অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিনিয়ত ভাঙ্গছেন সাফা কবির

আফজালুর ফেরদৌস রুমন

‘গাইতে গাইতে গায়েন’ এমন একটা প্রবাদের সাথে আমরা মোটামুটি সবাই কমবেশি পরিচিত। গানের জগতের এই প্রবাদটি কিন্তু হুবহু লক্ষ্য করা যায় আমাদের অভিনয় জগতের শিল্পীদের মাঝেও। অনেকে শিল্পী মঞ্চ থেকে অভিনয় দক্ষতা নিয়ে টেলিভিশন এবং সিনেমার মঞ্চে বাজিমাৎ করেন, আবার অনেকে কোন রকম প্রশিক্ষন না নিয়েই নিজের ভেতরের শিল্পীসত্ত্বা আমাদের সামনে হাজির করতে পারেন অনায়াসে। এই শিল্পীদের আমরা ‘গড গিফটেড’বলেও আখ্যায়িত করে থাকি অনেক সময়।

তবে এর বাইরেও কিছু শিল্পী আছেন, যারা ঐশ্বরিক প্রতিভার অধিকারী না হলেও, নিজের পরিশ্রম, মেধা, চেস্টা এবং ভালো কিছু করার প্রত্যয় থেকে সময়ের সাথে সাথে নিজেদের ভিন্ন একটা জায়গায় নিয়ে যান। নিঃসন্দেহে সাফা কবির এই সময়ের এমন একজন অভিনেত্রী।

টেলিভিশনে সাফা কবির প্রথমে নজরে আসেন ‘@18 অল টাইম দৌড়ের উপর’ নাটকের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে বেশ কিছু নাটকে কাজ করে পরিচিতি পেলেও অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার যুদ্ধটা করে গেছেন বরাবরই। এরপরে আশফাক নিপুণের ‘আগন্তুক’ ফিকশনে তার অভিনয় মনে দাগ কাটলেও আবারো যেনো গতানুগতিক ধারায় হারিয়ে যান তিনি।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ভিন্নধর্মী কাজে তাকে দেখা গেছে বেশ ব্যতিক্রমী চরিত্রে। মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘চিরকাল’, আবু হায়াত মাহমুদের ‘নয়ন-তারার গল্পগাথা’, সামিউর রহমানের ‘কুহেলিকা’ তাকে অভিনেত্রী হিসেবে নতুনভাবে আমাদের সামনে এনেছে। শঙ্খ দাসগুপ্তর ওয়েব সিরিজ ‘বলি’তে আয়েশা চরিত্রে তার অভিনয় দক্ষতা দেখে মোটামুটি সবাই স্বীকার করে নিয়েছেন যে, সাফা কবির নিজেকে প্রতিনিয়ত ভাঙ্গছেন। গত ভালোবাসা দিবসে ’ফাগুন থেকে ফাগুনে’ ফিকশনেও তিনি তার অভিনয় দক্ষতা এবং স্ক্রিন প্রেজেন্স দিয়ে মুগ্ধ করেছেন আমাদের। আর এই লিস্টের সর্বশেষ সংযোজন রায়হান রাফির ওয়েবফিল্ম ‘নিঃশ্বাস’।

একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে সুমাইয়ার চরিত্রে সাফা কবির যতক্ষণ স্ক্রিনে ছিলেন, চরিত্রের সাথে তিনি জাস্টিস করেছেন এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই ওয়েবফিল্ম নিয়ে নানা ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও অভিনয়ের ক্যাটাগরিতে যে কয়জন উতরে গেছেন নিজেদের সেরাটা দেবার চেষ্টা থেকে, তাদের মধ্যে সাফা অন্যতম। এক বখাটের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া তরুণী সুমাইয়া হিসেবে তার লুক, কস্টিউম, বডি ল্যাংগুয়েজ গল্পে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। একটি ঘটনার কারনে শেষের দিকে হাসপাতালের অল্পকিছু দৃশ্যে তার অভিনয় অনেকেরই ভালো লেগেছে।

মঞ্চে বা কোনো ইন্সটিটিউটে অভিনয় সম্পর্কে কোনো ট্রেনিং না থাকার পরেও সাফা কবির এই সময়ের বদলে যাওয়া দর্শকদের চাহিদা এবং নিজের কাছে সচ্ছ থাকার কারনে ব্যতিক্রমী চরিত্রে নিজেকে ভাঙ্গার যে চেস্টায় নিয়োজিত তিনি সেটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।

সামনের দিনে ভালো গল্পকার এবং গুণী নির্মাতাদের সাথে কাজের দরুন সাফা কবির একজন আস্থাশীল অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে নিয়ে যাবেন এক স্বতন্ত্র জায়গায় এটাই কামনা।

Ad