আমাদের একজন শক্তিশালী অভিনেত্রী ‘মম’ আছেন

আফজালুর ফেরদৌস রুমন 

ক্যালেন্ডারের পাতার হিসাবে জাকিয়া বারী মম’র মিডিয়াতে আগমন ঘটেছিলো ‘লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ২০০৬ সালে। এরপরে ২০০৭ সালে তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অভিনয় জগতে অভিনেত্রী মম’র যাত্রা শুরু হয়েছিলো। প্রথম চলচ্চিত্রে জরি চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় দিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে রীতিমতো চমকে দেয়া মম দেখতে দেখতে এই মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে পার করছেন ১৬ টি বছর। একটানা কাজ করে যাচ্ছেন টেলিভিশন, ওটিটি এবং ভালো গল্পের সিনেমায়। একজন অভিনেত্রী হিসেবে এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখাও বিশাল প্রাপ্তি।

প্রথম সিনেমা ‘দারুচিনি দ্বীপ’ এর জনপ্রিয় চরিত্র জরি থেকে সর্বশেষ রিলিজ পাওয়া ‘ওরা ৭ জন’ সিনেমার ডাক্তার অপর্ণা সেন এই দীর্ঘ যাত্রায় কখনো সফলতা এসেছে আবার কখনো প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির মেলবন্ধন ঘটেনি। কিন্তু অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম আমাদের মুগ্ধ করতে ভুল করেননি কখনোই। যারা টুকটাক বিনোদন ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে খোঁজ খবর রাখেন তাদের কাছে অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মমকে নতুন করে চেনানো বা তাকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলা বা লেখার কোন প্রয়োজনীয়তা নাই। এই সময়ে এসেও আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে এখনো যেকয়জন শক্তিশালী অভিনেত্রী আছেন তাদের লিস্টে মম’র থাকবে উপরের দিকে….

‘ওরা ৭ জন’ সিনেমার ভারতীয় ডাক্তার অপর্ণা সেন নির্ভীক, সাহসী, খানিকটা বিদ্রোহী আবার একই সাথে প্রচন্ড ভালোবাসায় আশেপাশের মানুষকে আগলে রাখা একটি চরিত্র। বাস্তব জীবনে দেশের অন্যতম আলোচিত এবং প্রশংসিত অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম কেমন সেটা তার কাছের মানুষেরা ভালো বলতে পারবেন তবে প্রতিটি ফিকশনেই ব্যতিক্রমী চরিত্রে মম’র সপ্রতিভ উপস্থিতি জানান দেন তিনি হার না মানা মনোভাব নিয়েই ইন্ডাস্ট্রিতে স্বতন্ত্র জায়গায় নিয়ে গেছেন নিজেকে।

ক্যারিয়ারে ‘দারুচিনি দ্বীপ’র মতো উপন্যাস ভিত্তিক সিনেমা যেমন করেছেন মম, তেমনি কখনো দুই বোনের গল্পের ‘আলতাবানু’ আবার কখনো দুইটা সময়ের গল্পের ‘স্ফুলিঙ্গ’ সিনেমাতেও আলো ছড়িয়েছেন। ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ এর মতো রোমান্টিক সিনেমায় যেমন দেখা দিয়েছেন মম তেমনি ‘দহন’, ‘স্বপ্নের ঘর’ এবং ‘আগামীকাল’ এর মতো ভিন্নধর্মী গল্পের সিনেমাতেও নিজের প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন।

একজন প্রকৃত শিল্পীর মাঝে সহনশীলতা, মেধা, পরিশ্রম, ত্যাগ এবং ধৈর্য্যশীল মনোভাব থাকা যেমন দরকার তেমনি শিল্পের প্রতি প্রেম, অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য্য এবং ভালো কিছুকে খোলা মনে এপ্রিশিয়েট করার মতো গুণাবলীও থাকা খুব দরকার। জাকিয়া বারী মম প্রতিটি উপকরণ ধারণ করেন নিজের মাঝে যার প্রমান মিলে অফস্ক্রিন এবং অনস্ক্রিনে।

ব্যক্তিজীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বয়সের সাথে সাথে অভিজ্ঞতা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে ভালো গল্পের ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয় করার প্রত্যাশা। চলচ্চিত্র দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে আগমন ঘটলেও নাটকে একটা সময় জনপ্রিয়তার শিখরে নিয়ে যান নিজেকে। অসংখ্য জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত নাটকে তার অভিনয় আমাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে। তবে ওটিটিতেও মম নিজের দক্ষতা এবং প্রতিভার জানান দিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক আলোচনায় আসা ফিকশন গুলোর মাধ্যমে। কন্টাক্ট, বিলাপ, মহানগর, রিফিউজি, ১৯শে এপ্রিল প্রতিটি ফিকশনেই একজন জাত অভিনেত্রীর মতো পারফরম্যান্স দিয়েই যাচ্ছেন জাকিয়া বারী মম। বলতে বা লিখতে দ্বিধা নাই যে, অভিনেত্রী হিসেবে জাকিয়া বারী মম আমাদের দেশের সম্পদ। সামনের দিনে এভাবেই তার অভিনয় দক্ষতা আমাদের মুগ্ধ করেই যাবে এটাই কামনা।

 

 

Ad