এই প্রজন্মের দক্ষ অভিনেতা সোহেল মন্ডল

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : দাঁতে দাঁত চেপে প্রায় ১৪ বছর ধরে নিজের প্রতিভা এবং দক্ষতা তুলে ধরার যে সুযোগটা তিনি চাচ্ছিলেন সেটির দেখা পান গত বছর। আর একটি কাজ দিয়েই তিনি এখন এই প্রজন্মের অন্যতম আলোচিত এবং প্রশংসিত অভিনেতা হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন।

একটি ওয়েব সিরিজে তার অভিনয় প্রতিভা মন জয় করেছে দুই বাংলার মানুষের এটাও কি ম্যাজিকের চেয়ে কোনো অংশে কম নাকি। আর এই ম্যাজিশিয়ান আর কেউ নন, তিনি সোহেল মন্ডল। যার অভিনয় দক্ষতার যাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ আমরা সবাই।

সোহেল মন্ডলের জীবনের গল্পটা কিন্তু সিনেমার গল্পের থেকে কম রোমাঞ্চকর না। সোহেল নিজেই জানিয়েছিলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসময় ঢাকায় থাকা হলেও একটা সময় অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে গ্রামে চলে যেতে হয় তাকে। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে আবার ঢাকায় ফেরা। ভর্তি হলেন সরকারি বাঙলা কলেজে। একাডেমিক পড়াশোনায় তেমন আগ্রহ না থাকলেও প্রচুর বই পড়ার একটা অভ্যাস ছিলো বরাবরই।

শখ থেকেই সেসময় নাটক দেখতে যেতেন। নাটক দেখতে গিয়েই একদিন জানতে পারলেন, নাগরিক নাট্যাঙ্গন অভিনয় শেখাবে। কিছু না বুঝেই অনেকটা ঝোকের বশেই ভর্তি হয়ে গেলেন সেই কোর্সে। এরপর ২০০৯ সালে প্রাচ্যনাটের সঙ্গে যুক্ত হলেন। সোহেল মন্ডল একটা সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন তার অভিনয়ের হাতেখড়ি মূলত আজাদ আবুল কালামের মঞ্চ নাটক নির্দেশনা দেখে দেখেই।

মঞ্চে কাজ করতে গিয়ে একটা সার্কেল তৈরি হয়েছিলো সোহেলের। সেইখানের একজন তাকে জানায় যে ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’ সিনেমার জন্য অডিশন চলছে। ব্যক্তিজীবনে প্রচন্ড অন্তর্মুখী মানুষটি হুট করেই সিদ্ধান্ত নেনে অডিশন দেবার। এবং অডিশন দেবার পর নির্বাচিত হয়ে গেলেন। এরপর একে একে করেছেন ‘মুসাফির’, ‘আয়নাবাজি’, ‘রংঢং’, ‘মায়ার জঞ্জাল’, ‘হাওয়া’। শেষের দুটি সিনেমা এখনো রিলিজ পায়নি।

তবে অভিনেতা সোহেল মন্ডলকে সবাই চিনেছে ‘তাকদীর’ দিয়ে। আন্ডার কনস্ট্রাকশন, মুসাফির, আয়নাবাজিতে অভিনয় করে সোহেল মণ্ডল যা অর্জন করতে পারেননি, সেসব তিনি অর্জন করেছেন কেবল এক ভাইসা সম্বোধনে। চরম বিপদের মধ্যেও কথায় কথায় গালাগালি করা সোহেল মণ্ডল মুহুর্তের জন্যও নিজে যেমন সরতে পারেনি মন্টু চরিত্র থেকে তেমনি দর্শকদেরকেও চোখ সরাতে দেননি।

বিপদে ভাইসা ‘কে একা ফেলে না রেখে বরং সেই বিপদ কাঁধে তুলে নেয়া আর কঠিন সমাধানের রাস্তা বের করা এমন ব্যতিক্রমী এবং শক্তিশালী চরিত্র যেমন ফুটিয়ে তুলেছেন সুনিপুণ ভাবে তেমনি একই সাথে এই ছেলেই আবার যখন বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায় তখন তার অভিনয় দক্ষতায় মুগ্ধ হতেই হয় আমাদের।

অভিনয়ের পাশাপাশি এডিটর হিসেবে কাজ করছেন সোহেল একটা লম্বা সময় ধরেই। অমিতাভ রেজার ‘ঢাকা মেট্রো’ সিরিজের সম্পাদনা এবং কালার গ্রেডিং করেছেন তিনি। ‘ইতি তোমারই ঢাকা’ ছবির নুহাশ হুমায়ূনের অংশটা তারই এডিট করা। আবরার আতাহারের ‘কলি-২’ তেও এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এছাড়াও অসংখ্য বিজ্ঞাপন, নাটক, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের এডিটিং করেছেন তিনি।

‘তাকদীর’ এর পরে অভিনেতা হিসেবে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়া এই মানুষটি এখনো কাজ করছেন বেছে বেছে। গত ঈদে ‘আলীবাবা ও চালিচোর’ ফিকশনে ভিন্নধর্মী এক চরিত্রে তার লুক এবং অভিনয় প্রশংসিত হয়। ‘টিক টক’এ তেও তিনি নিজের ছাপ রেখেছেন। এবার সোহেল মন্ডলকে দেখা যাবে ওটিটি ‘চরকি’র বেশ সাড়া ফেলা সিরিজ ‘ঊনলৌকিক’ এর ‘ডোন্ট রাইট মি’ তে। রবিউল আলম রবি’র পরিচালনায় এই গল্পে দেশবরেণ্য অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের সাথে স্ক্রিন শেয়ার করতে যাচ্ছেন তিনি।

রহস্যমোড়া টিজার এবং পোষ্টারে আমির হোসেনের দেখা পেয়েছি আমরা। অ্যান্থোলজি সিরিজটির এই এপিসোড রিলিজ পেলে বোঝা যাবে অভিনেতা সোহেল মন্ডল তার দক্ষতার ছাপ কতোটুকু ছাড়তে পারলেন। তবে সেলুলয়েডে তিনি যে আসাদুজ্জামান নূরের সাথে পাল্লা দিয়েই অভিনয় করেছেন সেটার ঝলক দেখা গেছে টিজারে।

এছাড়া এই ঈদে ‘কাউয়া’ নামক একটি ফিকশনেও দেখা যাবে তাকে। সামনে মুক্তির অপেক্ষায় মেজবাউর রহমান সুমনের বহুল প্রতীক্ষিত ‘হাওয়া’। আরো একবার ‘তাকদীর’ এর ভাইসা মানে গুনী অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর সাথে স্ক্রিন শেয়ার করতে যাচ্ছেন তিনি।

একটি জনপ্রিয় দৈনিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সোহেল বলেছেন- ’আমি নিজের কাজ নিয়ে অত্যন্ত যত্নশীল। আমার দ্রুত কিছু করে ফেলার বা কিছু হয়ে যাওয়ার কোনো তাড়া নেই। আমি আস্তে ধীরে সুন্দর করে নিজের কাজটা করে যেতে চাই। একটা একটা করে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে চাই।’ সাধারণ দর্শক হিসেবে আমরাও কিন্তু তাই চাই। এই প্রজন্মের সম্ভাবনাময় অভিনেতা হিসেবে সোহেল মন্ডল যে এগিয়ে যাবেন অনেকটা দূর এই কামনা রইলো।

Ad