গাছ লাগানোর বার্তা নিয়ে সাইকেলে ৬৪ জেলায় আশিষ

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া; ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু। আমাদের অনেকের হয়তো একটি শিশির বিন্দুই দেখা হয়নি। কিন্তু সদ্য চিকিৎসক জীবনে পা দেওয়া আশিষ মোদক পুরো দেশ দেখেছেন। আবার পুরো যাত্রাটাই ছিল সাইকেলে। সেই ভ্রমণ কাহিনী জানাচ্ছেন শেখ নাসির উদ্দিন।

ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজ্ড মেডিকেল কলেজ
থেকে সদ্য এমবিবিএস শেষ করেছেন আশিষ মোদক। শীগ্রই সেখানেই শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শুরু করবেন। এই পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে তিনি সাইকেলে সমগ্র দেশ ভ্রমণ করেছেন। শুধু তাই নয় গাছ লাগান, পৃথিবী বাঁচান স্লোগানে দেশের মানুষকে গাছ লাগাতে উদ্ভুদ্ধ করেছেন। ৫০ টিরও বেশি জেলায় দুইশতাধিক ফলমূল ও ঔষুধি গাছ লাগিয়েছেন। করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে, সতর্ক হওয়ার বার্তাও প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

তার এক বন্ধু বলে, মহাসড়কে সাইকেল চালাতে দেয় না। তিনি বললেন চালানো যায়। সেই বন্ধু মানতে নারাজ। হঠাৎ সাইকেল কিনে ঢাকা থেকে ময়মনসিং ১২০ কিলোমিটার চালিয়ে সেই জবাব দেন। এরপর সাইকেলে দেশ ঘোরার ভূত চেপে বসে।

এরপর ক্লাসের ফাঁকে ২০১৯ সালে জামালপুর, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, এই জেলায় ঘুরেন। তারপর দশ দিনের ছুটিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ঘুরে ক্লাসে যোগ দেন।

বড় ছুটির আশায় ছিলেন। করোনার লকডাউন কড়াকড়ি যখন কেটে গেল। তখন সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। এরপর তার সাথে যোগ দিলেন বন্ধু সাব্বির। যিনি আগেই ৬৪ জেলা সাইকেলে ঘুরেছেন। এভাবেই শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে ঘুরে বেড়িয়েছেন উত্তরের জনপথ থেকে পশ্চিমে। তারপর দক্ষিণ থেকে পূর্বদিকে শেষ করেছেন যাত্রা।

আশিষ কুমার মোদক বলেন, ‘থার্ড প্রফের পর থেকে আমি সাইক্লিং শুরু করি। তারপর বাংলাদেশ সাইকেলে ঘুরার একটা স্বপ্ন পেয়ে বসে। ফাইনাল প্রফ পরীক্ষার পর ঘুরে শেষ করার পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই ছিল। ভ্রমণের উদ্দেশ্য দেশকে জানা, দেশের প্রতিটি জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো দেখা, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মেশা।

যতটুকু সম্ভব হয়েছে সময় নিয়ে প্রতিটি জেলার প্রধান প্রধান জায়গায় গুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কতদিন লাগবে এটার চেয়ে, কতটা বেশি সময় নিয়ে দেশকে দেখব সেটাকেই গুরুত্ব দিয়েছি। খুলনা থাকতে আমার এমবিবিএস এর রেজাল্ট দিয়েছিল। এর আগে উত্তর জেলা পঞ্চগড়,
ঠাকুরগাঁও এবং দিনাজপুর ঘুরে দেখেছি। উত্তরের
মানুষের মত নরম, সহজ সরল মানুষ আর কোথায় পাই’নি।

শিক্ষিত মানুষদের অসম্ভব সম্মান দেয় এছাড়া অতিথি পরায়ণ। পঞ্চগড় শহরে দেখলাম এখনো খড়ম (কাঠের তৈরি জুতা) বিক্রি হয়। আমি ও আমার বন্ধু নিয়ে নিলাম। দিনাজপুরের কান্তাজির মন্দির দেখেছি। অসম্ভব কারুকাজ মন্দিরের। তাছাড়া চারপাশের নানা ফসলের ক্ষেত মাঝ দিয়ে পাঁকা রাস্তা আর তার ধারে সারি সারি গাছ যখন হালকা সূর্য ওঠছিল তখন অসম্ভব ভালো লেগেছে। দৃশ্যটা ফ্রেম বাঁধাই করে রাখার মত।

তারপর রাজশাহী, কুষ্টিয়া, যশোর, গোপালগঞ্জ গিয়ে আমার বন্ধু বাড়ি ফিরে যায়। দক্ষিণের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ঐদিক ঘুরে চট্রগ্রামে যাই। খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ঘুরে চলি আসি কক্সবাজার। গত ২৬ জানুয়ারি আমার ৬৪ জেলা ভ্রমণ শেষ হয়। এসময় স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, মেডিকেল কলেজ, দর্শনীয় স্থান, মাদ্রাসা ও মসজিদ প্রাঙ্গণে গাছ লাগিয়েছি। অনেকেই গাছ পরিচর্চার আশ্বাস দিয়েছেন।

পরিবারে সহযোগিতা ছিল বলে মাতৃভূমির ৬৪ জেলায় ঘুরতে পেরেছি। বাবা সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন। আমি বলব এরপর যারা এমন ঘুরতে চান তাদের সবার উচিত প্রতিটি জেলায় একটি হলেও গাছ লাগানো। কারণ একমাত্র গাছই বাঁচতে পারে আগামীর পৃথিবী।’

Ad