বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে পাঁচ সিনেমা

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : করোনা পরিস্থিতির কারনে ১৮ই মার্চ থেকে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করে দেয়া হয় প্রায় সাত মাস বন্ধ থাকার পরে অবশেষে গত ১৬ই অক্টোবর তথ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে আবারো খুলে দেয়া হয় দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো। তবে ‘সাহসী হিরো আলম’ নামক হল চালু করলেও দর্শকদের ফেরানো যায়নি। তাই পুরোনো সিনেমাই নতুন করে আবারো চালানো হয়েছে।

মাঝে মাসুদ হাসান উজ্জ্বল পরিচালিত ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ মধ্যবিত্ত শ্রেনীর দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহে এনেছে এবং কঠিন সময়ের মধ্যেও সপ্তম সপ্তাহে এসেও দেশের সিনেপ্লেক্স এবং কিছু হলে এখনো চলছে। এটা অবশ্যই আনন্দ এবং আশার বিষয় যে, ভালো গল্প বা ভিন্নধর্মী মেকিং দিয়ে সিনেমা বানালে তা দর্শকদের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পাচ্ছে।

তবে বিজয়ের মাসে মানে এই ডিসেম্বরেই মুক্তি পাবার সম্ভাবনা আছে নতুন ৫-৬ টি সিনেমার। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ বাদ বাকি সিনেমাগুলোর একসাথে মুক্তির বিষয়টা নিয়ে কিছুটা শংকা থেকেই যাচ্ছে। ‘বিশ্বসুন্দরী’ ‘নবাব এল এল বি’ ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ ‘প্রিয় কমলা’ এবং ‘টুঙ্গি পাড়ার মিয়া ভাই’ এই পাঁচটি সিনেমার মুক্তির প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

তবে এদের মধ্যে ছোটপর্দার জনপ্রিয় নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর প্রথম পরিচালিত সিনেমা ‘বিশ্বসুন্দরী’ এবং অন্যন্য মামুনের পরিচালনায় শাকিব খান অভিনীত ‘নবাব এল এল বি’ সিনেমা নিয়ে দর্শকদের মাঝে আগ্রহ এবং আলোচনা লক্ষ্য করার মতো।

আগামী ১১ই ডিসেম্বর মুক্তি পাবে রুম্মান রশীদ খানের গল্পে চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনা সিয়াম-পরীমনি জুটির প্রথম সিনেমা ‘বিশ্বসুন্দরী’। সিনেমাটির গান ইউটিউবে আগেই রিলিজ দেয়া হয়েছে। একটি গান ‘তুই কি আমার হবি রে’ শিরোনামের গানটি এরই মধ্যে তিন কোটি বারের বেশি দেখা হয়েছে। আজ রাতে মুক্তি দেয়া হবে ট্রেলার।

সিয়াম-পরীমনি ছাড়াও আলমগীর, চম্পা, মুনিরা মিঠু, সুজন, হীরা, আনন্দ খালেদ, ফজলুর রহমান বাবুর মতো দক্ষ এবং জনপ্রিয় শিল্পীদের নিয়ে ‘বিশ্বসুন্দরী’ এই বছরের অন্যতম সেরা আকর্ষন হতে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

অন্যদিকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যুক্ত হতে যাচ্ছে আরেকটি মাইলফলক। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেতে যাচ্ছে আলোচিত নির্মাতা অনন্য মামুন পরিচালিত ‘নবাব এলএলবি’। এই সিনেমার মধ্য দিয়ে বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের সিনেমাও অনলাইনে মুক্তির দুয়ার খুলছে।

এছাড়া সুপারষ্টার শাকিব খান, জনপ্রিয় অভিনেত্রী মাহিয়া মাহী, অর্চিতা স্পর্শিয়া, শহীদুজ্জামান সেলিম এর মতো শক্তিশালী অভিনয় শিল্পীদের নিয়ে নির্মিত এই সিনেমা নিয়ে আগ্রহ ব্যাপক। ইতিমধ্যে সিনেমাটি মুক্তির জন্য ‘আই থিয়েটার’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার থেকেই এই অনলাইনে ‘নবাব এলএলবি’ দেখার জন্য দর্শক টিকিট কিনতে শুরু করেছেন। ১৬ ডিসেম্বর রাত ৮টায় এ অনলাইনে সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে। সিনেমার গল্পে সমসাময়িক সামাজিক সমস্যা ধর্ষণের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ এবং নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সিনেমায় শাকিব খানের লুক ইতিমধ্যে প্রশংসা কুড়াচ্ছে।

এছাড়া একজন বামপন্থী নেতার জীবনী নিয়ে ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ নামক সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন তানভীর মোকাম্মেল। সিনেমায় অভিনয় করেছেন জাহিদ হোসেন শোভন, খাইরুল আলম সবুজ ও নাজিবা বাশারসহ আরো অনেকেই। তবে সিনেমাটি নিয়ে নেই কোনো প্রচারনা বা প্রমোশন।

এই ডিসেম্বরেই সিনেমা হলে মুক্তির সম্ভবনা রয়েছে সেলিম খান পরিচালিত ‘টুঙ্গি পাড়ার মিয়া ভাই’ সিনেমাটি। এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় শিশুশিল্পী দীঘি নায়িকা হিসেবে ফিরছেন এই সিনেমা দিয়ে। সিনেমায় মিয়া ভাই চরিত্রে আছেন নবাগত শান্ত খান।

অন্যদিকে বিজয় দিবস উপলক্ষে চ্যানেল আইতে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হবে বাপ্পি চৌধুরী ও অপু বিশ্বাস জুটির দ্বিতীয় সিনেমা ’প্রিয় কমলা’। উল্ল শাহরিয়ার নাজিম জয় পরিচালিত সিনেমাতে বীরাঙ্গনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প তুলে ধরা হয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিনেমায় নায়ক বাপ্পীর একটি লুক প্রকাশ করা হলে সেটি ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়।

একই মাসে এতোগুলা সিনেমার এমন তাড়াহুড়ো করে মুক্তি সিনেমা সংশ্লিষ্টদের কাছে কিছুটা শংকার বিষয়। কারন এমনিতেই হলে দর্শক সংখ্যা কম, তার উপর করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি এখনো। এরই মাঝে একই মাসে এতো সিনেমা মুক্তি ব্যবসায়িক ভাবে কতোটা লাভজনক হবে তা সময়ই বলে দিবে।

এছাড়া আরেকটি বিষয় হলো ‘বিশ্বসুন্দরী’ এবং ‘নবাব এল এল বি’ ছাড়া অন্য কোনো সিনেমার তেমন কোন প্রচার-প্রচারণা নাই। দর্শক যদি জানতেই না পারে যে কোন সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে বা কোন কোন হলে মুক্তি পাবে তাহলে সিনেমা দেখতে আসবে কিভাবে।

বিগত অনেক বছর ধরেই অনেক প্রযোজক, পরিচালক এবং সিনেমার অভিনেতা অভিনেত্রীদের প্রমোশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এমন অবহেলা লক্ষ্য করা যায় যা আক্ষরিক অর্থে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভালো কিছু নয়। তবে সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে এসব সিনেমার মধ্য দিয়ে আবারো ঘুড়ে দাড়াবে আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি সেটাই কাম্য।

Ad