চলচ্চিত্রের সোনালী দিন ফেরানোর মিশনের যোদ্ধা নির্মাতা সানী সানোয়ার

আফজালুর ফেরদৌস রুমন 

বাংলাদেশে সাধারণত অ্যাকশন ধারার চলচ্চিত্র হিসেবে যে ধরনের সিনেমা আমরা দেখে আসছিলাম সেই ধারাতে কিছুটা ভিন্নতা এবং ব্যতিক্রমী ধারার দেখা পেয়েছিলাম দেশের প্রথম কপ থ্রিলার ঘরানার সিনেমা ‘ঢাকা অ্যাটাক’ এর মধ্য দিয়ে। এই সিনেমা দিয়েই প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করে সবাইকে চমকে দেন সানী সানোয়ার। ২০১৭ সালে রিলিজ পাওয়া ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমার গল্প ও চিত্রনাট্য দিয়ে যে সফলতা এবং প্রশংসা অর্জন করেছিলেন তিনি তা এককথায় অনবদ্য। একই জনরার ‘মিশন এক্সট্রিম’ এবং ‘ব্ল্যাক ওয়ার- মিশন এক্সট্রিম-২’ নামের ব্যাক টু ব্যাক দুটি কপ থ্রিলার ঘরানার সিনেমার মধ্য দিয়ে দর্শকদের কাছে নির্মাতা সানী সানোয়ার এই সময়ের অন্যতম পরিচিত এবং আলোচিত নাম।

বাংলাদেশে নির্মিত অ্যাকশন ঘরানার প্রেক্ষাপটে সানী সানোয়ার নিঃসন্দেহে অভিনবত্ব এবং ব্যতিক্রমী একটি দিক উন্মোচন করেছেন সেটা তার নির্মিত দুটি সিনেমা যারা দেখেছেন তারা স্বীকার করবেন অবলীলায়। এমনটা মোটেও নয় যে এর আগে আমাদের দেশীয় সিনেমায় পুলিশ অ্যাকশন ফিল্ম বানানো হয়নি তবে গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে কপ থ্রিলার সিনেমা আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এক নতুন ধারার সূচনা হয়েছে সেটাও বলা যায় নিঃসন্দেহে।

পাশাপাশি আমাদের দেশে সিক্যুয়েল সিনেমা যেখানে হয়ইনা সেখানে সানী সানোয়ার তার পরিচালনার সিক্যুয়েল ভিত্তিক সিনেমা বানিয়ে আমাদের দেশীয় চলচ্চিত্রে একটি নতুন সংযোজনও ঘটিয়েছেন। সানী সানোয়ার এবং ফয়সাল আহমেদ এই নির্মাতা জুটির পরিচালনায় ‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমাটি যারাই দেখেছেন তারাই এর দ্বিতীয় কিস্তি ‘ব্ল্যাক ওয়ার- মিশন এক্সট্রিম-২’ সিনেমাটি নিয়ে বেশ আগ্রহ নিয়েই অপেক্ষা করছিলেন। দুই বছরের বিরতি দিয়ে অবশেষে সেই দ্বিতীয় কিস্তি রিলিজ পাবার পরে পুরো গল্পটি যেভাবে সমাপ্তি টানা হয়েছে সেটি ঢাকাই সিনেমার দর্শকদের কাছে একটি অন্যরকম ভিজ্যুয়াল ট্রিটমেন্ট হিসেবেই গন্য হয়েছে।

 

পেশাগত জীবনে সানী সানোয়ার বাংলাদেশ পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের পুলিশ সুপার হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন একনিষ্ঠভাবে। প্রত্যক্ষ ভাবে এই পেশায় জড়িত থাকার কল্যানে এই ডিপার্টমেন্ট এবং এটির সদস্যদের কার্যকলাপ সম্পর্কে খুটিনাটি সবকিছুই তিনি অন্য অনেকের চেয়ে বেশ ভালোভাবেই জানেন যা তার নির্মিত সিনেমাগুলি দেখলেই লক্ষ্য করা যায় বেশ ভালোভাবেই।

সিনেমা আমাদের সমাজের প্রতিফলন বলেই মনে করা হতো একটা সময়। এখন এই প্রতিফলন কতোটা সেলুলয়েডে বাস্তবতার নিরিখে ঠিকঠাক ভাবে উঠে আসে সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ হলেও সানী সানোয়ারের সিনেমাতে সবচেয়ে ভালো লাগার অন্যতম একটি দিক হচ্ছে ইসলাম ধর্মকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ সহকারে সেলুলয়েডে উপস্থাপন করা। বিগ বাজেট, বিশাল ক্যানভাসের সাথে সময়োপযোগী কনটেন্ট নিয়ে এমন ব্যতিক্রমী সিক্যুয়েল ঘরানার সিনেমা উপহার দিয়ে সানী সানোয়ার নির্মাতা হিসেবে নিজের স্বতন্ত্রতার জানান দিয়েছেন বেশ ভালোভাবেই।

হল সংকট, মধ্যবিত্তদের প্রেক্ষাগৃহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া, হলের পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ, শিল্পী সংকট সহ নানা সমস্যায় কঠিন সময় পার করা এই ইন্ডাস্ট্রিতে যেখানে নিয়মিতভাবে আমাদের নির্মাতারা সিনেমা নির্মান থেকে সরে এসেছে সেখানে সানী সানোয়ার বাংলাদেশ পুলিশের একজন সফল কর্মকর্তা হিসেবে নিশ্চিন্ত এবং সফল ক্যারিয়ার থাকার পরে চিত্রপরিচালক হিসেবে এই পেশায় নিজেকে যুক্ত করেছেন সিনেমা এবং সিনেমার মাধ্যমে সাধারণ দর্শকদের আমাদের সমাজব্যবস্থা এবং মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে বার্তা দেবার প্রয়াস থেকে।

ধুকতে থাকা এই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে সানী সানোয়ারের মতো শিক্ষিত এবং বিবেকবান ব্যক্তিদের এমন পদচারণা সামনের দিনে সুবাতাসের হাওয়া বইয়ে দিবে এই সিনেমা জগতে সেটি বলার অপেক্ষা রাখেনা। সিনেমার পাশাপাশি ওটিটিতেও নিজের ছাপ রেখে যাচ্ছেন সানী সানোয়ার। এর আগে ‘বিলাপ’ নামক একটি ওয়েব সিরিজ বানিয়ে আলোচনায় আসলেও এবার ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইতে রিলিজ পেতে যাচ্ছে সানী সানোয়ার এবং ফায়সাল আহমেদের ওয়েব সিরিজ ‘মিশন হান্টডাউন’। এছাড়া ‘শেরখান’ নামক একটি সিনেমা নিয়েও আলোচনায় এই গুণী নির্মাতা। যদিও এই সিনেমাটি নিয়ে এখন বেশ সংশয় দেখা যাচ্ছে তবে আশাকরি শিগগিরই সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিশাল ক্যানভাসের এই সিনেমা নির্মান করতে সক্ষম হবেন সানী সানোয়ার। শুভ কামনা রইলো এই দক্ষ এবং আলোচিত নির্মাতা সানী সানোয়ারের জন্য….

Ad