‘কাজ দিয়েই নিজেকে সবার কাছে গ্রহনযোগ্য করতে হয়েছে’ (দ্বিতীয় পর্ব)

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : নিজের কাজকে নিজের উপাসনা মেনে প্রায় দুই দশক ধরে টেলিভিশন নাটকের ইতিহাসে নির্মাতা হিসেবে নিজের অবস্থান দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করেছেন তিনি। এই সৃষ্টিশীলতার জগতে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার যুদ্ধেই যেনো শামিল হয়েছেন বারবার।

মেধা ও পরিশ্রম, এই দুইয়ের যথাযথ মিশ্রনের কারণেই নানা প্রতিবন্ধকতা বা জটিলতা সত্বেও চার শতাধিক টিভি নাটক নির্মাণ করেছেন তিনি। টেলিভিশনের তার প্রথম প্রচারিত নাটক এক জীবনে। এটি তারই লেখা নাটক।

পরিচালিত প্রথম নাটক হিসেবে ২০০১ সালের ২৮শে অক্টোবর প্রচারিত হয় ‘এক জীবনে’। সেই সময় তাকে পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ বা প্ল্যাটফর্মটি যারা করে দিয়েছিলেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। এতোটা পথ পেরিয়ে এসেও ইমদাদুল হক মিলন, মাহফুজ আহমেদ, মুজিবর রহমান, জায়েদান রাব্বি এবং তমালিকা কর্মকারের নাম শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার সাথে স্মরন করতে ভোলেননি তিনি।

এই নির্মাতার ১৯ বছরের বর্ণিল ক্যারিয়ারে সাফল্যের পাল্লাই ভারি। টিভি নাটকে তিনি তৈরি করেছেন নতুন ধারা। শুধু নির্মাণ নয়, অসংখ্য দর্শকনন্দিত নাটকের চিত্রনাট্যকারও তিনি। একক নাটকের বাইরে ১৮ টি ধারাবাহিকও নির্মান করেছেন এই গুনী পরিচালক। এই বিষয়ে চয়নিকা চৌধুরী বলেন- আসলে ট্যালেন্ট বা দক্ষতা অনেকের মাঝেই কিন্তু কমবেশি থাকে। কিন্তু সেই ট্যালেন্টটা তুলে ধরার জন্য সঠিক প্ল্যাটফর্ম পাওয়াটা কিন্তু অনেক বেশি জরুরি।

তাই শিকড় বা শুরুটা আমাদের কারোই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। কারন আমাদের ক্যারিয়ারের শুরু বা সাফল্যের সিড়িতে উঠার সময়টা যাদের মাধ্যমে তাদের ঋন শোধ হবার নয়। এই জেনারেশনের অনেকের মধ্যেই এই গুন বা বিনয়ী আচরণ আমরা দেখতে পাইনা এটা অনেক সময় কষ্ট দেয়। তবে নিজের জায়গায় স্বচ্ছ থাকাটা মানুষ হিসেবে খুবই দরকার বলে আমার মনে হয়।

এই লম্বা সময় পেরিয়ে এসে নিজের পছন্দের কিছু নাটকের নাম জানতে চাইলে চয়নিকা চৌধুরী একটু হেসে বলেন- “আসলে এটা অনেক কঠিন একটা ব্যাপার। প্রতিটি কাজই তো আসলে আলাদা একটা জায়গা করে নেয়। আমরা যখন শুরু করি তখন ইউটিউব বা অনলাইন ভিত্তিক কোনো প্ল্যাটফর্ম ছিলোনা, বিটিভি আর হাতে গোনা কয়েকটি চ্যানেলেই কাজ করা হতো। তাই ওই সময়ে করা কাজগুলো দর্শকদের কাছে যেতে পেরেছে খুব সহজেই।

তবে হুমায়ূন আহমেদের রুপা, অরুণ চৌধুরীর লেখা চলমান ছবি, হাসপাতাল, আকাশ জোড়া মেঘ, মানুষ মাত্র দুজন, আলোর নাচন পাতায় পাতায়, বিকেলের আলো, ইমদাদুল হক মিলনের মায়া, আচল, এসো হাত ধরো, সোনার মানুষ বা ফারিয়া হোসেনের গল্পটি হতেও পারতো ভালোবাসার, আবেগ, কি আছে সেইখানে, মোমের পুতুল, সাদা মেঘের মন, অপার আনন্দ, প্রতিচ্ছবি, মেঘলা মনের মেয়ে, সহ আরো অনেক নাটক তার প্রিয়।

আবুল হায়াতের রসিয়া, ভালোবাসি নাটক দুটিও বেশ প্রিয়। এছাড়া গিয়াসউদ্দিন সেলিমের জুয়াড়ি, অনিমেষ আইচের হিপোক্রেট, মাসুম শাহরিয়ারের একদিন খুজেছিলো যারে, সুইজারল্যান্ড, কালো চিঠি, অমরাবতী।

সাগর জাহানের নীল ফুল, বৃষ্টি কাল কাঁদবে, মা এবং অতপর। ইফফাত তর্নির চাদের আলোয়, শিখার কথা, দ্বিতীয় যাত্রার আগে, শেষের পরে, রুম্মান রশীদ খানের আঁচড়, তোমার পড়ে ঠেকাই মাথা, মা। এছাড়া জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিপাশা হায়াতের ঘাসফুল, সোনার কাঠি রুপার কাঠি, নাজনীন হাসান চুমকীর ভালোবাসার ঘ্রান,আমি এবং শ্বেত পায়রা, শফিকুর রহমান শান্তনুর ইতি তোমার মা, জাকারিয়া সৌখিনের বছর কুড়ি পরে, ধ্রুবতারা, টম এন্ড জেরী।

চয়নিকা চৌধুরীর নিজের লেখা অনুমতি প্রার্থনা, আলোছায়া, মায়াঘর, তোমাকে ছুয়ে, খেলাঘর, গল্পনয় সহ আরো অনেক নাটক যেমনি নন্দিত হয়েছে তেমনি জনপ্রিয়ও হয়েছে। সাথে সাথে এসব নাটক পরিচালনা করেও তৃপ্তি পেয়েছেন তিনি।

চয়নিকার নাটকে বেশিরভাগ সময়ই কাজ করতে দেখা যায় দেশের নামকরা শিল্পীদের। এই বিষয়ে তিনি জানান, এই বোঝাপড়া বা আস্থার বিষয়টা একদিনে তৈরি হয়নি। নিজেকে তৈরি করতে হয়েছে। কাজ দিয়েই নিজেকে সবার কাছে গ্রহনযোগ্য করতে হয়েছে।

বোঝাপড়াটা এভাবেই শিল্পীদের সাথে গড়ে উঠেছে। এতদিন ধরে এই নাট্য জগতে বিচরণ করার ফলে অনেকের সাথেই সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। একসাথে কাজ করতে যেয়ে নানা সময় নানা রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি অ হতে হয়। তবে এরই মাঝে কেউ কেউ খুব কাছের এবং পছন্দের মানুষ হিসেবে স্থান করে নেয়।

এত তারকা শিল্পীদের সাথে কাজ করলেও নিজের পছন্দের কিছু নাম তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অবশ্যই পছন্দের অভিনেত্রী হিসেবে সবার আগে সুবর্না মোস্তফার নামটি বলবো, তার পার্সোনালিটি, অভিনয় দক্ষতায় মুগ্ধ হননি এমন কেউ নেই।

এরপর শমী কায়সার, বিপাশা হায়াত, আফসানা মিমি, তৌকির আহমেদ, মাহফুজ আহমেদ, রিচি সোলায়মান, তমালিকা কর্মকার, নুসরাত ইমরোজ তিশা, জাকিয়া বারী মম, অপূর্ব, সজল, আনিসুর রহমান মিলন এরা খুবই পছন্দের শিল্পী এবং কাছের মানুষ।

শাহেদ এবং শ্রাবন্তীকে জুটি হিসেবে নিয়ে প্রথমদিকে অনেক নাটক পরিচালনা করা হয়েছে তাই তাদের নামও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া বর্তমানে কানাডা প্রবাসী একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তিন্নির অভিনয়ও ভালো লাগে তার।

নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী জন্মদিন উপলক্ষে এসকে মিডিয়া ডটকমের পক্ষ থেকে বিশেষ ফিচার। তৃতীয় পর্ব আসছে।

Ad