প্রথমবার ওয়েব ফিল্মে জুনায়েদ

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : ‘কে হবে মাসুদ রানা’ নামক আলোচিত এবং জনপ্রিয় রিয়েলিটি শোতে আরো অনেককে পেছনে ফেলে প্রথম রানার আপ হয়েছিলেন তিনি। এই রিয়েলিটি শোয়ের মাধ্যমে মিডিয়াতে লাইমলাইটে আসা ছেলেটা ২০২০ সালে ক্লোজআপ কাছে আসার গল্পে নুহাশ হুমায়ূনের ‘শেষটা সবাই জানে’ নাটকে অভিনয় করে আলোচনা এবং প্রশংসায় আসার সাথে সাথে নজর কেড়ে নিয়েছিলেন অনেকেরই। এরপর ‘দুঃস্বপ্ন’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ফিকশনে তার অভিনয় দক্ষতা মুগ্ধ করে আমাদের।

ঈদে প্রচারিত ‘প্রেসক্রিপশন’ নামক ফিকশনটি তাকে জনপ্রিয় করেছে নতুন করে। নিজেকে একজন গুনী অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এখনো। তার এই পরিশ্রম, ত্যাগ এবং ডেডিকেশন তাকে নতুন প্রজন্মের অন্যতম সম্ভাবনাময় মুখ হিসেবে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। যার কথা বলা বা লেখা হচ্ছে তিনি জুনায়েদ। হাস্যজ্বল এই তরুন অভিনেতা তার সাম্প্রতিক বেশকিছু কাজ নিয়েই আলোচনায়।

এবার তাকে দেখা যাবে বহুল প্রতীক্ষিত ওয়েবফিল্ম ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ তে। টেলিভিশনের জনপ্রিয় নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ান এই প্রথম বিনোদনের নতুন মাধ্যম ওটিটির জন্য ওয়েবফিল্ম বানিয়েছেন। তরুন প্রজন্মের বেশকিছু নতুন এবং সম্ভাবনাময় অভিনেতা এবং অভিনেত্রীকে নিয়ে তার এই ওয়েবফিল্মের লুক, পোষ্টার, টিজার, ট্রেলার এবং একটি গান রিলিজের পর বিনোদন প্রেমী মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলে। এরই ধারাবাহিকতায় আলোচনায় আসেন এই ওয়েবফিল্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও। সুদর্শন এবং সদা হাস্যজ্বল এই তরুন তাই আলোচনায় তার প্রথম ওয়েবফিল্মের বদৌলতে।

শরীফুল রাজ, ইয়াশ রোহান, খায়রুল বাসারের মতো আলোচিত এবং সম্ভাবনাময় অভিনেতাদের সাথে স্ক্রিন শেয়ার করার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে জুনায়েদ বলেন- ‘শুরুটা স্বাভবিকভাবেই অপরিচিত কারো সাথে পরিচয়ের মতোন হলেও কাজটা যখন শেষ হয় তখন আমাদের দেখে যে কারো মনে হবে আমরা স্কুল, কলেজের বন্ধু ছিলাম বরাবরই।

আমাদের আবার মধ্যেই পরস্পরের প্রতি বন্ধুত্বের একটা টান তৈরী হয়ে গিয়েছে ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ তে কাজ করতে যেয়ে। তবে শুধু এই তিনজনই নয়, সাথে তাসনুভা তিশা, তাসনিয়া ফারিন, অর্ষা, তুষি এবং পরিচালক আরিয়ান ভাই সহ পুরো ইউনিটের সবাই যথেষ্ঠ হেল্পফুল তো ছিলোই সাথে অনুপ্রেরণাও দিয়েছে কাজটা সহজ এবং স্বাভাবিক ভাবে করার জন্য। সবাই মিলে মজা করেই পুরো কাজটা শেষ হয়েছে। তবে এমন সুন্দর এবং পারফেক্ট একটা টিমের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা তো একটা অসাধারণ স্মৃতি হয়ে থাকবে আমার কাছে।’

বাস্তবে কিন্তু ঘটেছে তাই। জুনায়েদের কথা অনুযায়ী আসলেই ট্রেলার বা গান দেখার সময় মনে হয়নি যে, তারা বন্ধু নন। তাদের মধ্যকার সুন্দর একটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক সেলুলয়েডে উঠে এসেছে আকর্ষনীয় ভাবেই। মিজানুর রহমান আরিয়ানের এক সহকারী পরিচালকের ফোন কলের মাধ্যমে জুনায়েদ দেখা করেন মিজানুর রহমান আরিয়ানের সাথে। আরিয়ান বানাচ্ছেন তার প্রথম ওয়েবফিল্ম তাই স্বাভাবিকভাবেই তিনিও কোনো কিছুতেই ছাড় দিতে চাননি।

যে চরিত্রে যাকে ভেবে রেখেছেন সেখানে তাকেই নিবেন বলে মনস্থির করা। তার কাছেই সিফাত চরিত্রটি সম্পর্কে শুনে এবং সিফাতের চরিত্রের নানা মোড় এবং সেটা উপস্থাপনের মুন্সিয়ানা সম্পর্কে জেনে জুনায়েদ হ্যা বলেছিলেন। নির্মাতার সাথে সাথে এটি তারও প্রথম ওয়েবফিল্ম। তাই স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত এবং কিছুটা চিন্তা তো ছিলোই। পরবর্তীতে কক্সবাজার এবং সেন্টমার্টিনে অনুকুল এবং প্রতিকূল দুই রকম আবহাওয়া এবং পরিস্থিতে এই ব্যতিক্রমী গল্প নিয়ে ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’র শ্যুটিং সম্পন্ন হয়েছে।

এখানে হাসতে হাসতে জুনায়েদ আরো জানিয়েছেন যে, ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’র মধ্য দিয়ে উনার মতো একজন জনপ্রিয় পরিচালকের সাথে আমার প্রথমবার কাজ। তাই কিছুটা টেনশন তো কাজ করতোই। নির্মাতা হিসেবে আরিয়ান ভাই কিন্তু খুবই প্রফেশনাল। যে সিকোয়েন্স যেভাবে তিনি চাইবেন সেভাবেই করতে হবে। প্রথমদিকে আমি উনার কাছ থেকে বকাও খেয়েছি। আশাকরি এর পরে যখন কাজ করবো তখন আরিয়ান ভাই কম বকা দিবেন।

বর্তমানে বিনোদনের নতুন মাধ্যম ওটিটি। নাটক, সিনেমার গন্ডি পেরিয়ে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, ডিজনি+হটস্টার, বা পাশের দেশের হইচই, জি ফাইভ এখন আমাদের দেশের বিনোদন প্রেমীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এই সময়ে দাড়িয়ে এই নতুন মাধ্যমের জনপ্রিয়তা বা চাহিদা অস্বীকার করার উপায় নাই। এই বিষয়ে জুনায়েদ নিজের মতামত জানাতে যেয়ে বলেন- ‘সময়টা এখন ওটিটির এটা তো মেনে না নিয়ে উপায় নাই।

আর ওটিটির মাধ্যমে খুব সহজেই বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের একজন দর্শক আমাদের কনটেন্ট দেখতে পারছেন এটাও তো অনেক বড় পাওয়া। এছাড়া এই মাধ্যমে অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে শুরু করে নির্মাতা বা স্ক্রিপ্ট রাইটারদের কাছেও এক্সপেরিমেন্ট করার অনেক বেশি সুযোগ।

বাজেট, ক্যানভাস এবং অডিয়েন্স সবকিছুতেই একটা বিশালতা লক্ষ্য করা যায়। তবে সাথে সাথে এটাও ঠিক এখন ব্যতিক্রমী কনটেন্ট দিয়েই দর্শক ধরে রাখতে হবে, এর কোনো বিকল্প নাই। তবে আমি আশাবাদী যে, আমাদের দেশ এই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনেক ভালো ভালো কাজ করতে পারবে।’

সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বাস এবং প্রতীক্ষা দুটোই অনেক বেশি। কারন এই ওয়েবফিল্ম দর্শকেরা কতোটা গ্রহন করেন সেটার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে।

ভিন্নধর্মী গল্প, বিগ বাজেট, নির্মানে মুন্সিয়ানা এবং এরকম জমকালো শিল্পী তালিকা সব মিলিয়ে স্বাভাবিকভাবেই যে হাইপ উঠেছে দর্শকদের মাঝে সেটার ফলাফল জানা যাবে আগামী ১৯ই আগষ্ট।

জুনায়েদের আমন্ত্রন কিছুটা এমন যে, সবাই এটা দেখবেন এবং দেখার পর ভালো-মন্দ নিয়ে অবশ্যই আলোচনা এবং সমালোচনা করবেন। ভুল-ভ্রান্তির মধ্য দিয়েই আমরা শিখবো এবং সামনে সেসব শুধরে নিবো। তবে ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ হতাশ করবেনা বলেই আশাবাদী তিনি।

এই সময়ের ব্যস্ততা নিয়ে জুনায়েদ জানান, আসলে অফার তো কমবেশি পাই। তবে আমি সাধারণত বেছে বেছেই কাজ করি প্রথম থেকেই। নিমা রহমানের পরিচালনায় জনপ্রিয় ‘গুলশান এভিনিউ’ ধারাবাহিকের দ্বিতীয় সিজনে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে কাজ করছি। এছাড়া পিপলু আর খানের পরিচালনায় বিকাসের একটি টিভিসিতে দেখা যাবে আমাকে। এছাড়াও আরো কিছু কাজের কথা হয়েছে।

তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষনা না আসায় সেসব এখন বলা যাচ্ছেনা বলেও জানিয়েছেন তিনি। এখন অভিনয়ই তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান বলেও জানান এই তরুন অভিনেতা। নিজের দক্ষতা এবং মেধা প্রমানের জন্য পরিশ্রম এবং কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকাটা খুব দরকার তাই প্রতিটা কাজেই নিজের সেরাটা দেবার প্রয়াসে দিনরাত ব্যস্ত থাকাটাই এখন জুনায়েদের নিত্যদিনের রুটিন।

সামনের দিনগুলোতে অভিনেতা হিসেবে জুনায়েদ নিজেকে কতোটা সুনিপুণ ভাবে গড়ে নিতে পারবেন বা প্রতিষ্ঠিত করবেন তা সময়ই বলে দিবে। তবে সেই প্রতিষ্ঠার জন্য যে পরিশ্রম এবং ভালোবাসার মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে উপস্থাপন করে যাচ্ছে সেলুলয়েডে তা বিফলে যাবেনা এই কামনা রইলো।

Ad