চরিত্রাভিনেতা হিসেবে নতুন সম্ভাবনার নাম রাহুল

সিনেমা, নাটক বা বিজ্ঞাপন কিন্তু দিনশেষে একটি টিমওয়ার্ক। ক্যামেরার সামনে হোক বা পেছনে দুই জায়গাতেই একটা নির্ধারিত টিম বা দল মিলেই কাজটা সম্পন্ন করেন। সেই হিসেবে দলের প্রতিটা সদস্যই যার যার জায়গা থেকে নিজের সেরাটা দেন যাতে কাজটা দর্শকদের মনে জায়গা করে নিতে পারে। যদিও বর্তমান সময়ে ক্যামেরার সামনে ঘুরেফিরে কিছু নির্দিষ্ট মুখ দেখতে পাই আমরা।

কিন্তু এই গতানুগতিকের বাইরে এসে যে কয়টি কাজ সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়তা এবং প্রশংসা পেয়েছে প্রতিটাতেই পার্শ্ব চরিত্রগুলো মনে দাগ কেটেছে। যেমন জানোয়ার, তকদীর,কষ্টনীড়, ট্রল সহ আরো বেশকিছু কাজে চরিত্রাভিনেতা বা চরিত্রাভিনেত্রীদের কাজ প্রশংসা পেয়েছে। তেমনই একজন দক্ষ এবং অনবরত নিজের মেধা এবং দক্ষতা প্রমানের চেষ্টায় নিজেকে ব্যস্ত রাখা অভিনয় শিল্পীকে নিয়ে আজকের এই ফিচার।

সেলুলয়েডে নায়ক-নায়িকা বা তারকা হবার ইচ্ছা প্রতিটা মিডিয়া কর্মীর মাঝেই বিদ্যমান। তবে সেই হিসেবে আমাদের এখানে চরিত্রাভিনেতার সংখ্যা খুবই নগন্য। আর যারা আছেন তাদেরকে সেই ভাবে কাজে লাগানো হচ্ছেনা। উদাহরন হিসেবে একটা সময় দেখা যেতো সিনেমায় নায়ক-নায়িকা চরিত্রে রাজ্জাক-কবরী থাকার পরেও ভাই-ভাবী চরিত্রে আনোয়ার হোসেন-রোজী বা আনোয়ারা-প্রবীর মিত্র বা খালেদা আক্তার কল্পনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন।

এমনকি কমেডিয়ান হিসেবে এটিএম শামসুজ্জামান, দিলদার অথবা নেগেটিভ চরিত্রে হুমায়ুন ফরিদী বা রাজীব অথবা রিনা খান এরকম অনেক নাম নেয়া যাবে। এখন বাজেট স্বল্পতা বা সেই রকমের গল্প না থাকায় সেভাবে চরিত্রাভিনেতা -চরিত্রাভিনেত্রী পাচ্ছিনা।

কিছুদিন আগে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তিপ্রাপ্ত রায়হান রাফির পরিচালনায় ‘জানোয়ার’ ওয়েব ফিল্মটা যারা দেখেছেন তারা অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন যে, প্রতিটা শিল্পীই যার যার জায়গায় অনবদ্য কাজ করেছেন। সেই অসহায় মা এবং তার সন্তানদের জন্য আমাদের চোখের কোনে পানি জমেছে তেমনি ডাকাতদলের প্রতিটা সদস্যদের প্রতি আমাদের ঘৃনা এবং রাগ প্রমান করে তারা তাদের জায়গায় সফল। অসাধারণ এবং সহজাত অভিনয় উপহার দিয়ে সেই ডাকাতদলের দলের অন্যতম আলোচিত একজন অভিনেতা হলে আর এ রাহুল।

একজন ভার্সেটাইল অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে ২০০৮ থেকে ২০১৭ প্রায় নয় বছর থিয়েটারে কাজ করেছেন রাহুল। থিয়েটারে কাজ করার কারনে ভিতটা মজবুত হবার পরে আস্তে আস্তে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শুরু করেন তিনি। গোলাম সোহরাব দোদুল, সাগর জাহান, মাবরুর রশিদ বান্নাহ, মুরাদ পারভেজ, তৌকির আহমেদ, দিপংকর দিপন, হৃদি হক সহ বেশকিছু খ্যাতনামা নির্মাতার নাটকে ছোট ছোট চরিত্রে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। প্রতিটা কাজেই নিজের স্বকীয়তা নিয়ে হাজির হয়েছেন তিনি।

এরইমাঝে কিছু বিজ্ঞাপনেও কাজের সুযোগ পেয়েছেন। রবির ঘ্যাচাং,নাম্বার ওয়ান চা, এসিআই পিউর সরিষার তেল, আর এফ এল পপুলার ডোর, জিপিএস ইস্পাত মায়ের ভাষা ,বিস্ক ক্লাব ড্রাইকেক, রবির রান,রবি তোমাকে দিয়ে হবেনা, প্রাণ মেঙ্গো জুস, নেসক্যাফে সহ বেশকিছু নামীদামী ব্র‍্যান্ডের বিজ্ঞাপনেও তার উপস্থিতি নজর কেড়েছে।

নাটক ও বিজ্ঞাপন করার মাঝেই বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সিনেমা এবং বিনোদনের নতুন মাধ্যম ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বেশকটি ব্যতিক্রমী এবং আলোচিত প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ পেয়ে নিজের সেরাটাই দিয়েছেন তিনি। মুক্তিপ্রাপ্ত সাপলুডু, নবাব এলএলবি, জানোয়ার তাকে খ্যাতি এনে দেয়।

বিশেষ করে জানোয়ার সিনেমায় তার অভিনয় দক্ষতা তাকে আলোচনা এবং প্রশংসা এনে দিয়েছে অবিশ্বাস্য ভাবে। সামনে মুক্তি পাবে রিক্সাগার্ল, মিশন এক্সট্রিম, ঢাকা ড্রিম, চটপটি, প্রীতিলতা এবং সম্প্রতি কাজ শেষ হওয়া কসাই।

কসাই সিনেমার পোষ্টারে একজন একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের ভূমিকায় তার লুক বেশ প্রশংসা পেয়েছে। সত্য কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমায় প্রতিটা চরিত্রই আগ্রহ জাগায়। রাহুল জানান, কসাই সিনেমায় কাজ করার পুরো সময়টাই একটা ভিন্ন রকমের অনুভুতি কাজ করেছে। সিনেমার গল্পে দেখা যায় যে, স্বপ্ন দেখা কিছু সরল নিরীহ মানুষ স্বপ্ন পূরনের জন্য মানুষের উপর বিশ্বাস করে ভয়ানক ফাঁদে আটকা পড়ে।

কসাই রূপী হিংস্র এক মানুষ তাদের জিম্মি করে নিজের স্বার্থের জন্য। এখানে হিংস্র কসাইয়ের মূল সহকারী হিসেবে হিজড়া চরিত্রে রাহুলকে দেখা যাবে। এই প্রথমবার প্রথমবার হিজড়ার চরিত্রে আর এ রাহুল,চরিত্রটির ভেতরে একটা নৃশংসতা এবং কঠোরতা আছে। যে কিনা ঠান্ডা মাথায় সকল অপকর্ম করে বেড়ায়।

রাহুল জানান, আমি এটুকু বলতে পারি এই সিনেমা মুক্তি পেলে প্রতিটা অভিনেতা এবং অভিনেত্রীকে নিয়ে দর্শকদের নতুন ভাবে চিন্তা করতে হবে। কারন পরিচালক অনন্য মামুন ভাই একটি পুরোপুরি ভিন্নধর্মী গল্প নিয়ে হাজির হচ্ছেন এবং সাথে আমরা প্রতিটা শিল্পী যার যার জায়গা থেকে পুরোটাই দিয়েছি। বাকিটাতো সিনেমা রিলিজ হলেই বোঝা যাবে।

অভিনয়কে ভালোবেসে একাগ্রচিত্তে নিজের দক্ষতা নিয়ে যে যাত্রা রাহুল শুরু করেছে অনেকটা দিন আগে তার সুফল এখন পাচ্ছেন তিনি। সামনে তাকে এবং তার মতো গুনী শিল্পীদের নিয়ে আমাদের গল্পকার এবং নির্মাতারা নতুন করে ভাববেন এটাই কামনা। কারন যেকোন গল্প বুনতে মূল চরিত্রের বাইরেও কিছু চরিত্র রাখতে হয়, যা পুরো গল্পটাকে বিশ্বাসযোগ্য এবং জীবন্ত করে উপস্থাপন করে। তাই এই মাধ্যম নিয়ে ভাবার সময় এখন।

Ad