‘তকদীর’ নিয়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে চঞ্চল চৌধুরী

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : আমাদের দেশের বিনোদনের দুটি মাধ্যম টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে এই সময়ের অন্যতম শক্তিশালী এবং দক্ষ অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। নিজের ক্ষুরধার অভিনয় দক্ষতা দিয়ে তিনি জয় করেছেন দর্শক, সমালোচকদের মন। এবার বিনোদনের নতুন মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখা যাবে চঞ্চল চৌধুরীকে।

দর্শকনন্দিত এ অভিনেতা এবার একটি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছেন। ‘তকদির’ নামক ওয়েব সিরিজটি আন্তর্জাতিক প্লাটফর্ম হৈচৈ-এ প্রচারিত হবে। ইতিমধ্যে পোষ্টার এবং ট্রেলার রিলিজ দেয়ার পর চঞ্চল চৌধুরীর দক্ষ অভিনয়, মেকিং, সিনেমাটোগ্রাফি, লোকেশন সব মিলিয়ে দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ‘তকদীর’।

একটা ফ্রিজার ভ্যানের ড্রাইভার যে লাশ বহন করে নিয়ে যায়। এমন একটা লাশ এবং সেই লাশের সাথে জড়িত মানুষদের গল্প নিয়েই সিরিজের পুরো কাহিনী। ফ্রিজার ভ্যানের ড্রাইভার চরিত্রে দেখা যাবে চঞ্চল চৌধুরীকে। এর আগে এমন চরিত্রে অভিনয় করেননি তিনি।

তাই স্বাভাবিকভাবেই ‘তকদীর’ সিরিজটি নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত তিনি। সিরিজটি নির্মাণ করেছেন সৈয়দ আহমেদ শাওকি। উল্লেখ্য ওয়েব সিরিজটিতে তাকে নাম ভূমিকায় দেখা যাবে। এছাড়া আরো অভিনয় করেছেন পার্থ বড়ুয়া, সানজিদা প্রীতি, মনোজ প্রামানিক, ইন্তেখাব দিনার সহ আরো অনেকে।

‘তকদীর’ এর বেশিরভাগ শুটিং হয়েছে আউটডোরে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই বিধিনিষেধ মেনে সেপ্টেম্বর থেকে শুটিংয়ের কাজ শুরু করেছে ‘তকদীর’ টিম। একটি সাক্ষাৎকারে চঞ্চল চৌধুরী জানিয়েছেন যে, ‘কিছু কিছু লোকেশনে আমি আগে কখনো যাইনি। যেমন বরফকলে শুটিং করেছি আমরা। বরফকলে অদ্ভুত রকমের কিছু দৃশ্য আমরা পেয়েছি। এছাড়া কবরস্থনে শুটিং করতে হয়েছে।

সাধারণত এসব জায়গায় গিয়ে সচারাচর কাজ করা হয় না। তবে গল্প, চরিত্রগুলো পর্দায় বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে তুলে ধরার তাগিদ থেকেই এসব জায়গায় শ্যুটিং করা হয়েছে। তিনি আরো জানা, ‘এটা কী আমরা কখনও চিন্তা করি যে, যারা দিনের পর দিন রাতের পর রাত লাশবাহী গাড়ি চালান, তাদের পেছনে এক বা একাধিক লাশ থাকে।

জীবন বা মৃত্যু নিয়ে সেই মানুষটার চিন্তাটা কেমন, মৃত্যুকে সে কোন দৃষ্টিতে দেখে এমন অনেক কিছুর একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে ‘তকদীর’ সিরিজটিতে। এমন পরিস্থিতিতে ড্রাইভার হলেও সেই মানুষটা কতটা মানবিক বা অমানবিক এই ব্যাপারগুলো বেশ সুন্দর করেই তুলে ধরা হয়েছে এই সিরিজে।

‘তকদীর’ সিরিজে নিজের চরিত্র নিয়েও আশাবাদী তিনি, কারন এক্সপেরিমেন্টাল কাজ খুব বেশি তো হয়না। তাই যখনই এমন সব চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ আসে তখন নিজের পুরোটাই দিতে সাধ্যমতো চেস্টা করেন এই গুনী অভিনেতা। তাই ‘তকদীর’ এ এমন চ্যালেঞ্জিং একটি চরিত্র পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই নিজের সেরাটা দিয়েছেন আমাদের দেশের এই দক্ষ অভিনেতা তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তকদীর’ ওয়েব সিরিজটি একটি আন্তর্জাতিক ওয়েব প্লাটফর্মে প্রচারিত হবে। দেশ-বিদেশের অনেক বাংলাভাষী দর্শক তা উপভোগ করবেন। এছাড়া অন্য ভাষাতেও এটি প্রচারিত হবে। বিষয়টি মাথায় রেখে আমি এবং আমাদের পুরো টিম খুব মনোযোগ দিয়েই কাজটা করেছি। বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময় যতোটা পরিশ্রম বা মনোযোগ দেয়া উচিত আমরা এখানে সেরকমই শ্রম দিয়েছি। কোয়ালিটিতে কোনো রকম ছাড় দিইনি। আশাকরি দর্শকেরা হতাশ হবেন না।

করোনা পরিস্থিতিতে লম্বা একটা সময় বাসায় থাকার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আস্তে আস্তে কাজে ফিরেছেন চঞ্চল চৌধুরী। এরই ধারাবাহিকতায় কিছুদিন আগে আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিমের সঙ্গে বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে দেখা গেছে চঞ্চল চৌধুরীকে। জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নির্দেশনায় সর্বশেষ ‘টেলিভিশন’ সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তারা।

এবার একই নির্মাতার পরিচালনায় তাদের এই বিজ্ঞাপন বেশ সাড়া জাগিয়েছে। ‘মনপুরা’ ‘আয়নাবাজি’ ‘টেলিভিশন’ বা ‘দেবী’র মতো নান্দনিক এবং ব্যবসাসফল সিনেমার অভিনেতা বরাবরই ভিন্নধর্মী কাজ করতে চেয়েছেন। মুক্তির অপক্ষোয় আছে তার অভিনীত ‘পাপ পূণ্য’ এবং মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্র। ভিন্নধর্মী কনটেন্ট, দক্ষ অভিনয় শিল্পীদের একাগ্রতা এবং নির্মানের মুন্সিয়ানা দিয়ে এই সিনেমাগুলিও মন জয় করবে সবার সেকথা বলা যায় নিঃসন্দেহে।

ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই এর জন্য নির্মিত ওয়েব সিরিজটি আগামী ১৮ই ডিসেম্বর রিলিজ দেয়া হবে। উল্লেখ্য দেশের বাইরে কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের জন্য এটিই চঞ্চল চৌধুরীর প্রথম কাজ। নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও তিনি নিজেকে অধিষ্ঠিত করবেন এক স্বতন্ত্র স্থানে এটাই কামনা। অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং শুভ কামনা রইলো আমাদের দেশের এই গুনী এবং দক্ষ অভিনেতার জন্য।

Ad