অবশেষে প্রেক্ষাগৃহে ‘বিশ্বসুন্দরী’

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : করোনা পরিস্থিতির কারনে মার্চ মাসে মুক্তি পাবার কথা থাকলেও সেই ডেট পিছিয়ে অবশেষে আগামীকাল ১১ই ডিসেম্বর মুক্তি পাচ্ছে অবশেষে কাল মুক্তি পাচ্ছে এই বছরের অন্যতম বহুল প্রতীক্ষিত এবং আলোচিত সিনেমা ‘বিশ্বসুন্দরী’।

আগামীকাল সেলুলয়েডে হাজির হতে যাচ্ছেন ঢাকাই সিনেমার নতুন জুটি সিয়াম-পরীমনি। এই সিনেমার মধ্য দিয়ে রূপালি পর্দায় নির্মাতা হিসেবে এক নতুন যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন টেলিভিশনের জনপ্রিয় এবং দক্ষ নাম চয়নিকা চৌধুরী।

‘বিশ্বসুন্দরী’ নানা কারণে নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর কাছে স্পেশাল এক অনুভূতি বলেই বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তিনি। বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে প্রথম সিনেমা। তাই স্বাভাবিক ভাবেই যতোটা উচ্ছ্বসিত তিনি ঠিক ততোটাই আবার টেনশনে। কারন দীর্ঘ দুই দশকে ৪০০+ নাটক নির্মান করার পরেও এই অনুভূতি তার কাছে অন্যরকম এক অনুভূতি নিয়ে এসেছে।

চয়নিকা চৌধুরী জানান, ‘বিশ্বসুন্দরী’ আমার প্রথম সিনেমা। সিনেমাটি সব দিক থেকে ভালো করতে চেষ্টার কোন কমতি আমি রাখিনি। পুরোপুরি পারিবারিক একটি বানিজ্যিক সিনেমা এটি। তাই দর্শকদের আহ্বান করবো সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখতে। দেখার পর ভুলগুলো নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করতে। যাতে আগামী সিনেমায় ভুলগুলো শুধরে আরও ভালো কিছু উপহার দিতে পারি।

‘বিশ্বসুন্দরী’ সিনেমার গল্প, সংলাপ এবং চিত্রনাট্য লিখেছেন রুম্মান রশীদ খান। টেলিভিশনে চয়নিকা চৌধুরীর জন্য অনেক নাটকের গল্প লিখেছেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় চয়নিকা চৌধুরীর অনুরোধে একদিন একটি গল্প শোনালেন রুম্মান রশীদ খান। সোনারগাঁও হোটেলের লবিতে সেদিন সঙ্গে করে ছেলে অনন্য প্রতীক চৌধুরীকেও নিয়ে গিয়েছিলেন চয়নিকা। ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার দুটি কারণ নিয়মিত দেশি-বিদেশি সিনেমা দেখে ছেলে অনন্য। দ্বিতীয়ত, সে এই প্রজন্মের দর্শক।

কিছুদিন আগেই চয়নিকা চৌধুরী ইউটিউবে একটি প্রোগ্রামে জানান, ‘রুম্মান আমাদের গল্পটা শোনালো। গল্পের একটা পর্যায়ে দেখি আমার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। ভাবলাম আমি তো একটু ইমোশনাল, তাই হয়তো কান্না এসেছে। তারপর ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখি তার চোখও ছলছল। অনন্য উঠে গিয়ে রুম্মানকে জড়িয়ে ধরে বলল—রুম্মান ভাই, এক্সিলেন্ট, গো অ্যাহেড। বুঝলাম গল্পটা এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরাও পছন্দ করবে।’

তিনি আরও জানান, ‘আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলতে পারি, আজ পর্যন্ত কেউ এই গল্প নিয়ে সিনেমা বানায়নি। সিনেমাপ্রেমী হিসেবে রুম্মান রশীদ খানের আলাদা একটা সুনাম আছে। করোনা পরিস্থিতি উদয় হবার আগে আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটা মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা তিনি দেখতেন নিয়ম করে। এছাড়া বিভিন্ন গনমাধ্যমে নিয়মিত সিনেমা নিয়ে রিভিউ লিখেছেন তিনি। তাই আশাকরাই যায় রুম্মান রশীদ খান আমাদের হতাশ করবেন না।’

গল্প সিলেক্ট হবার পরেই ‘বিশ্বসুন্দরী’ সিনেমার আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দেন চয়নিকা চৌধুরী। নাম ঘোষনার পর পরীমনি এবং সিয়াম সহ অন্য শিল্পী কলাকুশলীদের কে সাইন করানোর পর মিডিয়াকমের অজয় কুমার কুন্ডুর মাধ্যমে প্রযোজক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টুর সঙ্গে মিটিংয়ে বসেন তিনি। গল্প এবং যাবতীয় পরিকল্পনার সব জানার পর সান মিউজিক এন্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেড যুক্ত হয় ‘বিশ্বসুন্দরী’র সঙ্গে।

প্রথম লটের শুটিং হয় ফরিদপুরে। পরবর্তীতে গল্পের চাহিদা অনুসারে শুটিং হয়েছে ঢাকা, বান্দরবান নীলগিরি, নরসিংদী ও কক্সবাজারের মনোরম লোকেশনে। শ্যুটিং সম্পন্ন হবার পরে গতবছর ১৮ মার্চ আনকাট সেন্সর ছাড়পত্র পায় সিনেমাটি।

চয়নিকা চৌধুরী তখনোই জানিয়েছিলেন ‘সেন্সর বোর্ডে সিনেমাটি দেখে ম হামিদ, গুলজার ভাই, খসরু ভাই, অরুণাদি আমাকে বলেছেন, তাঁরা কান্না ধরে রাখতে পারেননি। আমিও তাঁদের মন্তব্য শুনে তখন কেঁদে ফেলেছিলাম। তবে দর্শকেরা সিনেমাটি দেখে এটা কতোটা গ্রহন করছেন সেটার অপেক্ষায় আমরা পুরো টিম।

আগামীকাল ঢাকা সহ দেশের ২৫টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেয়া হচ্ছে ‘বিশ্বসুন্দরী’। যেসব হল স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিনেমা চালানোর উপযোগী এবং হলের পরিবেশ ভালো সেসব হলেই মুক্তি দেয়া হচ্ছে সিনেমাটি। এই সিনেমার মধ্য দিয়ে প্রায় ৮ মাস বন্ধ থাকার পর খুলছে শ্যামলী সিনেপ্লেক্স। করোনা পরিস্থিতির কারনে সিনেমার প্রচার বা প্রমোশন এখন অনলাইনেই সারতে হচ্ছে।

তবুও বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে পরিচালক চয়নিকা, নায়িকা পরীমনি হাজির হচ্ছেন তাদের ‘বিশ্বসুন্দরী’ সিনেমার জন্য। সিনেমার নায়ক সিয়াম আহমেদ অন্য আরেকটি সিনেমার শ্যুটিংয়ে আছেন সৈয়দপুরে। তাই তিনি সেখান থেকেই অনলাইনে বিভিন্ন রকম প্রচারনায় অংশ নিচ্ছেন।

‘বিশ্বসুন্দরী’র পোষ্টার, গান, ট্রেলার রিলিজ হবার পর সাধারণ দর্শকদের মাঝেও আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। সিনেমার নতুন জুটি হিসেবে সিয়াম-পরী নজর কেড়েছেন। দুজনের অসাধারন রসায়নে ‘তুই কি আমার হবি রে’ শিরোনামের গানটি ইতিমধ্যে ইউটিউবে তিন কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে। সিনেমায় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন চম্পা, ফজলুর রহমান বাবু, মনিরা মিঠু, আনন্দ খালেদ, হীরা, সূজন সহ আরো অনেকে। অতিথি চরিত্রে নায়ক আলমগীর।

‘বিশ্বসুন্দরী’ নিয়ে আশাবাদী গল্পকার রুম্মান রশীদ খান, আশাবাদী সিয়াম-পরী আশাবাদী চয়নিকা চৌধুরী এবং পুরো টিম। সিনেমা সংশ্লিষ্ট সবাই আশাবাদী যে চলচ্চিত্রের এই কঠিন সময়ে বিগবাজেটের এই চমৎকার গল্পের বানিজ্যিক সিনেমাটি দর্শকরাও পছন্দ করবেন।

সিনেমাটির সঙ্গে জড়িত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা বারবার জানিয়েছেন চয়নিকা চৌধুরী। পরিবারের সবাইকে নিয়ে সিনেমাটি দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ও আমার টিম দারুণ কিছু করার চেষ্টা করেছি। যদি কিছু ভুল-ত্রুটি হয়ও, আশা করছি সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সিনেমাটি দেখে দর্শক মুগ্ধ হবেন।’

চলচ্চিত্রের মন্দ সময়, হল কমে যাওয়া, মধ্যবিত্তের হল বিমুখতা এবং করোনা পরিস্থিতি পাশে রেখে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাড়ানোর যে স্বপ্ন প্রতিটি সিনেমাপ্রেমীরা দেখছেন সেই স্বপ্ন পূরনে ‘বিশ্বসুন্দরী’ একটি উদাহরন হিসেবে প্রমানিত হবে সেটাই কামনা। করোনাকাল কাটিয়ে ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ টানা ছয় সপ্তাহ চলেছে সিনেপ্লেক্স সহ বেশকটি একক প্রেক্ষাগৃহে। তাই ‘বিশ্বসুন্দরী’ নিয়ে আশাটা আরো বেশি।

কারন এই সিনেমার সাথে যুক্ত নামগুলো দর্শকদের হলে ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই সময়ে সিনেমা মুক্তির এমন সাহসী পদক্ষেপের ধন্যবাদের সাথে সাথে অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো পুরো ‘বিশ্বসুন্দরী’ টিমের জন্য।

Ad