‘অপারেশন সুন্দরবন’ টিজারেই বাজিমাত

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : নাম ঘোষণার সময় থেকেই বাংলাদেশের প্রথম ওয়াইল্ড লাইফ অ্যাকশন থ্রিলার সিনেমা ‘অপারেশন সুন্দরবন’ নিয়ে আলাদা একটি আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমীদের মধ্য। পরবর্তীতে ভিন্নধর্মী কনটেন্ট, শিল্পী তালিকা, সিনেমায় শিল্পীদের লুক, পোষ্টার, দীপংকর দীপনের নির্মানের মুন্সিয়ানা সব মিলিয়ে এই সিনেমা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো সবসময়ই। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে একসময় জলদস্যুদের অবাধ বিচরণের ফলে সুন্দরবন ছিল সাধারণ মানুষের জন্য ভয়ের এক জায়গা।

এমনকি সুন্দরবনের জেলে দল, মৌয়ালও জীবিকা নির্বাহের জন্য মাছ ধরতে ও মধু সংগ্রহ করতে পারত না। ২০১২ সাল থেকে র‌্যাবের চৌকষ বাহিনীর একের পর এক রোমাঞ্চকর অভিযানে একটা সময় এসে সুন্দরবন হয়েছে দস্যুহীন। র‌্যাবের এই দুঃসাহসিক জলদস্যু নির্মূল অভিযানকে উপজীব্য করেই নির্মিত হয়েছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’।

২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর খুলনার মুন্সিগঞ্জে শুটিং শুরু হয় সিনেমাটির। তার আগে ‘সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত দিবস’ উপলক্ষে ১লা নভেম্বর সিনেমাটির একটি পোস্টার প্রকাশিত হয়। এর পাশাপাশি আয়োজন করা হয়েছিল শিল্পী পরিচিতি অনুষ্ঠানের। পোষ্টারটি প্রকাশের পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

‘ঢাকা অ্যাটাক’ খ্যাত নির্মাতা দীপংকর দীপনের এই নতুন সিনেমা ‘অপারেশন সুন্দরবন’ দুই ধাপে প্রায় ৩২ দিনের শুটিং শিডিউলের মাধ্যমে খুলনা অঞ্চলের শুটিং শেষ হয়। গত বছরের ১১ই মার্চ খুলনার মংলার জয়মনি এলাকায় সিনেমার শুটিংয়ের মধ্য দিয়েই এই বিগ বাজেটের বিশাল ক্যানভাসের সিনেমার শ্যুটিং প্রায় সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিলো।

পরিচালক জানিয়েছিলেন ঢাকায় অল্প কিছুদিন শুটিং করলেই সিনেমাটির শুটিং শেষ হবে। তবে এরই মাঝে করোনার হানার কারনে শিডিউল মাফিক সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি সিনেমার কাজ। এরপর গত আট মাস বিরতির পর শেষ অংশের শুটিং শুরু হয়েছিলো গত বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে। একটি গানের শ্যুটিং সম্পন্ন হয়েছে এই ফেব্রুয়ারিতে। অবশেষে পোষ্ট প্রোডাকশনের সকল কাজ শেষ করে মুক্তির জন্য প্রস্তুত বিগ বাজেটের ‘অপারেশন সুন্দরবন’।

সুন্দরবনে র‌্যাবের সাফল্যগাঁথার কাহিনি নিয়ে নির্মিত ‘অপারেশন সুন্দরবন’ এর টিজার ও একটি ওয়েবসাইটের উন্মোচন করা হয়েছে গতকাল। জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আর্মি গল্ফ ক্লাবে এই ওয়েবসাইট এবং টিজার উন্মোচন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। দেড় মিনিটের এই টিজারে মুগ্ধ হয়েছেন সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে দেশের বিনোদন জগতের তারকা এবং শিল্পী কলাকুশলীরা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিনেমা বিষয়ক নানা পেজ এবং গ্রুপে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ‘অপারেশন সুন্দরবন’। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফি, অভিনয় শিল্পীদের চরিত্রের সাথে মিশে যাওয়া, কিছু মন কেড়ে নেয়া সংলাপ এবং নির্মানের মুন্সিয়ানার ঝলক দেখা গেছে এই টিজারে। অনেক দিন পরে এতো বিশাল পরিসরে এমন তারকা শিল্পীদের নিয়ে বিগ বাজেটের নান্দনিক এক সিনেমা দেখতে যাচ্ছি আমরা একথা বলা যায় নিঃসন্দেহে।

উল্লেখ্য, সিনেমাটির শ্যুটিং শুরুর আগে দেড় বছরের বেশি সময় সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়িয়েছেন পরিচালক ও তার টিম। সুন্দরবন থেকে জলদস্যু মুক্ত করার অভিযান নিয়ে সিনেমার গল্প। তবে সিনেমার গল্পে দেশের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে একটি অংশ থাকবে। এছাড়াও ট্রলার ব্যবসা, মাছ ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসার নানা দিকও এই সিনেমায় তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে।

চলচ্চিত্রটির কাছের একটি সূত্র জানিয়েছে, সিনেমার শুটিংয়ে প্রায় ১০০ জন অভিনয়শিল্পী অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ৩০ জন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্য। প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন কাজ করেছেন সিনেমার জন্য। শুটিংয়ে ব্যবহার করা হয়েছে দুটি বড় জলজাহাজ, সাতটি স্পিডবোট, ছয়টি লঞ্চ, দুটি হেলিকপ্টারসহ আরও অনেক কিছু। উল্লেখ্য গল্পের চাহিদার কারনে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমাতে অভিনয় করেছেন এলাকাবাসীও।

সিনেমার শুটিং হয়েছে গভীর সুমদ্র থেকে শুরু করে সুন্দরবনের ভেতরে, হিরণ পয়েন্টে। এছাড়া কালিরচর, দুবলার চর, আলোর চর, মেহের আলীর চর, ডিমের চর, লক্ষ্মীর চরসহ ওই অঞ্চলের নানা জায়গায় শুটিং হয়েছে সিনেমাটির।

দীপংকর দীপন এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ‘কাদাপানির মধ্যে শুটিং করেছি আমরা। অনেক সময় শিল্পীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শুটিংয়ের সময় সুমদ্রের জোয়ার কখনো অনুকূলে ছিল, কখনো ছিল না।

এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই শুটিং করতে হয়েছে। জলদস্যু ধরার দৃশ্যের জন্য গভীর বনে ঢোকার পর হঠাৎ পরিবেশ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় শুটিং না করে ফিরে আসতে হয়েছে। এছাড়া ‘অনেক সময় এমন দুর্গম এলাকায় যেতে হয়েছে, যেখানে কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না। তিন-চার দিন পরপর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি আমরা।’

বিশাল ক্যানভাসে চলচ্চিত্রটির নির্মাণে যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে র‌্যাব ফোর্সেস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও থ্রি হুইলারস। র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের অনুপ্রেরণায় লিগ্যাল মিডিয়ার তত্বাবধানে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে। র‍্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন চলচ্চিত্রটি নির্মাণে সহায়তা প্রদান করেছেন বলে আগেই জানিয়েছেন নির্মাতা দীপন। জানা গেছে সিনেমাটির লভ্যাংশ ভিকটিমদের সহায়তা, সাবেক জলদস্যুদের পুনর্বাসনসহ উপকূলীয় অঞ্চলের জনকল্যাণে ব্যয় করা হবে।

এই সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন রিয়াজ, সিয়াম আহমেদ, নুসরাত ফারিয়া, রোশান, তাসকিন রহমান, রওনক হাসান, শতাব্দী ওয়াদুদ, মনোজ প্রামানিক, সামিনা বাশার, দীপু ইমাম, এহসানুর রহমান সহ অনেকে। মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বহুল আলোচিত এ চলচ্চিত্রটি মুক্তির প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। শুভ কামনা রইলো পুরো টিমের জন্য।

Ad