রোজায় সঠিক খাবারদাবার
নিউজ ডেস্ক : রোজার মাস ইবাদত ও সংযমের মাস। এসময় ছোট খাটো ভুল খাদ্যাভাস থেকে হতে পারে বড় বড় সমস্যা। কারণ বছরের ১১ টি মাস আমরা এক নিয়মে খাবার খাই আর রমজানের সময় তার বিপরীত ঘটনা ঘটে অর্থাৎ আমরা সাধারণ সময় সন্ধ্যা থেকে খাবার পরিমাণ কমিয়ে দেই আর রমজান মাসে মূলত সন্ধ্যা থেকে খাবার শুরু করি।
এসব পরিবর্তনের জন্য এসিডিটি ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এর মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুস্থ থেকে স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে রোজা রাখতে চাইলে ইফতার থেকে সেহেরি পর্যন্ত খাবার গুলোকে ৩-৪ ভাগে ভাগ করে খাওয়া উওম এবং ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
সারাদিন দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার পর আমরা ইফতার থেকে খাওয়া শুরু করি তাই ইফতার অবশ্যই হতে হবে স্বাস্হ্যসম্মত ও নিরাপদ। মাগরিবের আযান দেওয়ার পর ২-৩ টি খেজুর খাওয়া যেমন সুন্নত ঠিক তেমনি স্বাস্থ্যকর। তারপর অল্প অল্প করে বারেবারে পানি পান করতে পারেন(এক বারে ২/৩ গ্লাস পানি কখনোই পান করবেন না)।
অনেকেই সরবত পছন্দ করেন বলে ইফতারে একবারে ২-৩ গ্লাস সরবত খেয়ে ফেলেন যা একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়।তাই লেবু চিনি দিয়ে সর্বোচ্চ এক গ্লাস সরবত চাইলে পান করতে পারেন।মিষ্টি জাতীয় সরবতের পরিবর্তে মৌসুমি ফলের জ্যুস বা ডাবের পানি পান করা উওম। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত।
মাগরিবের নামাজ আদায়ের পর আপনার অন্য খাবার গুলো গ্রহণ করতে পারেন। স্যুপ বা নরম সবজি খিচুড়ি জাতীয় খাবার খাওয়া উওম কারণ সারাদিন না খেয়ে থাকার পর পাকস্থলীতে হজমে ব্যঘাত ঘটতে পারে। ভুনা ছোলা খাওয়ার পরিবর্তে সিদ্ধ করা ছোলার সাথে কিছু পেঁয়াজ, মরিচ, ধনিয়া পাতা কু্চি ও বেশি করে সালাদ আর মুড়ি দিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত তার সাথে ১ টি ডাল বড়া বা বেগুনি খেতে পারেন।
বেগুনি ও ডাল বড়ার পরিবর্তে সবজি পাকোড়া স্যালো ফ্রাই করে মাঝে মাঝে খাওয়া যেতে পারে। তবে ডাল বড়া, বেগুনি ও সবজি পাকোড়া অবশ্যই কম তেলে ভাজতে হবে।দোকান থেকে কিনে আনা জিলাপি ও বুন্দিয়ার পরিবর্তে ঘরে তৈরি কাস্টার্ড ও ফালুদা খেতে পারেন।
আমাদের অনেকেই বেশি বেশি ইফতার করার জন্য রাতের খাবার বাদ দিয়ে সেহরিতে চলে যায় যা একে বারেই উচিত নয়। কারণ স্বাভাবিক সময় সারা দিনে কমপক্ষে ৩-৪ বার খাবার খেতে বলা হয়,রোজার সময় সারাদিন না খেয়ে থাকা হয় এজন্য ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত কমপক্ষে ৩ বার খাবার খাওয়া ভালো। রাতেই খাবার অবশ্যই কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, মিনারেলস ও ভিটামিন সমৃদ্ধ হতে হবে।
যেমন দুধ দিয়ে ওটস, যারা ওটস খেতে পারেন না তারা দুধ কলা বা দুধ আম খেতে পারেন। আবার মাঝে মাঝে একটি সিদ্ধ ডিম ও কিছু রান্না সবজি বা সবজির স্যুপ খেতে পারেন অথবা সবজি রুটিও খেতে পারেন। এককথায় সহজে হজম হয় রাতে এমন খাবার খাওয়া উচিত। রাতের খাবারের পর ২/৩ চা চামচ টকদই খাওয়া উত্তম কারণ এটি সহজে খাবার হজমে সাহায্য করে।
সেহেরিতে ঘুম থেকে উঠেই খাবার খাওয়া উচিত নয়। ঘুম থেকে উঠে ১ গ্লাস পানি পান করে তারপর কমপক্ষে ১০ মিনিট পর খাবার খাওয়া উচিত। সেহরির সময় এমন খাবার খাওয়া উচিত যা ধীরে ধীরে হজম হয় যেমন লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত সাথে ফাইবার যুক্ত মৌসুমি সবজি, মাছ অথবা মুরগির মাংস।
গরু বা খাসির মাংস এড়িয়ে চলা উচিত সেহেরিতে। যারা সেহরি খেতে একেবারেই ইচ্ছুক নয় তাদের উচিত কমপক্ষে আধাকাপ দুধ,একটি ডিম আর সাথে অবশ্যই ২/৩ টি খেজুর খাওয়া। সেহেরির খাওয়ার ১০-১৫ মিনিট পর পানি পান করা যায় এমন সময় রাখতে হবে।
যারা ২০ রাকাত তাহরারির সালাত আাদায় করেন তাদের রোজা রেখে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম,ভারী কোনো কাজ বা ব্যায়াম করা উচিত নয়।বেশি আগ্রহ থাকলে ইফতারি পর বা রাতের খাবার খাওয়ার পর নির্দিষ্ট সময় ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করুন
পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ, ভেল্লা লেজার কেয়ার।