বালাসুব্রমানিয়াম : এক নক্ষত্রের বিদায়

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এসপি বালাসুব্রমানিয়াম গায়ক, অভিনেতা, সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। ভারতের ১৬টি ভাষায় তার গাওয়া ৪০ হাজার গান রয়েছে। গত পাঁচ দশক ধরে চুটিয়ে কাজ করে গিয়েছেন তিনি। আর কন্ঠের জাদুতে ডুবিয়ে রেখেছিলেন উপমহাদেশের সমস্ত সঙ্গীতপ্রেমী মানুষকে।

কন্নড় ভাষায় (কর্ণাটকের ভাষা) প্রখ্যাত সুরকার উপেন্দ্র কুমারের জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২১টি গান রেকর্ড করে ১৯৮১ সালে গিনেজ বুকে নাম তোলেন এই ভারতীয় শিল্পী। ভারতীয় সঙ্গীত জগতে তার অবদানকে সম্মান জানিয়ে বালাসুব্রামানিয়ামকে ২০০১ সালে পদ্মশ্রী এবং ২০১১ সালে পদ্মভূষণ সম্মাননা দেয় ভারত সরকার।

ফিল্মফেয়ার থেকে ছয়বার সেরা গায়ক পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। এছাড়া জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তো আছেই। বলিউডে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘এসপি বালা’ নামে৷

নব্বইয়ের দশকে ‘ভয়েস অফ সালমান খান’ অর্থ্যাৎ সালমান খান অভিনীত সিনেমায় তার জন্য কণ্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী। ১৯৮৯ সালে সুপার হিট ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’ সিনেমার সবগুলো গানেই নবাগত নায়ক সালমানের প্লেব্যাক করেছিলেন বালাসুব্রামানিয়াম।

‘আজা শাম হোনে আয়ি’, ‘মেরে রঙ মে’, ‘কবুতর যা যা যা’সহ এই সিনেমার সবগুলো গানই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। আজো সেই জনপ্রিয়তা অটুট। এরপর সালমান খান ও এসপি বালা এই নায়ক-গায়ক জুটি একের পর এক জনপ্রিয় গান উপহার দেন। ‘হাম আপকে হ্যায় কউন’, ‘পাত্থর কে ফুল’, ‘লাভ’, ‘সাজন’,‘আন্দাজ আপনা আপনা’র মতো সুপারহিট সিনেমার সুপারহিট গান উপহার দিয়েছেন তারা।

‘কাভি তু ছালিয়া লাগতা হ্যায়’, ‘সাথীয়া তুনে কেয়া কিয়া’, ‘দিদি তেরা দেবর দিওয়ানা’, ‘পেহলা পেহলা পেয়ার হ্যায়’, ‘দেখা হ্যায় পেহলি বার’, ‘ইয়ে রাত অর ইয়ে দূরি’- এসপি বালার গাওয়া এই সব গান জয় করে নিয়েছে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়।

১৯৪৬ সালের ৪ জুন মাদ্রাসে (চেন্নাই) জন্ম হয় তাঁর। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি ছিল তার বিশেষ অনুরাগ। ১৯৬৬ সালে ‘শ্রী শ্রী মর্যাদা রামান্না’ নামে এক তেলুগু সিনেমার মধ্যে দিয়েই সঙ্গীত জগতে হাতেখড়ি হয় তাঁর। এর পর একে একে নানা হিন্দি, তামিল তেলুগু সিনেমাতে গান গেয়ে ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির গায়কের তকমা পেয়ে যান এসপি।

তেলুগুর পাশাপাশি তামিল, কান্নাড়া, মালায়ালাম, হিন্দি সিনেমায় সমানতালে গান গেয়েছেন তিনি। লতা মঙ্গেশকরের, আশা ভোসলে, অনুরাধা পাডোয়াল সহ হিন্দি গানে নব্বই দশকের জনপ্রিয় গায়িকাদের সাথে অসংখ্য সুপারহিট ডুয়েট গান উপহার দিয়েছেন তিনি।

আগস্ট মাসে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।গত দু’মাস ধরে মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে করোনা মুক্তও হয়েছিলেন।গত ১৩ সেপ্টেম্বর তাঁর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল।

কিন্তু তার পরেও শারীরিক অবস্থার কোনওরকম উন্নতি হচ্ছিল না। গত বৃহস্পতিবার ‘ম্যাক্সিমাম লাইফ সাপোর্ট’-এ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ফুসফুসের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেটর থেকে বার করা যায়নি।

গত কয়েকদিন ধরেই অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক ছিল। সব ধরনের চেষ্টাই করা হচ্ছিলো তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য। তবুও শেষরক্ষা হল না। চলে গেলেন প্রবাদপ্রতীম সঙ্গীতশিল্পী এসপি বালাসুব্রমানিয়াম। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১টা বেজে ৪ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৪।

মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেলেন স্ত্রী সাবিত্রী, ছেলে চরণ ও মেয়ে পল্লবী’কে। তাঁর মৃত্যুতে দেশের সঙ্গীত জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বলিউড,তামিল, কান্নাড়া, মালায়ালাম, তেলেগু, টালিউড সহ প্রায় সব ইন্ডাস্ট্রির নামকরা তারকারা ইতিমধ্যে তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শ্রদ্ধা এবং শেষ বিদায় জানিয়েছেন। তবে তার গাওয়া অসাধারন জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্য দিয়ে তিনি অমর হয়ে রইবেন সংগীতপ্রেমী মানুষের মনে।

Ad