তিন দশকের ক্যারিয়ারে এখনো উজ্জ্বল কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবনূর

আফজালুর ফেরদৌস রুমন 

১৯৯৩ সালে ‘চাঁদনী রাতে’ সিনেমার মধ্য দিয়ে ঢাকাই সিনেমায় আগমন ঘটে শাবনূরের। ক্যালেন্ডারের হিসেবে ক্যারিয়ারের ৩০টি বছর পূর্ণ করলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবনূর। কোনো রকম তর্ক ছাড়াই সবাই একবাক্যে স্বীকার করে নেবেন যে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একজন কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবনূর। নব্বই দশকে ক্যারিয়ার শুরু করা অন্যতম সেরা জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত অভিনেত্রী হিসেবে নিজের অসাধারণ সৌন্দর্য্য, নৃত্য পারদর্শিতা, অভিনয় দক্ষতা দিয়ে সব শ্রেনীর দর্শকদের কাছেই শাবনূর একটি আবেগ এবং ভালোবাসার নাম।

শাবনূরের জন্ম যশোর জেলার শার্শা উপজেলার নাভারণে। পারিবারিক ভাবে তার নাম রাখা হয় কাজী শারমিন নাহিদ নুপুর। পরে স্বনামধন্য নির্মাতা এবং তার মেনটর এহতেশাম নুপুর নামটি বদলে সিনেমার জন্য নাম রাখেন শাবনূর। শাবনূর শব্দের অর্থ রাতের আলো। বাংলা চলচ্চিত্রে নব্বই এবং শূন্য দশকে আক্ষরিক অর্থেই এক উজ্জ্বল আলো হয়েই দ্যুতি ছড়িয়েছেন তিনি। সেই আলোর জ্যোতি এখনো জ্বলজ্বল করছে বাংলাদেশী সিনেমাপ্রেমীদের মাঝে।

 

১৯৯৩-২০১০ একটানা ১৭ বছর ধরে ঢাকার চলচ্চিত্রে অবিরাম কাজ করে গেছেন তিনি। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের কারনে বিরতি দিয়ে তার কিছু সিনেমা রিলিজ পেলেও সেইভাবে আর রূপালী জগতে নিয়মিত কাজ করেননি এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী।

‘চাঁদনী রাতে’ বক্স অফিসে অসফল হলেও নিজের দক্ষতা, মেধা এবং সৌন্দর্য্য বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম কিংবদন্তি অভিনেত্রী হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা পাকাপোক্ত করে নেন শাবনূর। তবে এই ক্ষেত্রে ক্ষনজন্মা সুপারস্টার সালমান শাহের সাথে তার অসামান্য জনপ্রিয়তা পাওয়া জুটিও একটা বড় ভূমিকা রেখেছে। সালমান শাহের মৃত্যুর পরে রিয়াজ, ফেরদৌস, আমিন খান, অমিত হাসান, শাকিল খান, শাকিব খানের সাথেও সফল জুটি গড়ে তোলেন তিনি। রোমান্টিক সিনেমায় শুধুমাত্র জুটি নির্ভরতা নয় একটা সময় বাংলা সিনেমায় শাবনূরের নামেই সিনেমার টিকেট বিক্রি হয়েছে অগনিত। তার স্টার ইমেজ সমসাময়িক তো বটেই পরবর্তী কালে অভিনয় করতে আসা নবাগত মেয়েদের কাছেও অনুকরনীয় হিসেবে লক্ষ্য করা গেছে।

নিরন্তর, বাঙলা, বিয়ের ফুল, কাজের মেয়ে, তোমাকে চাই, স্বপ্নের ঠিকানা, মন মানেনা, বউ-শ্বাশুড়ির যুদ্ধ, মাটির ফুল, বিচার হবে, মোল্লা বাড়ির বউ, হ্নদয়ের বন্ধন, আনন্দ অশ্রু, সুজন-সখী, বিক্ষোভ, জীবন-সংসার, কে অপরাধী, প্রেমের তাজমহল, শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ, কাল সকালে, চার সতীনের ঘর, নাচনেওয়ালী, দুই বধু এক স্বামী, ব্যাচেলার, প্রানের মানুষ, কাল সকালে, দুই নয়নের আলো সহ অসংখ্য জনপ্রিয় এবং প্রশংসিত সিনেমায় দেখা গেছে এই নন্দিত অভিনেত্রীকে। ২০০৫ সালে মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘দুই নয়নের আলো’ সিনেমায় অভিনয় করে তার ক্যারিয়ারের একমাত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেন শাবনূর। তবে দেশের আরেক প্রেস্টিজিয়াস পুরস্কার মেরিল প্রথম আলো তারকা জরিপ পুরস্কারে রেকর্ড সংখ্যক ১০ বার সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জয় করেন তিনি। এছাড়া বাচসাস সহ আরো পুরস্কারে নিজের নাম লিখিয়েছেন তিনি নিজ যোগ্যতায়।

অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী ব্যবসায়ী অনিক মাহমুদের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলেও একটা সময় বিচ্ছেদের পথে হাটেন তারা। তবে এরই মাঝে একমাত্র সন্তান আইজানের মা হিসেবে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেন তিনি। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় একমাত্র সন্তানকে নিয়েই দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

ওটিটির যুগে কনটেন্ট যখন আসল ভূমিকায় তখন অনেক গুণী এবং শজতিশালী তারকাই প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন নতুন করে। ওটিটির এই পরিবর্তন এর হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে চলচ্চিত্রেও। একঝাঁক প্রতিশ্রুতিশীল নবীন কিন্তু ভিন্নধারার নির্মাতারা আন্তজার্তিক অংগন এর সাথে তাল মিলিয়ে ব্যতিক্রমী গল্পের সিনেমা নির্মান করছেন। সেই ধারায় যদি শাবনূরের মতো গুণী অভিনেত্রী তার বয়স অনুযায়ী মানানসই এবং চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে হাজির হন তাহলে এর চেয়ে ভালো আর কিছুই হতে পারেনা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য….

Ad