একটি পরিপূর্ণ কাস্টিং এজেন্সি গড়ার প্রত্যয় নিয়ে মেহরাজ হোসেন মিরাজ

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : সারাবিশ্বেই বিজ্ঞাপন, নাটক, সিনেমা বা সাম্প্রতিক ওটিটিতে একটি ফিকশন নির্মান করার জন্য গল্পকার, চিত্রনাট্যকার, পরিচালক, প্রযোজক বা অভিনেতা, অভিনেত্রী সহ প্রতিটি কলাকুশলীদের নিয়েই গড়ে ওঠে একটি টিম। টিমের প্রতিটি সদস্য তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সেরাটা দিতে পারলেই একটি নাটক, বিজ্ঞাপন বা সিনেমা সফল হবার দৌড়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকে।

আর এই প্রতিটা সেক্টরে দক্ষ এবং মানানসই শিল্পী এবং কলাকুশলীদের নির্বাচন করার কাজটি করে থাকেন একজন কাস্টিং ডিরেক্টর এবং তার টিম। অন্যান্য দেশে একটি ভালো এবং নান্দনিক কাজের জন্য একজন কাস্টিং ডিরেক্টর এবং তার টিমের ব্যাপারে আলোচনা বা প্রশংসা শুনতে পারা গেলেও আমাদের দেশে এই ব্যাপারটা নাই বললেই চলে।

তবে নানা প্রতিবন্ধকতা বা বিপত্তি পার করে এই সময়ের এক তরুন বিনোদন অংগনে একটি স্বতন্ত্র জায়গা তৈরী করে চলেছেন বেশকিছু দিন ধরেই। যার কথা হচ্ছে তিনি মেহরাজ হোসেন মিরাজ।

অফিসিয়ালি মাত্র দুই বছরের ক্যারিয়ার এর মাঝে করোনা পরিস্থিতিতে বাধাগ্রস্ত হবার পরেও অনেকগুলো ভিন্নধর্মী এবং আলোচিত কাজে তিনি এবং তার টিম কাজ করেছেন সফলভাবেই। আস্তে আস্তে এই মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয় একটি নাম এম,এম, ফিল্মস কাস্টিং এজেন্সি। এই প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ প্রযোজক এবং কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন তিনি নিজের মেধা এবং দক্ষতার মাধ্যমে।

বাংলাদেশর প্রথম কোন লাইন প্রডিউসিং কমার্শিয়াল চলচ্চিত্র হতে যাচ্ছে ‘নূর’। আর এই চলচ্চিত্রে ক্যাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করতে যাচ্ছেন মেরাজ হোসাইন মিরাজ। নিঃসন্দেহে একজন তরুন কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে এটা তার জন্য আনন্দের। মিরাজের সাথে এই বিষয়ে আলাপচারিতার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-

প্রথমেই এই মাধ্যমে কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে তার শুরুটা কিভাবে জানতে চাইলে মিরাজ জানান- ‘আসলে সেই ভাবে বলতে গেলে আমি পুরোপুরিভাবে কাজ শুরু করার আগেই এই মাধ্যমটা সম্পর্কে জানতাম। আমার বাবা তিনবছর আগে হঠাৎ করেই স্ট্রোক করেন। সেই সময় তার সহকারীরা বিভিন্নভাবে আমাদেরকে ঠকানোর চেস্টা করে যা আমাদের চিন্তায়ও আসেনি। পরবর্তীতে আব্বার শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা করে আমাদের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নিজ কাধে তুলে নেই আমি। এভাবেই আমার শুরু একজন কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে।

কাজ করার সময়ে প্রতিবন্ধকতা বা বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে বিপত্তি বলতে আমি বলবো আমার অভিজ্ঞতার অভাব এবং কম বয়সের কারনে অনেকেই প্রথমদিকে আমাকে পাত্তা দিতে চাইতোনা। আর স্বাভাবিকভাবেই প্রথমদিকে অনেক কিছু বুঝতে পারিনি। কিভাবে একটা প্রযোজনা সংস্থা বা শিল্পীদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে, শিডিউল মেলাতে হবে, বা কোন চরিত্রে কাকে নিলে কাজটা ভালো হবে সেসব বিষয়ে কাজ করতে করতেই আমি শিখেছি।

গত দুই বছরে প্রায় ৬০ টির মতো টিভিসি, ওভিসি, ওয়েব সিরিজ এবং সম্প্রতি বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম চলচ্চিত্রেও কাজ করছেন মিরাজ।

এতোসব কাজের মধ্যে কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে কোন কাজগুলো করে স্যাটিসফাই আপনি জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন- ‘অনেক কাজের মধ্যে নির্দিষ্ট করে তো কিছু বলা যায়না তবে এসব কাজের মধ্যে গত মে দিবসে নেরোলাক পেইন্টস, ভাষা দিবসে অলিম্পিক ইন্ড্রাস্টি, বসুন্ধরা এলপি গ্যাস, ভালোবাসা দিবসে ‘কাপল অফ হ্যাক্স’, জ্যাক বাংলাদেশ, ১৬ই ডিসেম্বরে সিম্ফনি মোবাইলের আমাদের বিজয় তারুন্যের হাতে, এছাড়া আইসিটি মন্ত্রনালয়ের ‘এক্সপেরিয়েন্স ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০২০’, এবং ওয়েবসিরিজ ‘গাল্লি স্কোয়াড’ ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব প্রিয়।

কোন কাজের সময় শিল্পী নির্বাচন করা বা পুরো কাজটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্যও নিজের সবটা দিয়েই চেস্টা করি। গল্প বা কনটেন্ট মাথায় নিয়ে সবসময় চেস্টা করি যা বা যাকে এখানে মানাবে তাকে কাস্ট করার জন্য। ডেট, লোকেশন এবং অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে সবসময় সেটা হয় তেমনটা নয় তবে আমি এবং আমার টিম চেস্টা করি সবসময়ই।

এম এম কাস্টিং এজেন্সি ১৯৯৫ সালে প্রথমবার কাস্টিং নিয়ে কাজ শুরু করে। এর কর্ণধার মিজানুর রহমান মিজান জনপ্রিয় শো ‘সিসিমপুর’ বা প্রশংসিত ‘গেরিলা’ সিনেমার কাস্টিং এর দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া ১৯৯৫ সালে নায়ক রাজ রাজ্জাকের নেতৃত্বে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র জুনিয়র শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে পালন করে।

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি এবং প্রযোজক সমিতির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সুযোগ্য উত্তরসূরী মেহরাজ হোসেন মিরাজ এখন এই এম এম কাস্টিং এজেন্সির দায়িত্ব পালন করেছেন।

গত চার বছরের ক্যারিয়ারে প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রমাণ করার জন্য কাজ করেছেন মিরাজ। দেশের অন্যতম আলোচিত এবং জনপ্রিয় নির্মাতা অমিতাভ রেজার হাফস্টপ ডাউনে কাস্টিং এর খুটিনাটি কাজ শেখার সৌভাগ্য হয়েছে মিরাজের। অমিতাভ রেজার তত্ত্বাবধানে ইন্টার্নশীপ সম্পন্ন করেছেন তিনি।

সামনের দিনে এম এম কাস্টিং এজেন্সি বাংলাদেশের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে একটি স্বনামধন্য কাস্টিং ইন্সটিটিউট হিসেবে আবির্ভূত হবে এমন স্বপ্ন বা পরিকল্পনা নিয়েই নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন এই দক্ষ তরুন। শুভ কামনা রইলো মিরাজের জন্য তার পরিশ্রম এবং দক্ষতা দিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরনের পথে এগিয়ে যাক তিনি এটাই কামনা।

Ad