বিশাল স্টারকাস্ট নিয়ে রায়হান রাফির ‘দামাল’

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : প্রথম সিনেমা ‘পোড়ামন ২’ দিয়েই দর্শক হৃদয় জয় করে নেয়া নির্মাতা রায়হান রাফির নতুন সিনেমা নিয়ে বেশ আলোচনা বা গুঞ্জন ছিলো বেশকিছু দিন ধরেই। ব্যতিক্রমী নির্মান, ভিন্নধর্মী কনটেন্ট, স্টারকাস্ট নিয়ে সিনেমা বানানো সব মিলিয়ে তার মুক্তিপ্রাপ্ত বা মুক্তি প্রতীক্ষিত প্রতিটি সিনেমাই আলোচনায়।

মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘পরাণ’, ‘স্বপ্নবাজি’, ‘ইত্তেফাক’ ও ‘জানোয়ার’ সিনেমাগুলো নিয়ে সবার মাঝেই আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এবার ‘দামাল’ শিরোনামের একটি সিনেমা নির্মাণ করতে যাচ্ছেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গড়ে তোলা ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’ এবং সেই সময় ‘মহিলা ফুটবল দল’ এই দুই ফুটবল দলের ভেতরে বা বাইরের স্বাধীনতাকামী মানুষগুলোর গল্প নিয়েই নির্মিত হতে যাচ্ছে ‘দামাল’।

ফুটবল নিয়ে এর আগে ‘জাগো’ নামে একটি সিনেমা নির্মিত হয়েছে। তাই ‘দামাল’ সিনেমায় একইসাথে মুক্তিযুদ্ধ এবং ফুটবল এই দুইয়ের সংমিশ্রণে একটি ভিন্নধর্মী কনটেন্ট নিয়ে হাজির হচ্ছে পুরো টিম একথা বলা যায় নিঃসন্দেহে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটা স্বাধীনতাকামী মানুষই যার যার জায়গা থেকে দেশের জন্য নানা রকম, দেশের মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা ছাড়াও শিল্পী, কলাকুশলী এবং খেলোয়াড়দের বড় একটা ভূমিকা ছিলো সারাবিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে।

সেই সময় দেশের সেরা ফুটবলারদের নিয়ে গঠিত ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’ ফুটবল দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় করে গেছে অনন্য এক যুদ্ধ। সে সময়ের প্রেক্ষাপটে দেশের ফুটবলের দামি তারকারা অপার এক দেশপ্রেম বুকে ধারণ করে ফুটবল খেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষে গড়ে তুলেছিলেন জনমত। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরি ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফান্ড তৈরির লক্ষে গঠিত হয়েছিল ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’।

১৯৭১ সালের জুন মাসে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলটি গঠিত হয়। প্রথমদিকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কথা উল্লেখ করে মুজিবনগর গিয়ে তাতে যোগ দিতে বলা হয় খেলোয়াড়দের। দলটির অধিনায়ক ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। সহঅধিনায়ক ছিলেন প্রতাপ শঙ্কর হাজরা। যুদ্ধের সময় এ দলটি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় খেলেছিল ১৬টি ম্যাচ।

জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলে ছিলেন প্রতাপ শংকর হাজরা, নওশের, লালু, কায়কোবাদ, আশরাফ, এনায়েত, সালাউদ্দিন, আইনুলসহ ৩১ জন তারকা ফুটবলার। যাদের বেশির ভাগই স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের সেরা ফুটবলার হিসেবে ছিলেন সুপরিচিত। দলটির ম্যানেজার ছিলেন তানভীর মাজহারুল ইসলাম তান্না।

প্রশিক্ষক ছিলেন ননী বসাক। ১৯৭১ সালের ২৫শে জুলাই পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে নদিয়া একাদশের বিপক্ষে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল প্রথম খেলতে নামে। ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়। তারা বিভিন্ন স্থানে মোট ১৬টি ম্যাচ খেলেন। ম্যাচগুলো থেকে আয়কৃত ৫ লাখ টাকা মুক্তিযুদ্ধের ফান্ডে জমা দেওয়া হয়।

‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’ এর সেই অসাধারণ গল্পটা আমাদের সবার কম বেশি জানা এবং একই সাথে স্বাধীনতার সেই সময়ে ‘মহিলা ফুটবল দল’ একটি বড় অংশ জুড়েই থাকবে এই সিনেমায় এটাও নিশ্চিত। এই সময়ে এসে যেখানে স্বাধীনতা যুদ্ধ বা দেশপ্রেম নিয়ে সিনেমা বানানো হয়না বললেই চলে সেখানে রায়হান রাফির ‘দামাল’ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।

ফরিদুর রেজা সাগরের মূল ভাবনায় সিনেমাটির চিত্রনাট্য করেছেন লেখক নাজিম উদ দৌলা এবং রায়হান রাফি। ‘দামাল’ এর গল্প নিয়ে প্রায় ৮-৯ মাস ধরে কাজ করছে পুরো টিম। মাল্টিকাস্টিং এ সিনেমাটি প্রযোজনা করবে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। সিনেমাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন সিয়াম আহমেদ, বিদ্যা সিনহা মিম, শরিফুল রাজ, সাঈদ বাবু, শাহনাজ সুমী, সামিয়া অথৈ, বৃষ্টি, রাশেদ মামুনুর রহমান, সুমিত সেনগুপ্ত, পূজা ক্রুজ, সৈয়দ নাজমুস সাকিব সহ আরও অনেকে।

Ad