প্রথম চলচ্চিত্র ‘বিশ্বসুন্দরী’ দিয়ে চয়নিকার বাজিমাত

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : চলচ্চিত্রের মন্দ সময়, হল কমে যাওয়া, মধ্যবিত্তের হল বিমুখতা এবং করোনা পরিস্থিতি পাশে রেখে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ঘুরে দাড়ানোর যে স্বপ্ন প্রতিটি সিনেমাপ্রেমীরা দেখছেন সেই স্বপ্ন পূরনে গত ১১ই ডিসেম্বর মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘বিশ্বসুন্দরী’ একটি উদাহরন হিসেবে প্রমানিত হতে যাচ্ছে।

করোনাকালের প্রায় সাত মাসের বিরতি কাটিয়ে নতুন সিনেমা মুক্তির পর মাসুদ হাসান উজ্জ্বল পরিচালিত ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ টানা আট সপ্তাহ চলেছে সিনেপ্লেক্স সহ বেশকটি একক প্রেক্ষাগৃহে। এরপরে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির সেই সুবাতাস আরো দীর্ঘস্থায়ী করছে টেলিভিশনের জনপ্রিয় নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘বিশ্বসুন্দরী’ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

প্রথম সপ্তাহে ২৫ টি হলে মুক্তি পায় ‘বিশ্বসুন্দরী’। মুক্তির পর পরই দর্শকদের কাছ থেকে পজিটিভ রিভিউ আসার কারনে তৃতীয় সপ্তাহে এসেও হল এবং শো এর সংখ্যা বাড়ানো, হল হাউজফুল সহ অনেকগুলো ব্যাপার ঘটছে যা বিগত কয়েকবছর ধরে আমাদের চলচ্চিত্র জগতে দেখা যায়নি। নাম ঘোষনার পর থেকেই সিনেমাটা নিয়ে বেশ আলোচনা ছিলো।

চয়নিকা চৌধুরীর প্রথম পরিচালিত সিনেমা, সিয়াম-পরীমনি জুটি বেঁধে প্রথমবার অভিনয় করছেন, বিগ বাজেটের সিনেমায় দেশের প্রখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয় যুদ্ধ দেখার প্রতীক্ষা সব মিলিয়ে ’বিশ্বসুন্দরী’ নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ ছিলো তুঙ্গে। সেই আগ্রহ পূরন করতে সক্ষম হয়েছেন চয়নিকা চৌধুরী একথা বলা যায় নিঃসন্দেহে। সেই হিসেবে প্রথম সিনেমা পরিচালনা করে রীতিমতো ছক্কা হাকিয়েছেন এই গুনী নির্মাতা৷

‘বিশ্বসুন্দরী’ নানা কারণে নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর কাছে স্পেশাল এক অনুভূতি বলেই বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তিনি। বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে প্রথম সিনেমা। তাই স্বাভাবিক ভাবেই যতোটা উচ্ছ্বসিত তিনি ঠিক ততোটাই আবার টেনশনে ছিলেন।

কারন দীর্ঘ দুই দশকে ৪০০+ নাটক নির্মান করার পরেও প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আত্নপ্রকাশ করাটা তার কাছে অন্যরকম এক অনুভূতি নিয়ে এসেছে। তবে নাটকের নির্মাতা থেকে সিনেমার নির্মাতা হিসেবে চয়নিকা চৌধুরী সফল ভাবেই দর্শকদের পালস বুঝতে পেরেছেন সেটা অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। ভিন্নধর্মী একটি গল্পকে ঠিকঠাক ভাবেই সেলুলয়েডে তুলে ধরেছেন তিনি।

চয়নিকা চৌধুরী জানান, ‘বিশ্বসুন্দরী’ আমার প্রথম সিনেমা। সিনেমাটি সব দিক থেকে ভালো করতে চেষ্টার কোন কমতি আমি রাখিনি। মানব প্রেম, দেশপ্রেমের গল্প নিয়ে পুরোপুরি পারিবারিক একটি বানিজ্যিক সিনেমা এটি। তাই দর্শকদের আহ্বান করেছিলাম আমরা সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখতে। দেখার পর ভুলগুলো নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করতে।

যাতে আগামী সিনেমায় ভুলগুলো শুধরে আরও ভালো কিছু উপহার দিতে পারি। আমি কৃতজ্ঞ যে দর্শকদের কাছ থেকে প্রচুর ভালোবাসা পাচ্ছি আমরা। সিনেমা নির্মানের সময়কার সকল কষ্ট, ত্যাগ দর্শকদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা আর ভালোবাসার কাছে তুচ্ছ বলেই মনে হচ্ছে।

নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চয়নিকা চৌধুরী দর্শকদের প্রতি ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লিখেছেন যে, আমার প্রথম সিনেমা ‘বিশ্বসুন্দরী’ রিলিজের পর, এই করোনা সময়ে যারা ভালোবেসে সিনেমাটা হলে গিয়ে দেখেছেন,সেই ভালোবাসার সকলকে জানাই শ্রদ্ধা, সম্মান,ভালোবাসা। সিনেমাটির মূল নায়ক বা নায়িকা কিন্তু সিনেমাটির অসাধারন গল্প।

আর গল্পটি র জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই রুম্মান রশীদ খানের প্রতি। গল্পের পাশাপাশি সিনেমার সংলাপও অসাধারন, সাথে সিনেমার প্রতিটা দক্ষ এবং মেধাবী অভিনয়শিল্পী, আমার ডিওপি খাইর খন্দকারকে যার চিত্রায়ণ সিনেমাটিকে একটি ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। ইমন সাহার দারুণ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, অসাধারন সুন্দর দারুণ গান এবং আমাদের দেশের বেশকিছু মনোরম লোকেশন সিনেমাটিকে দর্শকদের কাছে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে৷

চয়নিকা চৌধুরী ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সান মিউজিক মোশন পিকচার্স লিমিটেড, অজয় কুমার কুন্ডু যার মাধ্যমে তিনি সিনেমা বানানোর জন্য প্রথম প্লাটফর্ম পেয়েছেন। তিনি জানান, সবাই আমাকে প্রার্থনায় রাখবেন যেনো, মানুষের ভালোবাসা নিয়ে আমি পথ চলতে পারি আমার কাজ দিয়ে। ধন্যবাদ জানাতে চাই পুরো ‘বিশ্বসুন্দরী’ টিমকে। বাংলা চলচ্চিত্রের জয় হোক।’

করোনার এই কঠিন সময়ে দর্শকদের বিনোদনের কথা মাথায় রেখে বেশ ঝুঁকি নিয়েই সিনেমাটি মুক্তি দেয়ার যে সাহস প্রযোজনা সংস্থা এবং নির্মাতা দেখিয়েছেন তা অবশ্যই প্রশংসা পাবার যোগ্য। আমাদের দেশে এমনিতেই সিনেমা মুক্তির সময় প্রচার-প্রচারনা সেই ভাবে করা হয়না, তার উপর করোনার কারনে সিনেমার প্রচার বা প্রমোশন এখন অনলাইনেই সারতে হয়েছে পুরো টিমকে।

সিনেমা মুক্তির পর দর্শকদের সাথে অনেকগুলো শো দেখেছেন ‘বিশ্বসুন্দরী’ টিম। এছাড়া বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে পরিচালক চয়নিকা, নায়িকা পরীমনি হাজির হয়েছন তাদের ‘বিশ্বসুন্দরী’ সিনেমার জন্য। সিনেমার নায়ক সিয়াম আহমেদ অন্য আরেকটি সিনেমার শ্যুটিংয়ের কারনে প্রথমদিকে প্রচারনায় অংশ নিতে না পারলেও পরবর্তীতে তিনিও পুরো টিমের সাথে প্রচারে অংশ নিয়েছেন।

সান মিউজিক এন্ড মোশন পিকচার্স প্রযোজিত ‘বিশ্বসুন্দরী’র পোষ্টার, গান, ট্রেলার রিলিজ হবার পর সাধারণ দর্শকদের মাঝেও আগ্রহ লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। সিনেমার নতুন জুটি হিসেবে সিয়াম-পরী নজর কেড়েছেন। দুজনের অসাধারন রসায়নে ‘তুই কি আমার হবি রে’ শিরোনামের গানটি ইতিমধ্যে ইউটিউবে তিন কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে। রুম্মান রশীদ খানের ব্যতিক্রমী গল্প, সংলাপ এবং চিত্রনাট্য ‘বিশ্বসুন্দরী’র ভিত মজবুত করেছে।

অনেকদিন পরে ভিন্নধর্মী গল্প দেখে আবেগতাড়িত হয়েছেন অনেকেই। ট্রেলার দেখে রোমান্টিক এক সিনেমা দেখার ইচ্ছা নিয়ে যারাই প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছেন তারা সবাই অবাক হয়েছেন পুরো গল্প বা প্লট দেখার পরে। মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই সিনেমায় যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে তা প্রশংসার যোগ্য। সিয়াম-পরীমনি ছাড়াও সিনেমায় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন চম্পা, ফজলুর রহমান বাবু, মনিরা মিঠু, আনন্দ খালেদ, হীরা, সূজন সহ আরো অনেকে। অতিথি চরিত্রে নায়ক আলমগীর। বিশেষ করে দীর্ঘদিন পরে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী চম্পা আবারো আলোচনায় এই সিনেমার মাধ্যমে।

সিনেমাটির সঙ্গে জড়িত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা বারবার জানিয়েছেন চয়নিকা চৌধুরী। পরিবারের সবাইকে নিয়ে সিনেমাটি দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ও আমার টিম দারুণ কিছু করার চেষ্টা করেছি। যদি কিছু ভুল-ত্রুটি হয়ও, আশা করছি সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

তবে আমি কৃতজ্ঞ সবার কাছে, কারন যে বিশ্বাস এবং ভালোবাসা নিয়ে আমি সিনেমাটি নির্মান করেছি দর্শক সেটা ভালোবেসেই গ্রহন করেছে। যারা এখনো দেখেননি সেইসব সিনেমাপ্রেমীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বিধিনিষেধ মেনে হলে গিয়ে সিনেমাটা দেখতে আহবান জানাচ্ছি কারন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এবং সিনেমা হল বাঁচাতে হলে সুস্থ ধারার বানিজ্যিক সিনেমা হলে এসে দেখতে হবে।

Ad