‘রুম্মান রশীদ খান’ যার লেখনীতে সেলুলয়েডে ‘বিশ্বসুন্দরী’

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : গত সপ্তাহে মুক্তিপ্রাপ্ত বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘বিশ্বসুন্দরী’ সমালোচক এবং সাধারণ দর্শকদের কাছ থেকে প্রশংসা যেমন পাচ্ছে তেমনি এই সিনেমার মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দর্শকেরাও হলমুখী হয়েছে। এই সিনেমার মাধ্যমে টেলিভিশনের জনপ্রিয় নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনার প্রথম সিনেমাতে ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত দুই তারকা সিয়াম-পরীমনি প্রথমবার জুটি বাধঁলেন।

এই জুটির অসাধারণ রসায়নে ‘তুই কি আমার হবি রে’ রোমান্টিক গানটি সিনেমা মুক্তির আগেই সুপারহিট। দেশের খ্যাতনামা বেশকিছু শিল্পী এবং কলাকুশলীদের দেখা মিলেছে এই বিগ বাজেটের সিনেমায়।

সব শ্রেনীর দর্শকদের হলমুখী করার জন্য এসব চমকের পাশাপাশি যারা সিনেমা দেখেছেন তারা সবাই একবাক্যে প্রশংসা করেছেন সিনেমার ব্যতিক্রমী এবং ভিন্নধর্মী গল্প এবং সংলাপের। যেকোনো সিনেমার মূল স্তম্ভ হচ্ছে এর গল্প বা কনটেন্ট আর ‘বিশ্বসুন্দরী’র ক্ষেত্রে এই স্তম্ভ/ভিত্তি যার মাধ্যমে সেলুলয়েডে উঠে এসেছে তিনি রুম্মান রশীদ খান।

সিনেমাপ্রেমী এই তরুন ২০১৩ সালে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’ সিনেমার মাধ্যমে গল্পকার হিসেবে তার যাত্রা শুরু করেছিলেন। শাকিব খান এবং জয়া আহসান অভিনীত এই সিনেমাটি ওই বছরের সেরা ব্যবসাসফল সিনেমা হিসেবেও আলোচনায় ছিল। সিনেমার গল্পকার, চিত্রনাট্যকার বা সংলাপ রচয়িতা হিসেবে ‘বিশ্বসুন্দরী’ তার তৃতীয় সৃষ্টি।

তৃতীয় চলচ্চিত্রের সফলতা প্রসঙ্গে রুম্মান রশীদ খান বলেন, সফল হয়েছি কিনা এটি বলার সময় এখনো আসেনি। তবে দর্শক যে আমাদের বলা গল্পের সাথে একাত্ম হতে পারছে, এটিকে সফলতা বলা যায়। তবে ’বিশ্বসুন্দরী’ যদি এতটুকু সফল হয়ে থাকে, তার প্রধান কৃতিত্ব প্রযোজক সান মিউজিক এন্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেড-এর। এই প্রযোজনা সংস্থার প্রধান শ্রদ্ধেয় অঞ্জন চৌধুরী, নির্বাহী প্রযোজক অজয় কুমার কুন্ডু এই বৈশ্বিক মহামারী করোনার সময়েও যে সিনেমাটি মুক্তি দেয়ার সাহস করেছেন, তার জন্য তাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা।

তারা সাহস করেছেন বলেই বোঝা গেল, দর্শক আবারো সিনেমা হলে আসতে চাইছেন। ‘বিশ্বসুন্দরী’ দর্শক পছন্দ করার জন্য অভিনন্দন জানাই পরিচালক চয়নিকা চৌধুরীকেও। আমার প্রথম লেখা নাটকের পরিচালক তিনি। তার প্রথম চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার আমি। আমার লেখা গল্পটি ঠিকঠাকভাবে স্ক্রিনে আসে কিনা, এ নিয়ে আমিও বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলাম।

তবে ১১ ডিসেম্বর সিনেমাটি প্রথমবার সিনেমা হলে দেখার পর দুশ্চিন্তার পাহাড় বুক থেমে নেমে গেছে। ক্রিয়েটিভ মানুষরা কখনো নিজেদের কাজে তৃপ্ত হয়না। আমিও নই। তবে দর্শক যে ‘বিশ্বসুন্দরী’ কে পেয়েছে, তা কোনোভাবেই ফেলে দেয়ার মত সিনেমা নয়-এ ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী।

রুম্মান রশীদ খান আরো জানান, দীর্ঘ ৩ মাস পরিচালক ও টিমের সাথে আলোচনার পর স্ক্রিপ্ট লিখতে বসি। সত্যিকথা বলতে আমি টানা ৭ দিন সবকিছু থেকেই নিজেকে আলাদা করে রেখেছিলাম। অফিসে যাইনি, ফোন বন্ধ ছিলো, ফেসবুক বা অন্যান্য সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকেও বিদায় নিয়েছিলাম আমি।

এমনকি এ সময় আমার স্ত্রী মিতুও আমাকে স্বাধীনভাবে লেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্য তার মায়ের বাসায় চলে গিয়েছিলো। রুম্মান রশীদ খান কৃতজ্ঞার সুর টানেন শিল্পী-কলাকুশলীদের উদ্দেশ্যে, একটি চলচ্চিত্র টিমওয়ার্ক ছাড়া কখনো সফল হয় না। পরীমনি-সিয়াম তাদের সেরাটা দিয়েছেন ছবিতে। তাদের জুটিকে ম্যাজিকাল মনে হয়েছে স্ক্রিনে।

চম্পার মত গুণী অভিনেত্রী গল্পের পয়োজনে তার চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করেছেন। এছাড়া শক্তিশালী অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু, মনিরা মিঠু, আনন্দ খালেদ, হীরা, খালেদ হোসেন সুজন, সীমান্ত তো আছেন-ই, বিশেষ চরিত্রে আলমগীরও ছিলেন ভীষণ রকম সাবলীল।

অনেকেই বলছেন, ‘বিশ্বসুন্দরী’ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে বেশ ক’টি বিভাগে এগিয়ে থাকবেন। এ প্রসঙ্গে রুম্মান রশীদ খান বলেন, পুরস্কার নিয়ে আমরা কেউ-ই ভাবছি না। পেয়ে গেলে অবশ্যই ভালো। না পেলেও আফসোসের কিছু নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমি এখনো নিজেকে পুরস্কারের যোগ্য মনে করিনা। সবে তো শুরু। অনেক পথ পাড়ি দেবার এখনো বাকি আছে। তবে দর্শকেরা সিনেমাটি পছন্দ করছেন এটাও অনেক বড় পুরস্কার।

এই বছরের সবচাইতে সফল চলচ্চিত্র ‘বিশ্বসুন্দরী’ সিনেমার পুরো টিমের জন্য রইলো অভিনন্দন এবং শুভকামনা। চলচ্চিত্রের কঠিন সময়ে তরুণ অথচ দক্ষ মানুষগুলোর সিনেমার প্রতি ভালোবাসা এবং কিছু করে দেখানোর স্পৃহা আবারো ফিরিয়ে নিয়ে আসবে আমাদের চলচ্চিত্রের সোনালি দিনগুলো এটাই প্রত্যাশা।

Ad