বছরের আলোচিত নাম ভিকি জাহেদ

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : করোনা পরিস্থিতির কারনে এই বছর প্রায় থমকে ছিলো মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি। প্রায় চারমাসের বিরতি কাটিয়ে শ্যুটিং, ডাবিং সহ সকল কাজ শুরু করেছিলো শিল্পী এবং কলাকুশলীবৃন্দ। সেই কারনে এবার প্রচারিত নাটকের সংখ্যা, নতুন নাটকের সংখ্যা সব কিছুর সংখ্যাই ছিলো তুলনামূলক কম।

তবে সেই অল্প কাজের মধ্যেও এই বছর গতানুগতিক ধারার বাইরে এসে বেশকিছু ভিন্নধর্মী কাজ আমাদের সাধারণ দর্শকদের কাছে আলোচিত এবং প্রশংসিত ছিলো। যে কয়টি মানসম্মত কাজ এবার দর্শকপ্রিয়তা বা ভিউয়ের সংখ্যায় এগিয়ে ছিলো তার মধ্যে চারটি কাজ নিয়ে আলোচনায় নবীন কিন্তু দক্ষ নির্মাতা ভিকি জাহেদ।

২০১৬ সালে ‘মোমেন্টস’ শর্টফিল্ম নির্মাণ করে বাজিমাৎ করেছিলেন ভিকি জাহেদ। মিডিয়া সম্পর্কে যারা টুকটাক খোজখবর রাখেন তারা জানেন যে, শর্টফিল্ম বিষয়টা নতুন করে পরিচিতি করিয়েছেন তিনি দর্শকদের কাছে। একে একে অবিশ্বাস, মায়া, অক্ষর, দেয়াল, দূরবীনসহ বেশ কিছু জনপ্রিয় শর্টফিল্ম বানিয়ে নিজের দক্ষতা আর মেধার প্রমাণ দিয়েছিলেন তিনি।

তার পরিচালিত ‘আজ আমার পালা’ একটি মাইলফলক হিসেবে গন্য করা হয়ে থাকে। এছাড়া বেশ কিছু মিউজিক ভিডিও বানিয়েছেন সেগুলোও ভালো সাড়া পেয়েছে দর্শকদের কাছ থেকে।

তবে ২০২০ সালে এই সময়ে টেলিভিশন নাটকের অন্যতম সেরা নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। বছরের শুরুতে ‘ট্রফি’ দিয়ে এই নির্মাতা যাত্রা শুরু করলেও রেহনুমা, নির্বাসন, জন্মদাগ এবং ইরিনা তাকে লাইমলাইটে নিয়ে আসে। অন্যভাবে বলা যায় একের পর এক টানা চারটা মাস্টারস্ট্রোক উপহার দেন তিনি।

প্রতিটি নাটকের গল্প আলাদা, মেকিং কোনটার সাথে কোনটার মিল নাই, প্রতিটাতেই ভিন্নধর্মী মেসেজ সব মিলিয়ে ভিকি জাহেদ এইসব ফিকশন দিয়ে গৎবাধা রোমান্টিক নাটক থেকে বেরিয়ে ভিন্ন স্বাদ নিয়ে হাজির হয়েছেন তেমনি দর্শকেরাও তার প্রতিটা কাজ গ্রহন করেছেন সানন্দে।

ইউটিউব ভিউ, বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন নাটক বা মিডিয়া রিলেটেড পেইজ গুলো দেখলেই একথার প্রমান মেলে। সারা বছর ধরেই ভিকি জাহেদ ছিলেন আলোচনায়। এই সময়ে এসে সারা বছরে হাতেগোনা কাজ করেও মান এবং জনপ্রিয়তা ধরে রাখা নির্মাতা আশফাক নিপুন, শাফায়েত মনসুর রানার কাতারে নতুন সংযোজন ভিকি জাহেদ।

শর্টফিল্ম হোক কিংবা নাটক ভিকি জাহেদের গল্পে একটা বিষয় সদা উপস্থিত আর সেটি হচ্ছে আনপ্রেডিক্টেবল টুইষ্ট। মোটামুটি চেনা গল্পেও এমন সব টুইষ্ট নিয়ে আসেন তিনি, এবং সেটাকে উপস্থাপনের যে কৌশল বা মুন্সিয়ানা ব্যবহার করেন তার সাথে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই রিলেট করতে পারে। তাই অল্প সময়ে তার কাজগুলি প্রশংসা তো পায়ই সাথে এই সময়ে এসে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ইউটিউবেও মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হয়।

তার প্রতিটা কাজেই যত্ন লক্ষ্য করা যায়। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, আমি একটা গল্প মাথায় আসলে সেটা নিয়েই প্রথমে চিন্তা করি এক সপ্তাহ, একমাসে একটার বেশি কাজ করা হয়না আমার, আর চিত্রনাট্য বারবার সাজিয়ে আবার ঝালাই করি। এরপরে শ্যুটিং, এডিটিং সব মিলিয়ে প্রায় দেড়মাস লাগে একটা কাজ শেষ করতে। এভাবে হয়তো কাজটা একটু লম্বা সময় নিয়ে করতে হয় তবে কোয়ালিটিতে ছাড়া দেইনা। আর একারনেই কাজগুলো দর্শকদের কাছে প্রশংসা পায়।

নাটক বানানোর পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়েও কাজ করেন ভিকি জাহেদ। প্রতিটা নির্মাতার মতো তিনিও বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম মানে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে চান, তবে তাড়াহুড়ো করে এখনই নয়। বরং বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করেই সিনেমার মতো বিশাল মাধ্যমে নিজের যাত্রা শুরু করবেন তিনি।

এই বছরের মতো আগামী বছরেও নিজের ভিন্নধর্মী কাজ দিয়ে তিনি আমাদের বিনোদন মাধ্যমে আরো অনেক ভিন্নধর্মী এবং মানসম্মত কাজ নিয়ে হাজির হবেন এটাই কামনা। এই বছরের অন্যতম আলোচিত এবং জনপ্রিয় এই গুনী নির্মাতার জন্য রইলো অভিনন্দন এবং শুভ কামনা।

Ad