‘চন্দ্রাবতী’ রূপে আলো ছড়াচ্ছেন দোয়েল

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : একজন নির্মাতা অন্য একটা সিনেমার সেটে নায়িকাকে দেখে তার নিজের পরবর্তী সিনেমার নায়িকা হিসেবে মোটামুটি কনফার্ম করে স্ক্রিনটেস্টের জন্য যোগাযোগ করেন এমনটা আমরা নানা ভাষার নানা সিনেমায় অনেকসময় দেখলেও বাস্তবে ঠিক এমনটাই ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ‘চন্দ্রাবতী কথা’ সিনেমার নাম ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় উপহার দেয়া অভিনেত্রী দিলরুবা দোয়েলের ক্ষেত্রে।

তখন দোয়েল তার প্রথম চলচ্চিত্র নাসির উদ্দিন ইউসুফ পরিচালিত ‘আলফা’ সিনেমার শ্যুটিং নিয়ে ব্যস্ত। অন্যদিকে নির্মাতা এন রাশেদ চৌধুরী তার সিনেমা ‘চন্দ্রাবতী কথা’র জন্য চন্দ্রাবতীকে খুজছিলেন।

এমনই এক সময় তিনি আলফা’র সেটে হাজির হয়ে দেখা পান দোয়েলের এবং স্ক্রিনটেস্টের জন্য যোগাযোগ করেন, ব্যাস তারপরের সেই স্ক্রিনটেস্ট, রিহার্সাল, বিভিন্ন ঋতুতে শ্যুটিং এবং মাঝের প্রায় দুই বছরের করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে সিনেমা মুক্তির পর ফলাফল সবার সামনে।

না মূল ভূমিকায় চন্দ্রাবতী হিসেবে দোয়েল এতোটাই উজ্জ্বল এবং বিশ্বাসযোগ্য ভাবে সেলুলয়েডে উপস্থাপন করেছেন নিজেকে সেটা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগের সমাজব্যবস্থায় একটি মেয়ের প্রেম, বিরহ এবং নিজের সাথে নিজের মনের যুদ্ধ সব মিলিয়ে দারুন অভিনয় করেছেন তিনি।

তার ময়মনসিংহের ভাষায় সংলাপ, পোষাক পরিচ্ছদ, চোখের অভিব্যক্তি, বা বডি ল্যাংগুয়েজ সবকিছুর জন্যই প্রশংসা পাচ্ছেন তিনি। তবে দোয়েল সরাসরিই এই জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তার নির্মাতা এন রাশেদ চৌধুরী এবং তরুন ঘোষের প্রতি।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, আসলে প্রায় চার বছর আগে শ্যুটিং করার সময় বা দুই বছর আগে সব কাজ শেষ হবার সময়ও আমি বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতীকে কতোটা উপলব্ধি করতে পেরেছি সেটা আজো জানিনা। তবে সিনেমা মুক্তির পরে দর্শকদের প্রশংসা বা ভালোবাসা পেয়ে আমি অভিভূত।

চন্দ্রাবতী হিসেবে আমার কাজ এবং আমাকে তারা গ্রহন করেছেন এটাই অনেক বড় একটা প্রাপ্তি। আমি কতোটা ভালো করতে পেরেছি সেটা অন্যেরা ভালো বলতে পারবে সেটাই স্বাভাবিক তবে এই ভালোবাসা বা প্রশংসা আমাকে নতুন করে সাহস এবং উদ্যম এনে দিয়েছে আরো ভালোভাবে একটা চরিত্র নিয়ে ভাবতে, নিজের সেরাটা দিতে।

দোয়েল সাথে সাথে আরো জানান, ব্যক্তিগত ভাবে এই ইন্ডাস্ট্রির একজন সদস্য হিসেবে ভালো লাগার আরেকটা বিষয় হলো এতো সময় আগের একটা গল্প এবং এই আধুনিক সময়ে সেটার গ্রহনযোগ্য হয়ে ওঠা অনেক বড় একটা বিষয়। সবাই এই সিনেমাটির প্রশংসা করছেন এটা আমাদের পুরো টিমের কৃতিত্ব।

‘চন্দ্রাবতী কথা’ সেই হিসেবে একটা দলিল হয়েই রয়ে যাবে আমাদের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে। আর ইতিহাসের অংশ হিসেবে যুক্ত হওয়াটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলেই জানিয়েছেন এই গুনী অভিনেত্রী।

করোনার কারনে প্রায় দুই বছরের গ্যাপের পরে সম্প্রতি তিনি শেষ করেছেন নূরুল ইসলাম আতিকের আলোচিত ‘লাল মোরগের ঝুটি’ সিনেমার কাজ। এছাড়া অনুদানের আরেকটি সিনেমাতেও কাজ করছেন তিনি। শবনম ফেরদৌসী পরিচালিত ‘আজব কারখানা’ সিনেমায় তার সাথে আছেন কলকাতার পরমব্রত।

সামনেই মুক্তি পাবে সৈকত নাসিরের ‘ক্যাসিনো’ এই সিনেমাতেও গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্রে দেখা যাবে দোয়েলকে। এই সময়ে বিনোদনের নতুন মাধ্যম ওটিটিতেও কাজ করছেন তিনি। সম্প্রতি ‘ফ্রেশ’ এর একটি বিজ্ঞাপনের কাজ করলেন যেটি অনএওয়ার হবে শিগগিরই।

সবমিলিয়ে বলা যায় দিলরুবা দোয়েল কাজের মধ্য দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সামনের দিনগুলিতে আরো ভালো এবং ব্যতিক্রমী কাজে দেখতে পাবো তাকে এটাই কাম্য। শুভ কামনা রইলো সাম্প্রতিক সময়ের এই গুনী অভিনেত্রীর জন্য।

Ad