দর্শকদের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে ‘টাই হারুন’ ওরফে দীপু ইমাম

আফজালুর ফেরদৌস রুমন 

‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমাটি যে কয়টা কারনে সাধারণ দর্শকদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে তার অন্যতম একটি সারপ্রাইজিং দিক হচ্ছে ‘টাই হারুন’। দীপু ইমামের অনবদ্য অভিনয় এই ক্যারেক্টারটিকে যেমন প্রানবন্ত করেছে তেমনি পুরো সিনেমায় ভাড়াঁমোহীন কমিক রিলিফ এনে দিয়েছে নিঃসন্দেহে।

একটা সময় আমাদের দেশের বানিজ্যিক সিনেমায় একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে কমেডি চরিত্রের অভিনেতা অভিনেত্রীদের দেখা যেতো। বিশেষ করে টেলি সামাদ, দিলদার, অমল বোস হয়ে আফজাল শরীফের মতো অনবদ্য অভিনেতাদের আমরা দেখেছি বিভিন্ন সিনেমায় নিজেদের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে মুগ্ধতা ছড়াতে। আবার এটিএম শামসুজ্জামান বা হুমায়ুন ফরিদীর মতো জাঁদরেল অভিনেতাদেরকেও খল চরিত্রের পাশপাশি অনেক সিনেমাতে কমেডি চরিত্রে স্ক্রিনে অসাধারণ পারফরম্যান্স উপহার দিতে দেখা গেছে। এইসব বরেণ্য অভিনেতাদের পাশে দীপু ইমামের নাম নেয়ার মতো অবস্থা বা সময় কোনোটাই এখনো আসেনি একথা যেমন সত্য তেমনি সাম্প্রতিক সময়ে যেখানে কমেডি চরিত্র গুলো হারিয়েই যাচ্ছে আমাদের গল্প বা চিত্রনাট্য থেকে সেখানে ‘টাই হারুন’ চরিত্র দিয়ে দীপু ইমাম যে আবারো সেই ধারাটা একটু জিইয়ে রাখলেন সেটাও প্রচন্ড সত্য। এরজন্য লেখক নাজিম উদ দৌলা এবং পরিচালক দীপংকর দীপনকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। একটি জলদস্যু নিধনের অভিযানের মতো এতো বিশাল ক্যানভাসের সিনেমায় অল্প সময়ের উপস্থিতিতে দীপু ইমাম যেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করার পাশপাশি দর্শক হৃদয়ে ছাপ রেখে গেলেন সেটাও প্রশংসনীয়।

‘লাইফ ইজ বিউটিফুল, মাই ওয়াইফ ইজ বিউটি, অ্যান্ড আই এম ফুল’ বা ‘ইউ আর সো কাইন্ড, লাভ ইস ব্লাইন্ড’ এর মতো সংলাপ যে পরিমান হাস্যকর ভঙ্গিতে পর্দায় উপস্থাপন করেছেন দীপু ইমাম তা এক কথায় অনবদ্য। তার বডি ল্যাংগুয়েজ, সংলাপ বলার সময়কার অঙ্গ ভঙ্গি এবং ধরণ সবকিছুই ছিলো পারফেক্ট। দীপু ইমাম সম্পর্কে এককথায় বলতে হয় – ‘তিনি সময় পেয়েছেন কম, কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছেন নিজের প্রতিভার দম’।

অভিনেতা হিসেবে দীপু ইমামের শুরুটা ২০০৭ সালে গোলাম সোহরাব দোদুলের সুলতানা বিবিয়ানা নাটকের মধ্য দিয়ে। এর পরে শান্ত কুঠির, অলরাউন্ডার, অদ্ভুত, স্বপ্ন ঘুড়ি, অদ্ভুতুড়ে বইঘর, ওয়েব সিরিজ বিলাপ এর মতো বেশকিছু ফিকশনে কাজ করেছেন তিনি। বড় পর্দায় আগমন দীপংকর দীপনের পরিচালনায় ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমার মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে তাকে দেখা গেছে সানী আনোয়ারের ‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমাতেও। তবে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ তাকে সাধারণ দর্শকদের কাছে পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এমনকি এখন গুগলে এখন ‘টাই হারুন’ লিখে সার্চ করলে দীপু ইমাম এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন সেটা সামনে আসে। একজন অভিনেতার জন্য এটাও অনেক বড় একটা প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে।

সিনেমা রিলিজের পর ‘টাই হারুন’ চরিত্রটির এই জনপ্রিয়তা কেমন উপভোগ করছেন জানতে চাইলে দীপু ইমাম জানান- অবশ্যই ভালো লাগছে। আমার অভিনয় দর্শকদের ভালো লেগেছে এটা অনেক বড় একটা প্রাপ্তি আমার কাছে। তবে এর বেশিরভাগ ক্রেডিট পরিচালক দীপংকর দীপনের। তার হাত ধরেই আমার সিনেমায় আসা এবং তার সিনেমা দিয়েই আমার পরিচিতি। এছাড়া র‍্যাবের রাইসুল ভাই আমাকে শ্যুটিং এর সময় বেশ সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া পুরো ইউনিটের কাছেই আমি কৃতজ্ঞ। প্রত্যেকের সহযোগিতা এবং সদিচ্ছার জোরেই এই সিনেমাটি দর্শকদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে।

বলা হয়ে থাকে- অভিনয় দক্ষতা দিয়ে কাউকে কাদাঁনো সহজ কিন্তু হাসানো অনেক কঠিন। এবং কোনো রকম ভাঁড়ামি বা অশালীন শোনায় এমন সংলাপ ব্যবহার না করে কমিক রিলিফ দেয়াটা আরো বেশি কঠিন। সেই কঠিন কাজটাই যুগে যুগে সিনেমার পর্দায় করে আসছেন কমেডি চরিত্রের অভিনয় শিল্পীরা। এখন স্ক্রিপ্টে তাদের আধিপত্য বা গুরুত্ব কম রাখা হলেও সামনের দিনে নির্মল বিনোদনের অংশ হিসেবে দীপু ইমামের মতো শক্তিশালী এবং প্রতিভাবান অভিনেতাদের নিয়ে নতুন করে ভাববেন আমাদের গল্পকার, সংলাপ রচয়িতা ও নির্মাতারা সেটাই কাম্য। সামনে ‘ব্ল্যাক ওয়ার’, ‘ঢাকা-২০৪০’, ‘গিরগিটি’, ‘ডি’ নামের সিনেমা গুলোতেও দেখা যাবে দীপু ইমামকে। শুভ কামনা রইলো ‘টাই হারুন’ চরিত্রটি দিয়ে আমাদের মনে জায়গা করে নেয়া এই পরিশ্রমী অভিনেতার জন্য।

Ad