রন্ধনশিল্পে আলোচিত মুখ আফরোজা নাজনীন সুমি

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : একাধারে সফল রন্ধনশিল্পী, সফল উপস্থাপক, ফুড স্ট্যাইলিষ্ট, রেসিপি ডেভেলপার, ট্রেইনার, খন্ডকালীন শিক্ষক এবং মহিলা সম্পাদক হিসেবে নিজের দক্ষতার সফল প্রমান দিয়েছেন তিনি অজস্রবার। তবে এই সব পরিচয়ের মধ্যে একজন রন্ধনশিল্পী হিসেবেই তিনি সবার কাছে পরিচিত। যার কথা লিখছি/বলছি তিনি আমাদের সবার প্রিয় আফরোজা নাজনীন সুমি। তার জন্মদিন উপলক্ষে তাকে নিয়ে এই বিশেষ ফিচার।

সুমীর বাবা জালাল উদ্দিন ছিলেন বিএডিসির একজন কর্মকর্তা। বাবার সরকারি চাকরির সুবাধে তার শৈশব কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। পরবর্তীতে একটা সময় ঢাকার ধানমন্ডিতে কেটেছে তার জীবনের অনেকটা সময়।

মা লায়লা জালাল রান্না করতে ভালোবাসতেন এবং অনেক ভালো রান্না করতেন। মায়ের কাছ থেকেই মূলত ছোটবেলাতেই রান্না শেখা আফরোজা নাজনীন সুমির। মায়ের মতো তিনি নিজেও রান্না করতে ভালোবাসতেন শৈশব থেকেই। তাই রন্ধনশিল্প’র সাথে তার বন্ধনটা দীর্ঘদিনের।

ব্যক্তিগতজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর এমবিএ করেছেন একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ইন্টারপ্রেনার্সশিপ এর উপর কোর্স করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেবসন কলেজ থেকে।

রন্ধনশিল্পের পাশাপাশি ফটোগ্রাফি করতেও ভালোবাসেন তিনি। বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির আজীবন সদস্য হিসেবে এখনো বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেন সুমী। ওমেন ইন্টারপ্রেনার্স এসোসিয়েশন এর বোর্ড মেম্বার, ওমেন কুলিনারি এসোসিয়েশন এর বোর্ড মেম্বার, শেফ ফেডারেশন বাংলাদেশের লাইভটাইম মেম্বার এবং ওয়ার্ল্ড শেফ চয়েস ফেডারেশনের বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করছেন তিনি।

রান্নার প্রতি নিজের ভালোবাসা এবং এই সেক্টরে নতুন শিখতে আসা ব্যক্তিদের জন্য সুমিস কিচেন নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে এটির সিইও হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন এই পরিশ্রমী এবং নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখা সুমী।

গত বছর বইমেলায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য “বাহারি রান্না” নামে ব্রেইন বুক প্রকাশিত হয়েছে সুমীর। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন থেকে ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশনের ওপর ন্যাশনাল সার্টিফিকেট কোর্স করেছেন সুমী। ফুড হাইজিন অ্যান্ড স্যানিটেশনের ওপর আরো একটি কোর্স করেছেন সেখান থেকেই। এরপর ইন্টার্নি করেছেন হোটেল রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন ঢাকা থেকে। এছাড়াও বারিস্তা ট্রেনিং নিয়েছেন নিজের রন্ধন প্রতিভা আরো বিকশিত করার জন্য।

এছাড়াও বিভিন্ন টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এটিএন বাংলা এবং এশিয়ান টেলিভিশনে নিয়মিত অনুষ্ঠান করছেন।প্রথম আলো এবং ক্যানভাসের মতো জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমের সাথেও রন্ধন শিল্পের নানা বিষয় নিয়ে তিনি জড়িত আছেন দীর্ঘদিন ধরেই। বাংলাদেশের ডান কেক ডেজার্ট জিনিয়াস, রূপচাঁদা সুপার শেফ, কলকাতার কুলিনারি ডিভা কুকিং প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন। এসবের পাশাপাশি প্লেপ্যান স্কুল এবং একশন এইডের হ্যাপি হোমস প্রজেক্টের বাচ্চাদের কুকিং এবং বেকিং এর নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন তিনি।

রন্ধনশিল্পে তার অবদানের জন্য তিনি দেশে এবং বিদেশে ভূষিত হয়েছেন অসংখ্য সম্মাননায়। রন্ধনশিল্পী হিসেবে নিজের প্রতিভা এবং দক্ষতা এভাবেই এই শিল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আস্থাশীল একটি শক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

শুভকামনা রইলো এই গুনী নারীর জন্য। সামনের দিনে আফরোজা নাজনীন সুমি এভাবেই তার অনুপ্রেরণা এবং কর্ম দিয়ে নিজের সাফল্যের যাত্রা অব্যহত রাখবেন এটাই কামনা।

Ad