শুভ জন্মদিন চয়নিকা চৌধুরী (প্রথম পর্ব)

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : বাংলাদেশের নাট্যপরিচালক হিসেবে চয়নিকা চৌধুরী একটি জনপ্রিয় নাম। পুরুষ শাসিত এই ইন্ডাস্ট্রিতে একজন নারী নির্মাতা হিসেবে নিজের দক্ষতা এবং মেধার প্রমান দিয়ে এসেছেন তিনি সেই প্রথম থেকেই। এই সময়ে এসে নারী নির্মাতাদের মধ্যে শীর্ষে আছেন একথা চোখ বন্ধ করেই বলা যায় সাথে সাথে দেশের জনপ্রিয় এবং দক্ষ পরিচালকদের লিস্টেও তার নাম উপরের দিকেই থাকবে। একক নাটকের নির্মাতা হিসেবে ৪০০ এর বেশি নাটক পরিচালনা করে অন্যন্য এক দৃষ্টান্ত তৈরী করেছেন তিনি। আজ এই গুনী নির্মাতার জন্মদিন উপলক্ষে তাকে নিয়ে এই বিশেষ ফিচার।

বিগত দুই দশক ধরে অবিরাম কাজ করে চলেছেন চয়নিকা চৌধুরী। বিশেষ করে রোমান্টিক এবং সাহিত্যনির্ভর গল্পের নাটকে তিনি একজন অসাধারন পরিচালক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এতোটা সময় ধরে কাজ করার পরে এই সময়ে এসেও সাধারন মানুষের রুচি, মধ্যবিত্তের আবেগ খুব সহজেই ছুঁয়ে যেতে পারেন বলেই এখনো হাজার নির্মাণের ভিড়ে তার কাজগুলো আলাদা মর্যাদা পায়। ঈদ কিংবা বিশেষ দিনের নাটক, টেলিফিল্ম মানেই যে পরিচালকের নামটি বিশেষ ভাবে উচ্চারিত হবেই তিনি চয়নিকা চৌধুরী।

২০০১ সালের নিরিখে নারী নির্মাতা হিসেবে যাত্রা শুরু করাটা মোটেও সহজ বা সুখকর ছিলোনা। তবুও নাটকের পরিচালক হিসেবে কাজ করার ইচ্ছা এবং ভালোবাসা তাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে যেয়ে চয়নিকা চৌধুরী নিজেই জানালেন যে, এই দুই দশক ধরে কাজ করে যাওয়াটাই তো একটা বিশাল গল্প। মান বজায় রেখে, গল্প নির্বাচন এবং চরিত্রে সাথে মানিয়ে যাওয়া শিল্পীদের সাথে নিয়ে টেলিফিল্ম বা ধারাবাহিক ছাড়াই ৪০০ এর বেশি নাটক পরিচালনা করার অনুভূতি আসলে এককথায় বলে বা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। এই অনুভূতি প্রচন্ড আনন্দের এবং একই সাথে অনেক ত্যাগ,কষ্ট এবং পরিশ্রমের ফসল।

টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে এই রকম সাফল্য বা প্রাপ্তি লাভের সময়ে তিনি আলাদাভাবে স্মরণ করেন লাইট এন্ড শ্যাডোর মুজিবর রায়হান, অ্যাড মিডিয়ার জায়েদান রাব্বি এবং তার ছোট বোন বাংলাদেশের অন্যতম দক্ষ এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রী তমালিকা কর্মকারকে।

চয়নিকা চৌধুরী জানান, এই মানুষগুলোর প্রতি যতটা কৃতজ্ঞতা বা ধন্যবাদ জানাই না কেন সেটা কম হয়ে যাবে, কারণ তারাই আমাকে আমার যোগ্যতা বা মেধা তুলে ধরার প্ল্যাটফর্মটা দিয়েছেন। যদি এই প্ল্যাটফর্মটা না পেতাম তাহলে হয়তো আজকের চয়নিকা চৌধুরীকে পাওয়া যেতনা। এই তিনজন ছাড়াও তিনি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানান অভিনেতা মাহফুজ আহমেদের প্রতি। মাহফুজ আহমেদের মাধ্যমেই নাট্যকার হিসেবে চয়নিকার যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে স্মৃতিচারণ করেন। সময়ের পরিক্রমায় মাহফুজ আহমেদ তার পরিবারের খুবই কাছের বন্ধু এবং প্রিয় মানুষ।

ব্যক্তিজীবনে খুবই সাধারণ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত চয়নিকা চৌধুরী ছোটবেলায় গান ও নাচ শিখেছেন মায়ের উৎসাহে। ছায়ানট থেকে গান শিখে শান্তিনিকেতনে গানের কোর্স করেছেন। স্বামী, সংসার, ছেলে,মেয়ে নিয়েই তার ব্যক্তিজীবনের ব্যস্ততা। সেখানেও একজন সফল স্ত্রী, সফল মা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।

ভীষন জনপ্রিয় এবং গুনী এই পরিচালক বলেন, আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে একজন নারী যদি পরিবারের সহযোগিতা না পান তাহলে কখনোই সফল হতে পারেন না। আমি ভাগ্যবতী যে, আমার স্বামী, দুই সন্তান আমার কাজের প্রতি ভালোবাসাকে সম্মান দিয়েছেন। যাদের অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতা না থাকলে হয়তো এতটা পথ আসা সম্ভব হতোনা কখনোই।

স্বামী অরুন চৌধুরীর কথা বলতে যেয়ে তিনি জানান, দেখতে দেখতে প্রায় তিন দশক হয়ে যাচ্ছে আমাদের সংসার জীবনের। ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, আস্থা দিয়ে এই মানুষটা আমার চলার পথের বন্ধু হিসেবে সাথে ছিলেন প্রতিটা সময়। তাই কৃতজ্ঞতা তাকে না জানালে নিজেকে অকৃতজ্ঞ মনে হবে। একজন মানুষ হিসেবে চয়নিকা চৌধুরী কখনো অকৃতজ্ঞ হতে পারবেনা সেটা যেকোন সময়ে যে কারো ক্ষেত্রেই হোক।

নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী জন্মদিন উপলক্ষে এসকে মিডিয়া ডটকমের পক্ষ থেকে বিশেষ ফিচার। দ্বিতীয় পর্ব আসছে।

Ad