বহুমাত্রিক এবিএম সুমন
আফজালুর ফেরদৌস রুমন : চলচ্চিত্রের মত একটি বিশাল প্ল্যাটফর্মে তার উপস্থিতি এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি সিনেমায়। কিন্তু এই সময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম সম্ভাবনাময় অভিনেতা হিসেবে তাকে গণ্য করা হচ্ছে তাকে। বলা হচ্ছে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ এর স্মরণীয় এবং আলোচিত ‘আশফাক’ চরিত্রে নিজেকে উজাড় করে দেয়া প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেতা এ,বি,এম সুমনের কথা। এই বহুমাত্রিক গুণী অভিনেতাকে নিয়েই আমাদের বিশেষ ফিচার।
বেশ লম্বা একটা সময় র্যাম্পে সফল মডেল হিসেবে পদচারণা করার পর সিনেমার পর্দায় একজন অভিনেতা হিসেবে যাত্রা শুরু করেন এবিএম সুমন। ২০১৫ সালে ‘অচেনা হৃদয়’ সিনেমার মধ্য দিয়ে অভিনেতা হিসেবে যাত্রা শুরু করেন এই সুদর্শন অভিনেতা। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমায় আশফাক চরিত্রে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং প্রশংসা কুড়ান তিনি।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই সময়ে এসে নতুন প্রজন্মের সম্ভাবনাময় অভিনেতা হিসেবে আলোচিত তিনি। ‘অচেনা হ্নদয়’ সিনেমার মধ্যে দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে পা রাখা এই অভিনেতা তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা দিয়েই নজর কাড়েন সাধারণ দর্শকদের। তবে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ দিয়ে আক্ষরিক অর্থে অনেকদিন পর বাংলাদেশের দর্শকরা একজন সুনিপুণ অভিনেতা এবং সার্বিক দিক দিয়ে নায়কোচিত এক তারকার দেখা পান।
নাচ, অ্যাকশন, ফিগার, অভিনয়, স্ট্যাইলিশ লুক এবং মানানসই পোষাক সিলেকশন তাকে জনপ্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য অভিনেতা হিসেবে পরিচিত করে তোলে। স্রোতে গা না ভাসিয়ে মানসম্মত এবং ভালো গল্পের সুস্থধারার সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার মধ্যে দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন তিনি অভিনয় করতেই এই চলচ্চিত্র মাধ্যমে এসেছেন, তারকা হিসেবে স্বল্প সময়ের খ্যাতির জন্য না।
দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই দর্শক, পরিচালক, প্রযোজনা সংস্থা সহ সকল মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন তিনি। সামনে মুক্তির মিছিলে আরো আছে অনেক আগেই কাজ শেষ হওয়া তানিম রহমান অংশুর “আদি”, সোহেল আরমানের “ভ্রমর”, মাহমুদ দীদারের ‘বিউটি সার্কাস’, সৌরভ কুন্ডুর ‘গিরগিটি’, আনিসুল হকের জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে ইস্পাহানি আরিফ জাহানের অনুদানের সিনেমা ‘হৃদিতা’ এবং মুক্তিযুদ্ধ কালীন গল্প নিয়ে নির্মিতব্য ‘দাহকাল’। এই আলোচিত এবং বিগ বাজেটের সিনেমাগুলি মুক্তি পেলেই বলা যায় এক নতুন সুপারস্টারের দেখা পাবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র ‘দাহকাল’, বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার সার্কাস মাধ্যম নিয়ে নির্মিতব্য ‘বিউটি সার্কাস’ এবং অ্যাকশন থ্রিলার ‘আদি’ বা নব্বই দশকের একজন রোমান্টিক তরুন হিসেবে ‘হৃদিতা’ সবকটি ভিন্নধর্মী সিনেমার গল্পে ভিন্ন ভিন্ন লুকে দেখা যাবে এই সুঅভিনেতাকে। ইতিমধ্যে ‘বিউটি সার্কাস’ সিনেমার টিজার এবং ‘আদি’ সিনেমার ট্রেলারে তার লুক নজর কেড়েছে সবার।
অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায় যে, সবসময়ই কোয়ানটিটির থেকে কোয়ালিটি কে প্রাধান্য দেয়া এই অভিনেতা কাজ করছেন কম কিন্তু মান সম্পন্ন কাজে নিজের পুরোটা উজার করে দেন তিনি বরাবরই। সিনেমা নির্মাণ যেখানে আশংকাজনক ভাবে কমে গেছে সেখানে স্বাভাবিকভাবেই দক্ষ এবং পরিশ্রমী মনোভাব সাথে নিয়েই আগাতে হবে।
তাই এসময়ে এসে নতুন কিন্তু দক্ষ শিল্পীদের ব্যাপক ভূমিকা রাখতেই হবে। সিয়াম, রোশান, বা সুমন দের মতো আলোচিত এবং সম্ভাবনাময় অভিনেতাদের কাজে লাগাতে হবে নির্মাতাদের। যাতে করে ধুকতে থাকা এই ইন্ডাস্ট্রি নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে।
গত বছর তার জন্মদিনে বাংলাদেশের জনপ্রিয় এবং আলোচিত প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়া থেকে এবিএম সুমনকেই কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিতব্য ‘মাসুদ রানা’ সিনেমায় তাকেই মাসুদ রানা চরিত্রে কাস্ট করেছে।
বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টিলিজেন্সের একজন স্পাই চরিত্রটি গল্পের বইয়ে সেভাবে বর্ননা করা হয়েছে তার সাথে প্রায় হুবুহু মিল পাওয়া যায় এবিএম সুমনের সাথে। তাই মাসুদ রানা হিসেবে তা নাম ঘোষনার পর প্রশংসা এবং অভিনন্দন দুটোই পেয়েছেন এই সম্ভাবনাময় অভিনেতা।
এই সময়ে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই। সিনেমা, নাটক বা থিয়েটারের বাইরেও এখন ইউটিউব বা অন্যান্য ডিজিটাল সাইট তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। নেটফ্লিক্স, আইফ্লিক্স সহ এরকম নানা সাইট এখন আধুনিক জীবনযাত্রার অন্যতম উপাদান।
এইসব সাইটেই এখন নানা সিরিজ, সিনেমা তৈরী হচ্ছে সারাবিশ্বে। পাশের দেশ ভারত এই মাধ্যমকে এখন রীতিমতো তাদের কাজের ক্ষেত্রে একটি আলাদা ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে দাড় করিয়ে ফেলেছে। দেরীতে হলেও বাংলাদেশ ও এই মাধ্যমকে এখন বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে এগোচ্ছে। এরই মধ্যে বেশকিছু আলোচিত শর্ট ফিল্ম নজর কেড়েছে সবার। কাজ চলছে বেশ কিছু সিরিজের। যেগুলো রিলিজ পাবার পরে এই মাধ্যম আরো বেশি জনপ্রিয় হবে বলেই ধারনা করা হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে তিনটি ওয়েব সিরিজে দেখা গেছে অভিনেতা এবিএম সুমনকে। অনন্য মামুনের বিগ বাজেটের ‘ইন্দুবালা’ এবং মোস্তফা কামাল রাজের ‘কুয়াশা’, এবং গোলাম সোহরাব দোদুলের ‘নীল দরজা’ নামক তিনটি ওয়েব সিরিজে কাজ করছেন তিনি। ইন্দুবালা তে তার সাথে জুটি বেঁধেছেন চিত্রনায়িকা পপি ‘কুয়াশা’ নামক অন্য সিরিজে তার সাথে স্ক্রিন শেয়ার করছেন এই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় এবং দক্ষ অভিনেত্রী তিশা এবং ‘নীল দরজা’তে বিদ্যা সিনহা মীমের সাথে দেখা গেছে তাকে।
কুয়াশা’য় সুমন অভিনয় করছেন অপরাধ জগতের এক যুবক মুরাদের ভূমিকায়। ‘নীল দরজা’ নামক ওয়েব সিরিজে তাকে ব্যতিক্রমী এক চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে। সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ যেটাই হোক এবিএম সুমন প্রমান করেছেন তিনি ডিরেক্টরস আর্টিস্ট। পরিচালক স্ক্রিপ্ট বা গল্প অনুযায়ী তাকে যদি সেলুলয়েডের পর্দায় তুলে ধরতে চান তাহলে নিজের শতভাগ চেস্টায় তিনি নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম।
ক্যারিয়ারে মানসম্পন্ন এসব কাজ নিয়ে বেশ আশাবাদী এবিএম সুমন। তার মুক্তি প্রতীক্ষিত নান্দনিক সিনেমাগুলো মুক্তি পেলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলেই ধারণা করা যায়। অভিনেতা হিসেবে তার ডেডিকেশন, চেস্টা, এবং পরিশ্রম তাকে নিয়ে যাবে সফলতার শিখরে এমনটাই আশা করছে তার ভক্তরা। শুভ কামনা রইলো এই সম্ভাবনাময় তরুন অভিনেতার জন্য!