জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রুম্মান রশীদ খান

আফজালুর ফেরদৌস রুমন 

সাংবাদিক, উপস্থাপক, টেলিভিশনে নাট্যকার পরিচয়ের বাইরে বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম মানে চলচ্চিত্রে তিনটি সিনেমার গল্প এবং চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি। পাশাপাশি একটা সময়ে এসে আমাদের পিছিয়ে পড়া সিনেমার মার্কেটিং বা প্রচারণার ক্ষেত্রেও এক নতুন ধারার প্রচলন শুরু হয়েছিলো তার হাত ধরেই। তিনি আমাদের সবার প্রিয় মানুষ রুম্মান রশীদ খান। আজ এই গুণী ব্যক্তির জন্মদিন উপলক্ষে এই বিশেষ ফিচার…

ছোটবেলায় মানে স্কুল পড়বার সময় লন্ডনে থাকা তার এক মামাকে চিঠি লিখতেন রুম্মান রশীদ খান। আসলে তার মায়ের লেখা চিঠিই নকল করে লিখতেন। এভাবেই একটা সময় লেখক হবার ইচ্ছা জন্ম নেয়। আবার তার আব্বা মাঝেমাঝে কৌতুক শোনাতেন। সেসব কৌতুক পরবর্তীতে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গুলোতে সহপাঠী এবং শিক্ষকদের সামনে প্রেজেন্ট করার মাধ্যমে পাওয়া হাত তালি,পুরস্কার তার মঞ্চভীতি কাটিয়ে দিয়েছিলো। উপস্থিত বা নির্ধারিত বক্তৃতা, বিতর্কক প্রতিযোগী, বাংলা-ইংরেজি-আরবী হাতের লেখা, ইসলামী সাধারণ জ্ঞান ও আযান প্রতিযোগিতায় প্রতি বছরই পুরস্কার নিতেন তিনি। তাকে নিয়ে তার নানার লেখা কবিতা পড়ে কবি হবার ইচ্ছাও জন্ম নিয়েছিলো মনে। বড় তিন বোনের বই-খাতা ছিড়ে কখনো ১৬ পাতা আবার কখনো ৩২ পাতার ম্যাগাজিন লেখার নেশাতেও পেয়ে বসেছিলো রুম্মান রশীদ খানের। সাংবাদিক হবার ইচ্ছাটা হয়তো সেসময়ই জন্ম নিয়েছিলো। নটরডেম কলেজে ঢাক-ঢোল, চিটচ্যাট পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন তিনি। নটরডেম সাংস্কৃতিক ক্লাবেরও প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভীষণ মেধাবী ছাত্র রুম্মান রশীদ খান স্কুল-কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে পড়লেও বিবিএ, এমবিএ করেছেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

নাটক/ সিনেমার গল্প লেখা, টেলিভিশনের নানা প্রোগ্রামের পরিকল্পনা হোক বা মঞ্চে উপস্থাপনা সব মাধ্যমেই নিজের যোগ্যতায় একটা আস্থা এবং ভরসার জায়গায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন নিজেকে। ২০০২ সালে প্রথম আলোর সাথে যুক্ত হন রুম্মান রশীদ খান। সেসময় বাইরের দেশের বিনোদন ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে যেমন লিখেছেন অসংখ্য ফিচার, তেমনি সাক্ষাৎকার নেবার সুযোগ পেয়েছেন আমাদের দেশের প্রায় সব তারকা শিল্পীদের। ১৪ বছর ধরে সঞ্চালনা করে আসছেন দেশের অন্যতম সম্মানজনক পুরস্কার মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার’র রেড কার্পেট সেগমেন্ট। তার স্মরণশক্তি, উপস্থিত বুদ্ধি এবং তারকাদের সাথে কেমিস্ট্রি তাকে এই ক্ষেত্রে করে তুলেছে অনন্য।

অপি করিম-মোনালিসা-নোবেল অভিনীত ‘বৃষ্টির পরে’ ছিল নাটকের জন্য তার প্রথম গল্প। ২০০৫ সালের ঈদে নাটকটি বিটিভিতে প্রচারিত হয়েছিল, ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল। তবে রুম্মান রশীদ খানের লেখা প্রথম নাটকের স্ক্রিপ্ট ছিল ২০০৯ সালের ঈদে প্রচারিত জনপ্রিয় নাটক ‘এসএমএস’। মাহফুজ আহমেদ, প্রভা, ইমন অভিনয় করেছিলেন নাটকটিতে। এখন অব্দি ১০৫টি টিভি নাটক লিখেছেন তিনি। যার মধ্যে প্রশ্রয়, দ্বিতীয় অধ্যায়, কোল, ব্ল্যাক, বউ শাশুড়ী নট আউট, হাঙ্গামা, গোলযোগ, আঁচড়, মা, বাবা, মাকে আমার পড়ে না মনে, দ্য হিরো, তোমার জন্য এক পৃথিবী, পোট্রেট ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল।

সাংবাদিকতা এবং চিত্র সমালোচনা থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও এখনো এই মানুষটি প্রতিটি নতুন সিনেমা দেখেন নিয়ম করে। চলচ্চিত্রের প্রতি তার এই টান বা মায়াই তাকে বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে স্বতন্ত্র জায়গায় অধিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশের প্রথম মাল্টিপ্লেক্স থিয়েটার স্টার সিনেপ্লেক্সের ব্র্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০০৯ সাল থেকে। ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী’ সিনেমার দুটি কিস্তি এবং ‘বিশ্বসুন্দরী’ সিনেমার গল্প এবং চিত্রনাট্য লিখেছেন এই সিনেমাপ্রেমী মানুষটি। ২০১৩ সালের সবচাইতে ব্যবসাসফল সিনেমা ছিল রুম্মান রশীদ খানের লেখা ১ম সিনেমা ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী’। ৩টি শাখায় মেরিল প্রথম আলো এবং ৪টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল সিনেমাটি। এছাড়া রুম্মান রশীদ খানের লেখা শেষ সিনেমা ‘বিশ্বসুন্দরী’ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সহ ৮টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। তবে সেই সিনেমা মুক্তির বছর তিনেক হয়ে যাবার পরেও তার নতুন চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত হবার বিষয়টা সম্পর্কে কোনো আপডেট না থাকাটা স্বাভাবিকভাবেই দুঃখজনক। প্রায় ১০ বছর ধরে মাছরাঙা টেলিভিশনের জনপ্রিয় প্রোগ্রাম ‘রাঙা সকাল’ উপস্থাপনা করছেন। যা একটি অনন্য সাফল্যই বলা যায়। ঢাকা আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্টের প্রথম আসরের মূল উপস্থাপক ছিলেন তিনি। প্রায় ৫০ হাজার দর্শকের সামনে আর্মি স্টেডিয়ামে উপস্থাপনা করেন তিনি। এছাড়া মঞ্চে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তার সাবলীল উপস্থাপনা মুগ্ধ করে দর্শকদের। বাচসাস, টেলিভিশন নাট্যকার সংঘ সহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন তিনি।

মাছরাঙা টেলিভিশনের অনেক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান, ইভেন্ট পরিকল্পনা ও গ্রন্থনাকারী হিসেবে রুম্মান রশীদ খান পেশাগত জীবনে ব্যস্ত সময় কাটালেও নাটক বা চলচ্চিত্রের গল্প লেখার প্রতি আগ্রহ হারাননি কখনোই। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রোগ্রামে সঞ্চালকের আসলেও দেখা যায় তাকে। এর বাইরে সিনেমার প্রচারণার ক্ষেত্রে নতুন নতুন আইডিয়া নিয়েও হাজির হচ্ছিলেন তিনি। ‘দেবী’ সিনেমার প্রচারণার মূল দায়িত্ব পালন করেন তিনি, যার জন্য একাধিক শাখায় বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের পুরস্কার পান তিনি ও ‘দেবী’ টিম। মায়াবতী, নোলক, বিশ্বসুন্দরী সিনেমাগুলোর প্রচারণার দায়িত্বেও ছিলেন রুম্মান রশীদ খান ও তার দল। তবে এখন সময়ের অভাবে এদিকটায় সেভাবে কাজ না করলেও এই সময়ে এসে আমরা বিভিন্ন ফিকশন নিয়ে প্রমোশনাল যেসব এক্টিভিটি দেখছি সেসবের শুরু যাদের হাত ধরে হয়েছিলো তাদের মধ্যে অন্যতম একজন রুম্মান রশীদ খান।

রুম্মান রশীদ খান, আপনি লেখালেখিতে নিয়মিত হোন। চলচ্চিত্রের প্রচার-প্রচারণায় নতুনভাবে যুক্ত হোন, এই প্রত্যাশা আমাদের সবার। শুভ জন্মদিন।

Ad