তরুণ উদ্যোক্তা, ডিজিটাল বিপণনকারী সংগীত শিল্পী মৃত্যুঞ্জয়ের গল্প

মৃত্যুঞ্জয় দেব নাথ। নোয়াখালী সদর উপজেলার হুগলী গ্রামের কাঠ মিস্ত্রী লনি দেব নাথের ছেলে। ছোট বেলা থেকে ডানপিটে স্বভাবের ছেলেটির দূরন্তপনায় সময় কাটলেও এখন ঘরে বসে বিদেশের কাজ করছেন তিনি। এমন একজন স্বর্নিভর মানুষের গল্প শোনাচ্ছেন শেখ নাসির উদ্দিন।

বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলা করেছেন। ঘুরে বেড়িয়েছেন গ্রামের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। শিশুকাল কেটে বাল্যকালে চলে গেছে কতশত দুষ্টমির ভীড়ে। পড়াশোনার বাহিরে তথ্য প্রযুক্তির প্রতি ছিল প্রবল আকর্ষণ। ২০১৫ সালে স্মার্টফোন হাতে পেয়ে সেটিকে কাজে লাগানোর কথা ভাবলেন তিনি।

ইংরেজি’তে ভাল দখল থাকায় বিভিন্ন মানুষকে ইংরেজি কনটেন্ট লিখে দিতে শুরু করলেন। পাশাপাশি মোবাইলের মাধ্যমে টাইপিং ও গ্রাফিকস ডিজাইনের কাজ শিখেছেন। কনটেন্ট লিখে আয় হওয়া জমানো টাকা আর পরিবারের থেকে কিছু টাকা নিয়ে ২০১৭ সালে কিনে ফেলেন কম্পিউটার।

এরপর একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে আরও ভালোভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইনের কোর্স সেরে নিলেন। এভাবে ধীরে ধীরে ডিজিটাল দুনিয়ায় নিজের জায়গায় পাকাপোক্ত করছিলেন এই তরুণ।

অনলাইনে সরকারের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় তিনি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ শিখে নোয়াখালী সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী এখন ঘরে বসে বিভিন্ন আউটসোর্সিং সাইট থেকে নিয়মিত বিদেশীদের কাজ করছেন। এছাড়া মানুষকে সাইবার সুরক্ষাও দিচ্ছেন।

তরুণ ডিজিটাল উদ্যোগক্তা মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘বইয়ের মুখস্থ পড়ার সাথে চাকুরি জীবনের কোন মিল নেই। আর সবার কপালে চাকুরির জোটেও না। চাকুরি তো নয় যেন সোনার হরিণ। সব সময় স্বনির্ভর হওয়ার ইচ্ছে ছিল। ছোট থেকেই মোবাইলের নেশা ছিল। তারপর স্মার্টফোন কিনে ইউটিউবে কম্পিউটার টাইপ, গ্রাফিকস,গুগল আডসেন্স এইগুলো কাজ শিখতাম। পাশাপাশি ইংরেজি ভাল পারি বলে। বিভিন্ন মানুষকে ইংরেজি কন্টেন্ট লিখে দিতাম।

এভাবে আয় করে টাকা জমাতে শুরু করি আর কম্পিউটার কেনার স্বপ্ন দেখি। পরিবার তখনো তেমন ভালো চোখে দেখে না। তবে আমি পড়াশোনার ফাঁকে সময় পেলেই কাজ শিখে যাচ্ছি। তো ইংরেজি কন্টেন্ট লিখে বেশকিছু টাকা আয় হল। তখন পরিবার থেকে বলে আরও কিছু টাকা নিয়ে কম্পিউটার কিনে ফেলি। এরপর অনলাইনে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কোর্স করি। তাছাড়া ছয় মাসের একটা গ্রাফিকস ডিজাইনেরও কোর্স শেষ করি।

মানুষের ইচ্ছে শক্তি ই আসল। আমি চাইলে থেমে যেতে পারতাম। আমার এটা নাই সেটা নাই কিন্তু আমি কখনো থেমে যাই’নি। আর মোবাইলকে কাজ লাগানো উচিত। ইউটিউবে অনেক ভিডিও আছে যেখান থেকে অনলাইনের যে কোন কাজ আপনি শিখতে পারবেন। আগামীর যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ এখানে আপনার মেধাকে কাজে লাগাতে হবে।

আমি কাজ শিখে এখন ঘরে বসে ভাইবার ও সিওক্লিয়ারক সাইটে কাজ করে যাচ্ছি। জীবনের প্রথম ভিয়েতনামের একটা গ্রাফিকসের কাজ করেছিলাম। সেই কাজের জন্য ১০ ডলার আয় হয়। সেদিন আমার এত আনন্দ লেগেছে বলে বুঝাতে পারব না। এখন পারিবারও কাজে উৎসাহ দেয়। এখন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও মানুষকে সাইবার সুরক্ষা দিচ্ছি। মানুষের অনেক সাড়া পাচ্ছি।

অনলাইনের মাধ্যমে আরও ভালো কাজ করে এগিয়ে যেতে যান তিনি। স্বনির্ভর হওয়ার পথে মানুষকে সাহায্য করার ইচ্ছে তার।

Ad