ঈদের সিনেমা দিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে কি আমাদের ঢাকাই চলচ্চিত্র!!

আফজালুর ফেরদৌস রুমন 

বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলেও আমাদের দেশে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে অতোটা আলোচনা হয়না যতোটা হওয়া উচিত। বিশেষ করে টেলিভিশন নাটক দিয়ে দর্শকদের মাঝে বিগত এক দশকে যে পরিমান আলোচনা বা হাইপ দেখা গেছে দুঃখজনক হলেও সত্য সিনেমা নিয়ে তা দেখা যায়নি। ব্যতিক্রম গত বছরের সুপার ডুপার হিট ‘পরাণ’ এবং ‘হাওয়া’। এই দুই সিনেমার ব্যবসায়িক সফলতা প্রমাণ করেছে দর্শক এখনো ভালো কনটেন্ট চায়, যা তাদের প্রেক্ষাগৃহে ফিরিয়ে আনতে পারে। এবারের ঈদেও নানা কারনে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে একটি ভালো এবং পজিটিভ হাইপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে যা আদতে সিনেমার জন্য সুখবর নিয়ে আসতে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে….

এই মূহুর্তে কনটেন্ট এবং মেকিংয়ে ব্যতিক্রমতা দিয়ে আলোচনায় আছে আমাদের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। দর্শকদের কাছে তো বটেই প্রযোজক, নির্মাতা এবং শিল্পীদের কাছেও নাটকের চেয়ে এখন ওটিটি কনটেন্ট নিয়ে আগ্রহ এবং আলোচনা দুটোই বেশি। এমতাবস্থায় এবার ঈদে মুক্তি পেতে যাওয়া সিনেমাগুলো নিয়ে বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে দর্শকদের মাঝে যা ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাড়াতে সাহায্য করবে বলেই মনে হচ্ছে।

হিমেল আশরাফের ‘প্রিয়তমা’, রায়হান রাফী’র ‘সুড়ঙ্গ’, চয়নিকা চৌধুরীর ‘প্রহেলিকা’, সৈকত নাসিরের ‘ক্যাসিনো’ এবং বন্ধন বিশ্বাসের ‘লাল শাড়ী’ রিলিজ পাচ্ছে এবারের ঈদে। কমবেশি সবগুলো সিনেমা নিয়ে আলোচনা থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুপারস্টার শাকিব খানের ‘প্রিয়তমা’ এবং প্রথমবার বড় পর্দায় অভিষেক হতে যাওয়া আফরান নিশোর ‘সুড়ঙ্গ’ নিয়েই হাইপ বা আলোচনা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অন্যদিকে দীর্ঘ আট বছর পরে সিনেমায় ফেরা মাহফুজ আহমেদ এবং তার সাথে বুবলীর জুটি নিয়ে ‘প্রহেলিকা’ ও আছে আলোচনায়। তবে একটু কম সময় নিয়ে হঠাৎ করে ঈদের সিনেমা মুক্তির রেসে নাম লেখানো নিরব-বুবলী জুটির ‘ক্যাসিনো’ সিনেমাটি অল্প সময়েই আলোচনায় এসেছে। অন্যদিকে সাইমন-অপু জুটির ‘লাল শাড়ী’র প্রমোশন এবং প্রচারনায় আরো বেশি নজর রাখা উচিত ছিলো বলে ব্যক্তিগত ভাবে মনে হচ্ছে….

ঈদের সিনেমার লাইনআপ যেমন আকর্ষনীয় তেমনি ঈদের পরেও বেশকিছু বিগ বাজেটের সিনেমা রিলিজ পেতে যাচ্ছে যা ইন্ডাস্ট্রির পালে সুবাতাসের হাওয়া নিয়ে আসার সামর্থ্য রাখে। দীপংকর দীপন পরিচালিত সাইবার ক্রাইম থ্রিলার ‘অন্তর্জাল’, আসিফ আকবর পরিচালিত ‘এম আর নাইন’ নিঃসন্দেহে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে বানিজ্যিক সিনেমা হিসেবে যার যার স্থান থেকে একটি স্বতন্ত্র জায়গায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে এমনটাই কামনা।

ভালো গল্প, চিত্রনাট্য, সংলাপের পাশপাশি শিল্পীদের শক্তিশালী অভিনয় একটি সিনেমাকে দর্শকদের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে। এই সময়ে এসে নির্মানে ব্যতিক্রমতা এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার একটি সিনেমাকে ডিফারেন্ট লেভেলে নিয়ে যেতে সক্ষম। পাশাপাশি প্রমোশন এবং প্রচারণাতেও নির্মাতা এবং প্রযোজকদের লক্ষ্য রাখা উচিত। বাংলা ভাষা ধারণ করা প্রায় ৩০ কোটি মানুষ যারা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে তাদের কাছে ঠিকঠাক ভাবে আমাদের সিনেমা নিয়ে যেতে পারলে এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারেনা। এই আধুনিক সময়ে কনটেন্ট যেখানে কিং সেখানে আমাদের নির্মাতা, গল্পকার এবং শিল্পীরা সেভাবেই নিজেদের মেধার জানান দিবেন যাতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি নতুন করে ফিরিয়ে আনতে পারবে সেই হারিয়ে যাওয়া সোনালী দিন এটাই কাম্য। তবে আপাতত এবারের ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলি দর্শকদের মন জয় করবে নিজেদের নির্মান মুন্সিয়ানার জোরে সেই কামনা রইলো.….

Ad