রায়হান রাফির নায়িকারা!
আফজালুর ফেরদৌস রুমন : সিলেটে জন্ম নেয়া এবং মাদ্রাসার হোস্টেলে জীবনের অনেকটা সময় পার করা তরুনটি যে এক সময় ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম আলোচিত এবং জনপ্রিয় নির্মাতা হিসেবে নিজেকে অল্প সময়েই প্রতিষ্ঠিত করে ফেলবেন সেটা স্বাভাবিকভাবেই অনেকের ধারণাতেই ছিলোনা।
তবে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘বেওয়ারিশ’ এর মাধ্যমে ২০১৩ সালে ইন্ডাস্ট্রিতে যাত্রা শুরু করা সেই তরুনটি ২০২২ সালে এসে ওয়েবফিল্ম ‘টান’ এর মাধ্যমে নিজের জয়যাত্রা অব্যাহত রেখেছেন সুনিপুণভাবেই। বলছি বা লিখছি সময়ের অন্যতম আস্থাশীল নির্মাতা রায়হান রাফির কথা।
বাংলাদেশের বানিজ্যিক সিনেমার গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে একটু ভিন্নতা নিয়ে নিজের প্রথম সিনেমা ‘পোড়ামন ২’ দিয়েই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন তিনি। মজার বিষয় হলো একটি সিনেমার সবচেয় গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ক্যাটাগরি (পরিচালক, নায়ক এবং নায়িকা ‘পোড়ামন ২’ সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ এই তিন ক্যাটাগরির তিনজনই একেবারেই নতুন। তবে নবীন হলেও তিনের ক্যারিশমায় সফল হয় পোড়ামন-২।
এরপরে ‘দহন’ বানিয়েও প্রশংসিত হন রায়হান রাফি। বেশকিছু সিনেমার কাজ শুরু এবং কিছু কিছু সিনেমা শেষ করলেও করোনার কারনে সেগুলো এখনো মুক্তির আলো দেখেনি। তবে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে বিনোদনের নতুন মাধ্যম ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নির্মান মুন্সিয়ানায় একের পর এক চমক দেখিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
‘অক্সিজেন’, ‘জানোয়ার’, ‘ডার্ক সাইড অব ঢাকা’, ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ এবং সাম্প্রতিক ‘টান’। প্রতিটি ফিকশনই দর্শকপ্রিয় তো হচ্ছেই সাথে প্রশংসাও পাচ্ছে দর্শক এবং সমালোচকদের কাছ থেকে।
যারা রায়হান রাফির পরিচালনায় ফিকশনের সাথে পরিচিত তারা একটি বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল যে নির্মাতা হিসেবে চিরচেনা স্রোতের বিপরীতে যেয়ে সমসাময়িক নানা ঘটনা যা আমাদের জীবনে ভালোভাবেই কোনো না কোনো সময় নাড়া দিয়েছে সেসব সেন্সেটিভ ইস্যু নিয়েই সেলুলয়েডে তিনি ম্যাজিক দেখান।
বিশেষ করে তার প্রতিটি ফিকশনের এন্ডিং বা ক্ল্যাইমেক্স আমাদের মুগ্ধতার সাথে সাথে স্তব্ধ করে দিয়েছে বহুবার। সেই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ‘চরকি’তে রিলিজ পাওয়া ওয়েবফিল্ম ‘টান’ এর শেষ ত্রিশ মিনিট আমাদের একটা ঘোরের ভেতর নিয়ে যায় অবলীলায়। চমকের পর চমক যেমন ছিলো তেমনি থ্রিল বা সাসপেন্স মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে শেষের বেশকিছু দৃশ্যে।
যে বিশেষ আরো একটা দিক রায়হান রাফির পরিচালনায় লক্ষ্য করা যায় সেটা হচ্ছে আমাদের দেশের বেশকিছু চিত্রনায়িকাকে তিনি এমনই গল্প আর চরিত্রে কাস্ট করেছেন যেসব চরিত্রে তাদের আগে দেখা যায়নি। প্রথম এবং দ্বিতীয় সিনেমায় নবাগত পূজা চেরীকে দুইটি ভিন্ন রকম চরিত্রে উপয়াথাপন করে সাড়া ফেলা এই নির্মাতা বানিজ্যিক সিনেমার নায়িকা হিসেবে মাহিয়া মাহী পুরোই চমক হিসেবে হাজির হন রাফির পরিচালনায় ‘অক্সিজেন’ ফিকশনে।
‘ডার্ক সাইড অব ঢাকা’ বা ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ তে তমা মির্জাকে এমনভাবে প্রেজেন্ট করলেন তিনি যে অভিনেত্রী হিসেবে যেনো তমা মির্জার পূর্ণজন্ম হলো। নিজের ক্যারিয়ারের সেরা কাজ উপহার দিয়েছেন তমা এই দুই ফিকশনে। ‘ডার্ক সাইড অব ঢাকা’তে আরেক অভিনেত্রী নাজিফা তুষির উপস্থিতিও ছিলো অসাধারণ।
এবার একই কথা বলতে হয় ‘টান’ এর অবনী রূপে রীতিমতো চমকে দেয়া চিত্রনায়িকা বুবলী’র কথা। ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা বুবলীর যেনো অভিনেত্রী হিসেবে নতুন পথচলা শুরু হলো ‘টান’ দিয়ে।
অন্যভাবে বলা যায় এই ওয়েবফিল্মের আসল জাদু বুবলী। যে বুবলীকে তার অভিনয় নিয়ে প্রায়ই ট্রোল করা হতো সেই বুবলীকে সাদামাটা গেটআপ, নন মেকআপ লুক, ব্যতিক্রমী চরিত্রে এতোটাই সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা হলো এই ওয়েবফিল্মে যা আমাদের চিন্তাতেও আসেনাই।
একজন গুনী নির্মাতার হাতে একজন অভিনেতা এবং অভিনেত্রী নিজের সেরাটা দিতে সক্ষম হয় একথা আবারো প্রমানিত হলো ‘টান’ এর মধ্যে দিয়ে। যে স্বপ্ন এবং আত্মবিশ্বাসের রথে চড়ে তিনি এসেছেন এবং নিজের কাজে দিয়ে জয় করেছেন লক্ষ কোটি মানুষের হৃদয় সেই তরুন নির্মাতা রায়হান রাফি সামনের দিনেও আমাদের এভাবেই চমক দিয়েই যাবেন এটাই কাম্য।