একজন নন্দিত এবং ব্যতিক্রমী নির্মাতা আশফাক নিপুন

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : এই সময়ে বাংলাদেশের টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে যে কয়জন নির্মাতা তাদের ভিন্নধর্মী কাজ নিয়ে দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন তাদের মধ্যে আলোচিত একটি নাম আশফাক নিপুন। নির্মানের মুন্সিয়ানা, ভিন্নধর্মী কিন্তু বাস্তবতার আলোকে লেখা কনটেন্ট যা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার নানা দিক অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে তুলে নিয়ে আসা আমাদেরই সামনে এবং দেশসেরা গুনী এবং দক্ষ অভিনয় শিল্পীদের চেনা ছকের বাইরে এনে অন্যভাবে তুলে ধরা- এসব নানা কারনেই তার নাটক বা টেলিফিল্ম নিয়ে সবার মধ্যেই আলাদা একটা আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়।

আশফাক নিপুন মানেই আমাদের চারপাশের খুব পরিচিত ঘটনা বা গল্প ভিন্ন ভাবে তুলে ধরা। এই গুনী এবং প্রশংসিত নির্মাতার জন্মদিনে তাকে নিয়ে এই বিশেষ ফিচার।

নাটক বা সিনেমার মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ গল্প বলেন, আবার কেউ গল্প দেখান, কিন্তু আশফাক নিপুন তার নির্মানের মুন্সিয়ানা দিয়ে আমাদের খুব সহজেই গল্পের ভেতরে নিয়ে যান। এই যাওয়াটা যেনো একটা জার্নি, যে জার্নিটা আমাদের পরিচিত, খুব চেনা, কিন্তু কেনো যেন কখনো সেভাবে মনোযোগ দিয়ে দেখা হয়নি। তাই হয়তো ভালোলাগার পরিমানটা অনেক বেশি কাজ করে।

কারন এই নতুনভাবে দেখাটাই আমাদের অন্যরকম আনন্দ দেয়, ভিন্ন অনুভূতি এনে দেয়। নির্মাতার স্বার্থকতা বা দক্ষতা মনে হয় একেই বলা হয়। আর এই সুত্রে তিনি শতভাগ সফল। বিশেষ করে তার বিগত কিছু কাজ তো অসাধারন মাত্রা যোগ করেছে৷ নির্মাতা হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন ২০০৬ সালে সেই হিসেবে কিছুদিন আগে ১৫টি বছর পার করলেন এই তিনি সাংস্কৃতিক মাধ্যমে।

ইউটিউব, অনলাইনের নানা প্ল্যাটফর্ম এবং ভিউ’র ভিত্তিতে জনপ্রিয়তা পরিমাপ করার এই অস্থির সময়ে অনেকটাই বেসামাল পরিস্থিতি পার করছে আমাদের টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি। ইন্টারনেট এবং হাতের রিমোটের কল্যানে এখন চোখের পলক ফেলার আগেই বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের যেকোনো কনটেন্ট দেখার সুযোগ আমাদের হাতের মুঠোয়।

তাই অবাধ সংস্কৃতির যুগে দর্শকদের পালস বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। জনপ্রিয় তারকাদের উপস্থিতির কারনে ভিউ হয়তো বাড়ানো যায় তবে নতুনত্ব বা ভিন্নতা নিয়েই মানসম্পন্ন এবং স্বতন্ত্র কাজ সবসময়ই আলোচনা এবং প্রশংসা কুড়ায় যা যুগের পর যুগ বাচিয়ে রাখে শিল্পীদের। বিগত কয়েক বছর ধরেই নিজের স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে ধারাবাহিকভাবে মানসম্মত কাজ উপহার দিচ্ছেন এই মেধাবী নির্মাতা।

সমাজের নানা অসঙ্গতি বা সমস্যা যা আমাদের খুব পরিচিত সেসব বিষয় অসাধারন নৈপুণ্যের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন আশফাক নিপুন। রোমান্টিক নাটকের জোয়ারের মাঝেও তার নাটকে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, গুজব এবং সমাজে তার প্রভাব, প্রশ্নপত্র ফাঁস, গুম ইত্যাদি নানা বিষয় উঠে এসেছে। গৎবাধা গল্পের বাইরে এসে তার এই অকুতোভয় এবং দুঃসাহসী পদক্ষেপ তাকে অন্য সব নির্মাতাদের থেকে আলাদা করেছে অনায়াসেই।

২০০৬ সালে চ্যানেল ওয়ানে প্রচারিত ছবিয়াল উৎসবে তার পরিচালনার প্রথম টেলি-ফিকশন ‘টু ইন ওয়ান’ প্রচারিত হয়েছিলো। সেই ফিকশনে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি। প্রথম কাজেই নিজের ভিন্নতা এবং নান্দনিকতার ছাপ রেখেছিলেন আশফাক নিপুন। গতানুগতিক স্রোতে যে তিনি ভাসবেন না তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ভালোভাবেই।

স্রোতের বিপরীতে হেঁটেই তিনি একের পর এক উপহার দিয়েছেন ‘মধুরেণ সপায়েৎ’, ‘অবাক ভালোবাসা’, ‘দ্বন্দ্ব সমাস’, ‘ফেরার পথ নেই’, ‘মিস শিউলি’, ‘এই শহরে’, ‘সোনালী ডানার চিল’, ‘পথের মাঝে গল্প’, ‘মুকিম ব্রাদার্স’, ‘আগুন্তক’, ‘সাহেব মেমসাহেব’ ‘আল্পনা কাজল’, ‘মুখ ও মুখোশের গল্প’ সহ অসংখ্যা জনপ্রিয় নাটক।

সাম্প্রতিক সময়ে নাট্যজগত নিয়ে হতাশ অনেক দর্শকও এই নাটকগুলো গ্রহণ করেছেন বেশ ভালোভাবেই। বলা হয়ে থাকে যে, এই মুহূর্তে বাংলা নাটকের সবচেয়ে আলোচিত, প্রশংসিত নির্মাতা হিসেবে আশফাক নিপুন আস্থার আরেক নাম।

চট্রগ্রামে বড় হলেও, নাট্যজগত নিয়ে বরাবরই আগ্রহী ছিলেন। নির্মাতা হিসেবে কাজ করার ইচ্ছাই একটা সময়ে ঢাকায় নিয়ে আসে তাকে। বাংলাদেশের নন্দিত এবং গুনী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ছবিয়ালের মাধ্যমেই নাট্যনির্মাণে এসেছেন আশফাক নিপুণ। তিনি প্রথমবার আলোচনায় আসেন তাহসান এবং মিথিলা জুটিকে নিয়ে নির্মিত নাটক ‘মধুরেণ সপায়েৎ’ এর মাধ্যমে।

বিজ্ঞাপন এবং সেসময় বাস্তবজীবনের এই জনপ্রিয় জুটির প্রথম নাটক এটি। আশফাক নিপুনের পরিচালনা, একটু ভিন্ন কনটেন্ট এবং তাহসান- মিথিলা জুটি সব মিলিয়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল নাটকটি৷ এরপর এই ত্রয়ী ‘সুখের ছাড়পত্র’, ‘ল্যান্ডফোনের দিনগুলিতে প্রেম’, ‘সে এবং সে’ এর মত জনপ্রিয় নাটক উপহার দিয়েছেন।

গায়ক পার্থ বড়ুয়া ও দক্ষ অভিনেত্রী অপি করিমকে নিয়ে ‘খুঁটিনাটি খুনসুঁটি’, ‘অবাক ভালোবাসা’ নাটক নির্মাণ করে আশফাক নিপুন প্রমান করেন তিনি শুধু ভালো পরিচালকই নন সাথে সাথে বাংলা নাটকে দর্শকপ্রিয় জুটি বানাতেও পারদর্শী৷ সেসময় পার্থ বড়ুয়া এবং অপি করিমের জুটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে নাটক প্রেমীদের কাছে।

টেলিভিশনের জনপ্রিয় জুটি তাহসান এবং তিশাকে নিয়ে অনেক জনপ্রিয় নাটক উপহার দিয়েছেন আশফাক নিপুন। ‘পথের মাঝে গল্প’, ‘শুনতে কি পাও’ বা সাম্প্রতিক ‘মুখ ও মুখোশের গল্প’ অন্যতম। আশফাক নিপুনের পরিচালনায় ধারাবাহিক নাটক ‘মুকিম ব্রাদার্স’ নাটকটি অসাধারন জনপ্রিয়তা লাভ করে। এসব নাটক এবং তার নির্মাণের মুন্সীয়ানা দিয়ে টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ শক্ত জায়গা তৈরী করতে সক্ষম হন তিনি।

এছাড়া ২০১৪ সালে শখ, আবির এবং ইরেশ যাকেরকে নিয়ে নির্মিত কমেডি ঘরানার ‘আল্পনা কাজল’ নাটকটি প্রশংসা পায়। তিশা এবং আবিরকে নিয়ে ‘রেইনবো’ নাটকটি সাহসী বক্তব্য নিয়ে হাজির হলে চমকে যান অনেকেই। তবে আশফাক নিপুন সাহসী নির্মাতা হিসেবেই নিজের কাজটি করেছেন সুনিপুণ ভাবে। পরবর্তীতে অবশ্য নাটকটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।

২০১৭ সালে ‘আয়নাবাজি অরিজিনাল সিরিজ’ এবং ‘ছবিয়াল রিইউনিয়ন’ নামে একটি উৎসব হয়েছিল, এই উৎসবে আশফাক নিপুন একমাত্র নির্মাতা যার পরিচালিত দুটি নাটক দুইটি উৎসবেই জায়গা পেয়েছিলো। আয়নাবাজি অরিজিনাল সিরিজে ‘দ্বন্ধ সমাস’ নাটকটি নির্মান করে প্রশংসা অর্জন করেন এবং আলোচনায় আসেন তিনি। এই নাটকের জন্য প্রথমবারের মত নির্মাতা হিসেবে দেশের জনপ্রিয় ‘মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার’ জিতে নেন তিনি।

২০১৮ সালে সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে তার পরিচালনায় তিনটি নাটক ‘সোনালি ডানার চিল’, ‘ফেরার পথ নেই’, ‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ’ প্রশংসা এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছিল দর্শকদের কাছ থেকে। পাশাপাশি হালকা মেজাজের রোমান্টিক নাটক ‘লায়লা, তুমি কি আমাকে মিস করো’ নামক নাটক উপহার দিয়ে প্রমান করেছিলেন তিনি সব ধরনের সাবজেক্ট নিয়েই কাজ করতে পারদর্শী।

নাটকে অনিয়মিত জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপি করিম কে নিয়ে গত বছর ঈদে অসাধারন প্রেজেন্টেশনের ‘মিস শিউলি’ নামক টেলিফিল্মটি তাকে নতুন করে জনপ্রিয়তা এনে দেয়। এই বছরেই অন্য আরেকটি নাটকে এই প্রজন্মের সামাজিক অবক্ষয় এবং ধর্ষণের বিষয়বস্তু নিয়ে ‘আগন্তুক’ সাড়া ফেলে।

সমাজে গুজব এবং তার প্রভাব নিয়ে নির্মিত ‘এই শহরে’ নাটকটি আশফাক নিপুনকে নিয়ে যায় এক ভিন্ন উচ্চতায়। এই বছর ভালোবাসা দিবসে তাহসান-তিশা জুটিকে নিয়ে ‘মুখ ও মুখোশের গল্প’ ভালোবাসার সংজ্ঞা নতুন করে আমাদের সামনে নিয়ে আসে। ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং প্রশংসা পায় এই নাটকটি।

যেখানে বিগত কয়েক বছরে ঈদ বা বিশেষ দিন মানেই আশফাক নিপুনের নাটক নিয়ে দর্শকদের মাঝে এক ধরনের আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছিল, সেখানে গত বছরের রোজার ঈদে করোনার কারনে নতুন নাটক না থাকলেও কোরবানির ঈদে দুটি টেলিফিল্ম এবং শর্টফিল্ম নিয়ে হাজির হয়েছিলেন আশফাক নিপুন।

শিল্পী সরকার অপু, ঈশিতা, আফরান নিশো এবং আবিরকে নিয়ে ‘ইতি মা’ তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা কাজ বলে বিবেচিত হয়। সব শ্রেনীর দর্শকদের কাছ থেকে ভূয়সী প্রশংসা পান এই টেলিফিল্ম দিয়ে। গতানুগতিক প্রেম বা রোমান্টিক ঘরানার বাইরে মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প মন ছুয়েছে সকলের।

তার পরিচালনায় গত ঈদের অন্য কাজটি হচ্ছে ‘ভিক্টিম’। মেধাবী অভিনেত্রী অপি করিমকে নিয়ে তার সবগুলো কাজই প্রশংসনীয় এবং জনপ্রিয়। ‘ভিক্টিম’ এ অপির সাথে আছেন আফরান নিশো, সাফা কবির সহ আরো অনেকে। নিরাশ করেননি অপি-নিপুন-নিশো ত্রয়ী। এই সময়ে আমাদের চারপাশের চেনা গল্পই নির্মানের মুন্সিয়ানা দিয়ে এক নান্দনিক কাজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

অন্যদিকে সোলাইমান খোকা, সাবিলা নূরকে নিয়ে শর্টফিল্ম ‘অযান্ত্রিক’ নামক শর্টফিল্মে তিনি করোনাকালের একটি সেন্সিটিভ ইস্যু তুলে ধরেছেন নিপুন দক্ষতায়৷ দর্শকদের কাছে এটাই যেনো এখন খুব স্বাভাবিক যে বছর শেষে যে কয়টি ভালো এবং নান্দনিক কাজ মনে স্থায়ী জায়গা করে নেয় তার মধ্যে আশফাক নিপুন একটি নিয়মিত নাম।

বিনোদনের নতুন মাধ্যম ওটিটিতেও আশফাক নিপুন হাজির হয়েছেন এই বছরে। ভারতের জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘হইচই’ এর প্রথম পারিবারিক ড্রামা ‘কষ্টনীড়’ দিয়ে আলোচনায় এসেছেন আমাদের দেশের গুনী এই নির্মাতা। ‘কষ্টনীড়’ নামক এই ওয়েবফিল্মে একটি বাড়ি, সাতজন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন গল্প এবং যখন তারা সেই বাড়িতে একত্রিত হয় তখন তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত টানা-পোড়েন, নিজেদের গল্প এবং একে অন্যর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি সব কিছুই উপস্থাপন করা হয়েছে খুব চেনা কিন্তু ভিন্নতার সাথেই।

আশফাক নিপুন বরাবরই সমসাময়িক নানা ইস্যু যেসব আমাদের চারপাশের খুব চেনা কিন্তু আমরা সেভাবে মনোযোগ দিয়ে দেখি না বা খেয়াল করি না, সেসব বিষয় তার নির্মানের মুন্সিয়ানায় জোরে নান্দনিক ফ্রেমে উপস্থাপন করেন।

তবে নির্মাতা হিসেবে আশফাক নিপুন একটি আলাদা ট্রেডমার্ক গড়ে নিয়েছেন ‘হইচই’ প্ল্যাটফর্মে রিলিজ পাওয়া ‘মহানগর’ দিয়ে। রাজধানী ঢাকায় গভীর রাতে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকজন মানুষের জীবনের ওই রাতের গল্প এতোই নান্দনিক এবং স্বতন্ত্রভাবে উপস্থাপন করেছেন তিনি যা এককথায় অসাধারণ। আমাদের দেশীয় এই কনটেন্ট দেশের গন্ডি পেরিয়ে ওপার বাংলা এবং সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাংলাভাষী দর্শকদের কাছে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করে।

কলকাতার সুপারস্টার প্রসেনজিৎ থেকে শুরু হইচইয়ের সত্ত্বাধিকারী সবাই ‘মহানগর’ এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মোশাররফ করিম, শ্যামল মাওলা, জাকিয়া বারী মম, খায়রুল বাসারের পাশাপাশি এই সিরিজ দিয়ে মোস্তাফিজুর নূর ইমরান এবনহ নাসির উদ্দিন অভিনয় দক্ষতা দিয়ে রীতিমতো আলোচনায়।

আশফাক নিপুনের যে কোনো ফিকশনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করা যায় যে, প্রতিটি চরিত্রই সেটার রানটাইম বড় থাকুক বা স্বল্প সময়ের জন্য হোক তা নজর কাড়ে। এই সময়ে এসে এই ব্যাপারটা প্রায় উঠেই যাচ্ছিলো তবুও নিপুন সহ কয়েকজন নির্মাতার কল্যানে এখনো সেটি বজায় আছে।

আশফাক নিপুনের নাটকে অপি করিম, তাহসান, তিশা, মেহজাবীন, আফরান নিশো বা এই সময়ের ইয়াশ রোহান, সাফা কবির, আবির তাদের পরিচিত গন্ডি থেকে বের হয়ে যেনো ভিন্ন এক রুপে হাজির হন। বিশেষ করে এই সময়ে একই গল্পের নাটকে একই রকম অভিনয় নিয়ে সমালোচিত মেহজাবীন এবং আফরান নিশো যেন তার নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে সকল সমালোচনা এবং অভিযোগের জবাব দিয়ে দেন।

অভিনেত্রী হিসেবে মেহজাবীন এর ক্যারিয়ারের সফলতার পেছনের পরিচালক হিসেবে আশফাক নিপুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন- এ কথা বললে খুব একটা ভুল হয়না।

করোনা পরিস্থিতিতে বাসায় থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সরব ছিলেন দেশ সেরা এই নাট্যনির্মাতা। বিনা কারনে সাংবাদিক কাজল গ্রেফতার এবং মত প্রকাশের ক্ষেত্রে হয়রানি মূলক ডিজিটাল আইনের অপব্যবহার নিয়েও বেশ সোচ্চার তিনি। নিয়মিত এসব নানা ইস্যুতে তার বক্তব্য সবার সাথেই শেয়ার করছেন আশফাক নিপুন।

এছাড়া এই ভয়াবহ সময়ে দেশের নানা সেক্টরের অনিয়ম নিয়েও নিজের মতামত তিনি জানিয়েছেন সাহসিকতার সাথে। এখানেই ইন্ডাস্ট্রির অন্য অনেকের চেয়ে আলাদা একজন মানুষ আশফাক নিপুন। সত্য বা নিজের মনের কথাটা বলতে ভয় পান না তিনি। ব্যক্তিজীবনে বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং জনপ্রিয় গায়িকা এলিটার সাথে সুখে সংসার করছেন আশফাক নিপুন।

নাট্যজগতে সফল পদচারণার পর বেশিরভাগ নির্মাতার লক্ষ্য থাকে সিনেমা নির্মানের প্রতি। কারন বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় এবং তাৎপর্য্যময় মাধ্যম হচ্ছে চলচ্চিত্র। সেই ধারাবাহিকতায় এই মেধাবী নির্মাতাও তার পরিচালিত প্রথম সিনেমার নাম ঘোষনা দিয়েছিলেন কিছুদিন আগে। ‘গোল্লা’ নামক সিনেমাটির প্রি-প্রোডাকশনের কিছু কাজ গুছিয়ে নিয়ে বিস্তারিত জানানোর কথা ছিলো তার।

তবে এর মাঝেই করোনা পরিস্থিতিতে সব থমকে যাওয়ায় আপাতত কিছুই জানা যায়নি। তবে নাটকের মতোই সিনেমাতেও তিনি তার দক্ষতা এবং মেধা দিয়ে ভিন্নধর্মী কিছু নিয়ে হাজির হবেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বাস্তবতা অবলম্বনে সামাজিক নানা ইস্যু নিয়ে তার করা কাজ এবং যেকোনো বিষয় ভিন্নভাবে দেখার শক্তি তাকে নিয়ে যাবে আরো অনেকদূর, এটাই আমাদের কামনা।

তার প্রতিটা কাজই ভিন্ন গল্প বলে তবে প্রতিটা গল্পই আমাদের জীবনের সাথে জড়িত গল্প। তাই আমাদের দেশের দর্শকদের এসব কাজের সাথে রিলেট করাটা সহজ হয়। এই গুনী নির্মাতা তার নাটক, টেলিফিল্মে মধ্যবিত্ত শ্রেনীর ইমোশন, চাওয়া পাওয়ার ব্যবধান, সম্পর্কের টানাপোড়েন এসব বিষয় তুলে ধরেছেন বারবারই। সামনের দিনে ছোট পর্দার পাশাপাশি নিয়মিতভাবে বড় পর্দায় ‘বানিয়েছেন আশফাক নিপুন’ এই ট্যাগলাইন দেখার অপেক্ষায় আমরা। শুভকামনা রইলো এই তরুন কিন্তু মেধাবী নির্মাতার জন্য।

Ad