জন্য নির্মাতা ভিকি জাহেদ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ‘জন্মদাগ’ এর পর ‘ইরিনা’ দিয়ে ভিকি-নিশো-মেহজাবীন এই ত্রয়ীর পরবর্তী কাজের জন্য অপেক্ষা করে থাকাটাই এখন একটু কষ্টের হবে।

নিশো এবং মেহজাবীন ছাড়া শালহা খানম নাদিয়া তার চরিত্রের প্রতিও জাস্টিস করেছেন একথা বলতেই হয়। বিশেষ করে শেষের দিকে কোন সংলাপ ছাড়া তার কান্নার দৃশ্যগুলো মুগ্ধ করেছে। ‘ইরিনা’ নাটকের গল্প এবং কিছু সংলাপের মধ্য দিয়ে বেশ কিছু মেসেজ দেয়ার চেস্টা করা হয়েছে।

যেমন- পরিস্থিতি যেমন হোক ভেঙে না পড়ে মনে সাহস রাখার প্রয়োজনীয়তা, নিজের থেকে খারাপ অবস্থায় থাকা মানুষের পরিস্থিতি চিন্তা করে শুকরিয়া করা, ধৈর্য্য ধরাতেই জীবনের সফলতা, জীবনে শর্টকাট বলে কোনো কিছু নাই, বর্তমানে মনুষ্যত্ব এবং বিবেকের অধঃপতন সহ আরো কিছু চিরন্তন সত্য নতুন করে তুলে ধরেছেন ভিকি জাহেদ।

টার্ন কমিউনিকেশনের প্রযোজনায় লাইভ টেকের ব্যানারে ‘ইরিনা’র গল্প রচনা এবং পরিচালনা দুটো কাজই সফলতার সাথে সামলেছেন দক্ষ নির্মাতা ভিকি জাহেদ। নির্মাতা হিসেবে ভিকি জাহেদ আগেই জানান দিয়েছিলেন যে তিনি স্রোতের বিপরীতে হাটতেই পছন্দ করেন। তার পরিচালিত দি লাইফ অফ জলিল, রেহনুমা, বাঘবন্দি, নির্বাসন, এনাদার লাভ স্টোরি, মায়া, জন্মদাগ নাটকগুলো দেখলেই সেটা বোঝা যায়। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয় এই সময়ে যারা সংখ্যায় কম হলেও নিয়মিত ভাবে কাজ করছেন যেমন সাফায়েত মনসুর রানা, আশফাক নিপুনের মতো করে এই জেনারেশনের মধ্যে ভিকি জাহেদ বেশ সম্ভাবনা এবং আস্থার জায়গা তৈরী করতে পেরেছেন অত্যন্ত সফলভাবে। তার প্রতিটা নাটকেই কিছু মেসেজ দেবার একটা চেস্টা থাকে যেটা নান্দনিকভাবেই তুলে ধরেন তিনি।

ক্যামেরায় জাহিদ হোসেন অসাধারণ। মাহমুদ হায়াত অর্পনের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ভালো লেগেছে। অর্নব হাসনাতের সাউন্ড ডিজাইন ভালো। অন্তত মেহজাবীন এর লুকের জন্য হলেও কষ্টিউম ডিজাইনার হিসেবে আলভিরা তাসনিম বাহবা পাবেন। গল্প এতো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার এই উদ্যোগের জন্য তিনি একশ্রেণির দর্শক এবং সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা বা ভালোবাসা পাচ্ছেন। এটা অবশ্যই পজিটিভ একটা বিষয় বলেই তার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো কিছু নিয়ে আসবে। পুরো টিমের জন্যই অভিনন্দন এবং শুভকামনা।

আমাদের দেশে এখন দুই ঈদ, বৈশাখ বা ভালোবাসা দিবস ছাড়া কোনো ভালো কনটেন্ট এর নাটক খুব একটা দেখা যায়না। এই হতাশা আস্তে আস্তে কাটতে শুরু হয়েছে বলা যায়। ‘জন্মদাগ’, ‘হ্যামলেটের ফিরে আসা’, বা ‘ইরিনা’ নতুন আশা দেখাচ্ছে। মাত্র চল্লিশ মিনিটের এই নাটক বোর করেনা। দুই একটা বিষয় যেমন গল্পের পরিনতি নিয়ে প্রশ্ন, বা সংলাপ আরো একটু শক্তিশালী হলে ভালো হতো এমন কয়েকটা বিষয় লক্ষ্য করা গেলেও ওভারঅল ‘ইরিনা’ ভালো নাটক খোজা দর্শকদের জন্য মাস্ট ওয়াচ।

Ad