মা-মেয়ের হাত ধরে বাংলাদেশের গ্রামি যাত্রা

আফজালুর ফেরদৌস রুমন 

১৯৯১ সালে সংগীতের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন আয়োজন গ্র্যামিতে চালু হয় বেস্ট ওয়ার্ল্ড মিউজিক অ্যালবাম শাখাটি। সেটাই এখন সময়ের পরিক্রমায় ‘বেস্ট গ্লোবাল মিউজিক অ্যালবাম’ নামে প্রদান করা হচ্ছে। তবে বাংলাভাষী বাংলাদেশীদের জন্য এবারের গ্রামি আয়োজন নিঃসন্দেহে আনন্দ এবং গর্বের একটি বিষয় হিসেবে ধরা দিয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী এই গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডসের ৬৫তম আসরের মনোনয়ন তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের দুই সংগীতশিল্পী আরমীন মুসা এবং তার মা দেশের অন্যতম প্রথিতযশা শিল্পী ড. নাশিদ কামাল। বেস্ট গ্লোবাল মিউজিক অ্যালবাম শাখায় মনোনীত বার্কলে ইন্ডিয়ান অনসাম্বলের ‘শুরুয়াত’ নামক এ্যালবামের ‘জাগো পিয়া’ শিরোনামের গানের জন্য এই এই স্বীকৃতি পেলেন সংগীত নিয়ে মেতে থাকা এই মা-মেয়ে জুটি। গ্র্যামির ইতিহাসে প্রথমবার কোনো বাংলাদেশি শিল্পী ও গীতিকারের গান মনোনয়ন পেলো। আগামী বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডসের জমকালো আয়োজনে অংশ নেবেন তারা।

উল্লেখ্য ‘শুরুয়াত’ অ্যালবামে রয়েছে মোট ১০টি গান। বেশিরভাগই পুরনো হলেও চারটি মৌলিক গানের মধ্যে ‘জাগো পিয়া’ একটি। এর কথা লিখেছেন প্রখ্যাত নজরুল সংগীতশিল্পী নাশিদ কামাল। নিজের সুরে এতে কণ্ঠ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলে কলেজ অব মিউজিকের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আরমীন মুসা। এবার একই শাখায় আরও মনোনয়ন পেয়েছে নাইজেরিয়ার গায়ক বার্না বয়ের ‘লাভ, দামিনি’, বেনিনের গায়িকা অ্যাঞ্জেলিক কিজো ও লেবানিজ যন্ত্রসংগীতশিল্পী ইব্রাহিম মালুফের ‘কুইন অব শিবা’, পণ্ডিত রবিশঙ্করের মেয়ে আনুশকা শঙ্কর, ডাচ সংগীত দল মেট্রোপোল অর্কেস্ট ও ব্রিটিশ সংগীত পরিচালক জুলস বাকলি ও অস্ট্রিয়ান যন্ত্রসংগীতশিল্পী মানু ডেলাগোর ‘বিটউইন আস… লাইভ’ এবং জাপানি সংগীতশিল্পী মাসা তাকুমির ‘সাকুরা’।

বার্কলি ইন্ডিয়ান অ্যাসেম্বলের প্রথম বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে বিশ্বভারতীর প্রশিক্ষণার্থী আরমীন মুসা ‘ভ্রমর কোইয়ো গিয়া’, ‘লোনা দেয়াল’সহ বেশ কয়েকটি গানের জন্য বোদ্ধা শ্রোতা এবং সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করেন। তিনি গানের দল ‘ঘাসফড়িং কয়্যার’-এর প্রতিষ্ঠাতা। অন্যদিকে বাংলা লোকগীতির বিখ্যাত শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদের বড় নাতনি নাশিদ কামাল দক্ষতার সঙ্গে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সংগীত দুনিয়ায় বিচরণ করছেন। তিনি বাংলা লোকগান ও নজরুল সংগীতের সমাদৃত একজন গবেষক ও পরিবেশক। একজন ক্লাসিকাল ও সেমি-ক্লাসিকাল বাংলা সংগীতশিল্পী নাশিদ কামাল উর্দু, জাপানি, চীনা, রুমানিয়ান ও তুর্কিসহ আরও অনেক বিদেশি ভাষায় গান পরিবেশন করেছেন। এ ছাড়াও তিনি একজন শিক্ষাবিদ, জনসংখ্যাবিষয়ক গবেষক ও লেখক।

জুলাই মাসে প্রকাশিত হয় ‘শুরুয়াত’। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংগীত পরিবেশন করে কাটানো বার্কলে ইন্ডিয়ান অনসাম্বলের শিল্পীদের প্রথম অ্যালবাম এটি। এতে ভারতের তবলাবাদক জাকির হোসেন, সুরকার-গায়ক শঙ্কর মহাদেবা, কন্নড় কণ্ঠশিল্পী বিজয় প্রকাশ, গায়িকা শ্রেয়া ঘোষালের কাজও আছে। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বসংগীতের এমন আলোচিত এবং প্রশংসিত শিল্পীদের সাথে একই লিস্টে বাংলাদেশের এই দুই শিল্পীর নাম যুক্ত হওয়াটাই আমাদের সাংস্কৃতিক জগতে এক আলোড়ন তুলেছে যা গর্ব এবং আনন্দ নিয়ে এসেছে সকলের জন্যই।

Ad