‘শেষ চিঠি’ দিয়ে অভিনেত্রী দীঘি’র প্রত্যাবর্তন

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : শিশুশিল্পী হিসেবে ঠিক যতোটা ভালোবাসা, প্রশংসা এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন দীঘি পরবর্তীতে প্রাপ্ত বয়সে নায়িকা হিসেবে যখন নতুন করে পথচলা শুরু করলেন তখন বেশকিছু কারনেই সমালোচনা যেনো ঘিরে রেখেছিলো তাকে।

এমনকি তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী সেই ছোট্ট দীঘি চিত্রনায়িকা হিসেবে যেনো হতাশাজনক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে বিগত কয়েক বছরের সেই হতাশা আর অপ্রাপ্তি ঘুচলো সম্প্রতি রিলিজ পাওয়া ওয়েব ফিকশন ‘শেষ চিঠি’ এর মাধ্যমে।

দীঘি ভালো অভিনেত্রী সেটা ছোটবেলায় প্রমাণ দিয়েছিলেন বিজ্ঞাপন আর চলচ্চিত্র মাধ্যমে। তবে পুরোদস্তুর অভিনেত্রী হিসেবে তিনি যে মানানসই চরিত্র আর গল্প পেলে অসাধারণ সাবলীল অভিনয় করতে পারেন তার উদাহরণ নির্মাতা সুমন ধর এর পরিচালনায় স্বল্পদৈর্ঘ্য ফিকশন ‘শেষ চিঠি’।

এই ফিকশনের গল্পে আছে প্রেম, পরিবার আর বিচ্ছেদের রেশ। আর এমন গল্পে দীঘি যা করে দেখালেন তা সাম্প্রতিক সময়ের সম্ভাবনাময় এক সাবলীল অভিনেত্রী হিসেবে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে।

ববি রহমানের লেখা গল্পে বর্তমান আধুনিক সময়ে এসেও সমাজের এক শ্রেনীর মানুষের চিরকালীন ধ্যান ধারণা এবং চিন্তা-চেতনার প্রতিচ্ছবি উঠে এসেছে। এক গানের অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় শ্যামল এবং তুলির। তারপর সে পরিচয় রূপ নেয় ভালোবাসায়। দুজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ ভালোবাসে ঘর বাঁধে। তুলি অনাথ মেয়ে তাই তার শাশুড়ি ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেয়নি তাকে কখনো।

তার কাছে এ সমাজে ভালোবাসার কোনো অবস্থান নেই, শুধু আছে বংশ আর পরিচয়। এই টানাপোড়েনে চলতে থাকে তুলি-শ্যামলের সংসার। শাশুড়ির মনের ভাব গোপন থাকেনা তুলির কাছে কিন্তু তুলিও একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে বলে নিজের জায়গা থেকে সবটা করার চেস্টা করে যায়। কিন্তু একসময় দাম্ভিক এবং অহংকারী মা জিতেও হেরে যায়! কিন্তু কিভাবে কি হয় আর সেটাই দেখানো হয়েছে এই ফিকশনে।

মধ্যবিত্ত পরিবারের বউ হিসেবে তুলি চরিত্রে দীঘিকে একবারও চরিত্রের বাইরের কেউ মনে হয়নি। শ্বাশুড়ির সাথে বনিবনা না হওয়া, নিজের মনের নানা বলা-অবলা কষ্ট চেপে রাখা সত্ত্বেও মুখে হাসি এনে সংসার করা তরুনীর ভূমিকায় দীঘি সোজা বাংলায় কিস্তিমাত করেছেন।

এমন চরিত্রেই আমরা সাধারণ দর্শকরা দীঘিকে দেখতে চেয়েছি যে কিনা শুধু চিত্রনায়িকা নয় একজন অভিনেত্রীও বটে। তুলি চরিত্রে তার লুক, সিম্পল সাজপোশাক, চোখের অভিব্যক্তি, ডায়লগ ডেলিভারি সব কিছুতেই যেনো অনবদ্য দীঘি।

‘শেষ চিঠি’ তে দীঘির পাশাপাশি এই সময়ের অন্যতম আলোচিত অভিনেতা ইয়াশ রোহান ও গুণী অভিনেত্রী সাবেরী আলমও তাদের সেরাটাই দিয়েছেন। এমনকি শ্বাশুড়ি চরিত্রে সাবেরী আলম অনেকদিন পর মনকাড়া পারফরম্যান্স উপহার দিলেন। আরেকটি চরিত্রে মিলি মুন্সীও নিজের ছাপ রেখেছেন।

সময়ের আলোচিত এবং গুণী রাজু রাজের সিনেমাটোগ্রাফি বরাবরের মতোই মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। কালার গ্রেডিংও ঠিকঠাক। তবে আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হয় অসাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরের। গল্প, চিত্রনাট্য এবং দৃশ্যের সাথে মিল রেখে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর টিম প্রশংসার দাবিদার। মাহতিম সাকিব ও রায়হান ইসলাম শুভ্রর গাওয়া দুটো গানই বেশ শ্রুতিমধুর।

সবমিলিয়ে দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘চরকি’ র এই স্বল্পদৈর্ঘ্য ফিকশন ভালো লাগার মতোই একটি কাজ। তবে দিনশেষে অভিনেত্রী হিসেবে দীঘির প্রত্যাবর্তন এই কাজটিকে আলাদা একটি স্বতন্ত্রতা এনে দিয়েছে পুরোপুরিভাবে। সামনের দিনে দীঘি নিজের দক্ষতা এবং ভালো চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে মনোযোগী হবেন এটাই কামনা।

Ad