এক দশকের অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন অভিনেতা নাঈম

আফজালুর ফেরদৌস রুমন 

টেলিভিশনের আলোচিত এবং পরিচিত মুখ এফ এস নাঈম। এক দশক ধরে আমাদের বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনেতা হিসেবে আলো ছড়িয়ে যাওয়া এই তরুন এবং দক্ষ অভিনেতা সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন সৈয়দ আহমেদ শাওকি’র ওয়েব সিরিজ ‘কারাগার’ এ ডিবি অফিসার আশফাক চরিত্রে সুনিপুণ অভিনয়ের ছাপ রাখার কারনে। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় এটা বলতে বা লিখতে বাঁধা নেই যে, এই ‘কারাগার’ সিরিজের মাধ্যমেই যেনো অভিনেতা হিসেবে নিজের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করলেন এই পরিমিত এবং দক্ষ অভিনেতা। আজ তার জন্মদিনে এই বিশেষ ফিচার।

খিজির হায়াত খানের পরিচালনায় আলোচিত ‘জাগো’ সিনেমায় কাজ করার পরে প্রফেশনালি মিডিয়াতে কাজ শুরু করেন নাঈম। তারপর ক্যালেন্ডারের হিসেবে টানা দশ বছর কাজ করেছেন তিনি টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে। বেশকিছু আলোচিত এবং দর্শকপ্রিয় নাটকে অভিনয় করছেন, প্রশংসা পেয়েছেন, পেয়েছেন জনপ্রিয়তা এবং পরিচিতি। ছুয়ে যায় বসন্ত, অক্ষয় কোম্পানির জুতা, বন্ধুত্ব ভালোবাসা ইত্যাদি, সাউন্ড অব সাইলেন্স, অতঃপর কৃষ্ণচূড়া, পলাশ রাঙা ঘোর সহ বেশকিছু জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তার সাথে সাথে পরিচিতিও পান নাঈম। তবে আক্ষরিক অর্থে ‘কারাগার’ সিরিজের মধ্য দিয়ে পাওয়া প্রশংসা ও আলোচনা অভিনেতা হিসেবে নাঈমের জীবনে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা হিসেবে হাজির হয়েছে। একজন অভিনেতা হিসেবে এক যুগের পরিশ্রম, অভিজ্ঞতা, এবং নিজেকে ভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয়ই নাঈমকে নিয়ে এসেছে আজকের অবস্থানে।

২০২০ সালে করোনার প্রভাবে যখন সবকিছু স্থবির তখন স্বাভাবিকভাবেই আমরা যেনো হঠাৎ করে নিজেদের নিয়ে একটু ভাবার, নতুন ভাবে চিন্তা করার সময় পাই। আর সেই সময়টায় নাঈম নিজের ফিটনেসের দিকে লক্ষ্য দেবার পাশাপাশি নিজের জ্ঞান এবং জানার পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে পড়া শুরু করেন বিখ্যাত নানা বই, অভিনয়ের দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে দেখতে থাকেন কালজয়ী বিশ্বের নানা প্রান্তের সিনেমা। একটা সময় করোনাকাল পেরিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় যখন পদার্পন করি আমরা তখন অভিনেতা এফ এস নাঈমের বডি ট্র‍্যান্সফরমেশন দেখে চমকে যাননি এমন কাউকে খুজে পাওয়া যাবেনা।

তবে সেই ফিটনেস একপাশে সরিয়ে আবারো ওয়েট বাড়াতে হয় ‘কারগার’ এর আশফাক চরিত্রটি ঠিকঠাক ভাবে স্ক্রিনে ফুটিয়ে তোলার জন্য। জানা যায় প্রায় ১৫ কেজি ওজন বাড়াতে হয়েছে নাঈমকে এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। ওজন বাড়ানো, রিহার্সাল এবং পরিচালকের সাথে যথোপযুক্ত কমিউনিকেশন আশফাক চরিত্রটি সেলুলয়েডে বিশ্বাসযোগ্যতা এনে দিয়েছে বলে নিজেই জানিয়েছেন নাঈম। তিনি আরো জানান, ‘আমার পরিচালক শাওকি, সালেহ সোবহান অনীম, নেয়ামতউল্লাহ মাসুম এবং অভিনেতা ইন্তেখাব দিনার এই চারজন মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ এই চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য যে সাপোর্ট পেয়েছি সেটার জন্য।’

নিজের প্রথম আন্তজার্তিক প্ল্যাটফর্মে কাজ। তার উপরে যে সিরিজে একজন গুণী এবং প্রশংসিত চঞ্চল চৌধুরী উপস্থিত, আছেন কিংবদন্তি আফজাল হোসেন, একই ফ্রেমে বেশিরভাগ শটের সহশিল্পী হিসেবে আছেন শক্তিশালী অভিনেতা ইন্তেখাব দিনার সেখানে নাঈমও নজর কেড়েছেন আশফাক রূপে এটাও কম প্রাপ্তির নয়। আবার একে আজাদ সেতু, আব্দুল্লাহ আল সেন্টু, পার্থ শেখ এর মতো নতুন দিনের সম্ভাবনাময় নামের সাথেও পাল্লা দিতে হয়েছে তাকে বেশ ভালোভাবেই। একজন অভিনেতা হিসেবে সেই সুত্রে দ্বিতীয় ইনিংস বাউন্ডারি হাকিয়েই শুরু করলেন নাঈম। সামনের দিনেও সংখ্যায় অল্প হোক তবে মানসম্মত কাজে নিজের দক্ষতা আর প্রতিভার জানান দেয়া যায় এমন কাজেই মনোযোগী হবেন এই পরিশ্রমী তরুন এই কামনা রইলো। সাথে ‘কারাগার’ এর দ্বিতীয় সিজনেও তিনি তার অভিনয় প্রতিভা দিয়ে এমন মুগ্ধতাই ছড়াবেন বলে আশা করা যায়।

গ্রামীনফোনের ‘বন্ধু’ বিজ্ঞাপন নাঈমের ক্যারিয়ারের অন্যতম একটি প্রাপ্তি। সম্প্রতি তাকে আবারো দেখা গেছে ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপ উপলক্ষে ক্লেমনের বিজ্ঞাপনে। এই কাজটিও বেশ আলোচনায় এসেছে। সামনে দেশের অন্যতম আলোচিত নির্মাতা অরুণ চৌধুরীর পরিচালনায় সরকারী অনুদানের সিনেমা ‘জলে জ্বলে তারা’তে দেখা যাবে নাঈমকে। এছড়াও বেশকিছু ওয়েব ফিকশনে কাজ চলছে পুরোদমে। তবে অফিশিয়াল এনাউন্সমেন্ট না আসা পর্যন্ত সেসব নিয়ে এখনই ভক্তদের কিছু জানানো যাচ্ছে না বলে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন এই বিনয়ী মানুষটি।

ব্যক্তিজীবনে অভিনেত্রী নাদিয়াকে নিয়ে সুখেই সংসার করছেন অভিনেতা নাঈম। অভিনয়কে ধ্যান-জ্ঞান হিসেবে অন্তরে ধারণ করে প্রতিনিয়ত ব্যতিক্রমী চরিত্রে ভিন্নধর্মী ফিকশন নিয়ে হাজির হবার প্রচেষ্টা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন নাঈম। এক দশকের ক্যারিয়ারে নিজের অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধি সাথে করেই আগামী দিনে অভিনেতা হিসেবে নিজেকে এক স্বতন্ত্র জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করবেন নাঈম সেই প্রত্যাশা রইলো।

 

Ad