গরমে লেবুর শরবতে যত উপকার

নিউজ ডেস্ক : চৈত্র মাসের প্রখর রৌদে ক্লান্ত হয়ে গেলে। আপনি নিশ্চয়ই প্রথমেই শরবত খেতে চাইবেন? বাজারের রং মেশানো ভেজাল সফট পাউডার আর চিনি দিয়ে হয়তো সেই শরবত তৈরি করবেন। কিন্তু এটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর। অতিরিক্ত কেমিক্যাল মেশানো সফট পাউডার ব্যবহারে দেহে বিভিন্ন রোগ বালাই হতে পারে।

তবে আপনি যদি লেবুর রস আর চিনির শরবত খান। তাহলে একদিনকে যেমন গরমে তৃষ্ণা মিটলো অন্যদিকে আপনার শরীর পেল উপকারী কিছু ভিটামিন।

লেবুর শরবত খেলে যত উপকার হয় :

১. লেবুর শরবত আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে। লেবুতে থাকা পলিফেনলস আপনার ক্ষুধা কমিয়ে আনবে। লেবু পানি পান করলে শরীরে জমে থাকা টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়। প্রতিদিন নাস্তার আগে এক গ্লাস লেবুর শরবত পান করার উপদেশ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

২. এতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা। লেবুর মতো সাইট্রাস ফলগুলো ভিটামিন সি-তে ভরপুর, যা আমাদের প্রতিরক্ষা তন্ত্রকে করে আরো সক্রিয়। সংক্রমণ প্রতিরোধেও লেবুর ভূমিকা অত্যাধিক। লেবু আমাদের পাকস্থলীতে এসিডিক পরিবেশের সৃষ্টি করে, এর ফলে প্যাথোজেনের মতো রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সেখানে টিকতে পারে না। লেবুর মধ্যে থাকে পলিনিউট্রিয়েন্টস নামের রাসায়নিক, এটি একটি ভালো মানের এন্টি-অক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আমাদের শরীর পরিশোধিত করে।

৩. লেবুর শরবতে আপনার হজম ক্ষমতা বাড়াবে। লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড পাকস্থলীর খাদ্যগুলো ভাঙতে সাহায্য করে, যা সামগ্রিক পরিপাক ব্যবস্থাকে উন্নত করে। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে পাকস্থলীর এসিডগুলো আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায়, গবেষণায় দেখা যায় ৩০ শতাংশ বয়স্ক পুরুষ এবং ৬০ শতাংশ বয়স্ক নারীরা অ্যাট্রোফিক গ্যাস্ট্রিটিস এ ভুগে থাকেন; যার ফলে পাকস্থলীতে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত এসিডের সংকট দেখা দেয়। তাই বয়স্কদের পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা দূর করতে লেবু বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন লেবুর শরবত পান করলে ত্বকের আর্দ্রতার মাত্রা বজায় থাকে।

৪. দেহের ভিটামিন সি এর অভাব পূরণে লেবুর জুড়ি নেই। এক কাপের ১-৪ ভাগ লেবুর শরবতের মধ্যে ২৩ দশমিক ৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। প্রতিদিন এক গ্লাস লেবুর শরবত আমাদের শরীরের ভিটামিন সি এর চাহিদা বেশ ভালোভাবে পূরণ করে। ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি-র‌্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধে ব্যাপক সাহায্য করে। তাছাড়া আমরা সবাই জানি ভিটামিন সি ‘স্কার্ভি’ রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যের জন্য লেবুর শরবত অত্যন্ত উপকারী। শক্তি বাড়ায় এবং চুল ও ত্বক সুন্দর করে তোলে।

৫. দেহে পানির সঠিক পরিমাণ বজায় রাখতেও রয়েছে লেবুর কার্যদকারিতা। যদিও লেবু সরাসরি আমাদের দেহে পানির পরিমাণ বাড়ায় না, কিন্তু লেবুর শরবতের মতো ফ্লেভারযুক্ত পানীয়গুলো আমাদের তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে আমরা মনের অজান্তেই এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় বেশি গ্রহণ করি এবং আমাদের দেহে পানির সঠিক পরিমাণও বজায় থাকে।ত্বকের ‘পিএইচ’য়ের ভারসাম্য বজায় রাখে লেবু।

৬. নিয়মিত লেবুর শরবত পান করার ফলে আপনার চেহারা থেকে বয়স্কের ছাপ দূর হবে। এই শরবতটি আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি কোলাজেন নামক রাসায়নিককে সক্রিয় করে আমাদের ত্বকের নিচে থাকা কানেক্টিভ টিস্যুগুলো মেরামতে সাহায্য করে।

৭. যকৃতের কাজেও সাহয্য করে লেবুর শরবত। দেহ থেকে অপদ্রব্য শোষণে আমাদের লিভারকে দারুণ সাপোর্ট দিয়ে থাকে লেবু। যেহেতু আমাদের দেহে পানির পরিমাণ বৃদ্ধিতে লেবু সহায়তা করে, সেহেতু এটি যকৃতকেও আমাদের দেহের বর্জ্য ফিল্টারে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে থাকে। তাছাড়াও বিভিন্ন প্রাণীর ওপর গবেষণা করে পাওয়া যায় লেবুর ফ্লেভারযুক্ত পানীয় যকৃতে বিষাক্ত পদার্থের পরিমাণ কমিয়ে আনে এবং সেখানে চর্বি জমতে বাঁধা দেয়।

৮. লেবুর শরবত দেহে পটাশিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। পটাশিয়ামযুক্ত ফলের কথা বললেই আমাদের মাথায় চলে আসে কলার নাম। কিন্তু শুধু কলাই নয়, লেবুও দেহের পটাশিয়াম লেভেল বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উল্লেখ্য, পটাশিয়ামের প্রধান উৎস হচ্ছে ফলমূল এবং শাকসবজি। শরীরের কোষ গঠন এবং কোষীয় বিপাকের জন্য পটাশিয়াম অধিক প্রয়োজনীয়। এটি একটি ভালো ইলেক্ট্রোলাইট এবং এটি আমাদের শরীর জুড়ে স্নায়ু এবং মাংসপেশির মধ্যে তড়িৎ সংযোগ সাধনে ভূমিকা রাখে। ফলে আমাদের স্নায়ু-পেশীর শক্তি বেড়ে যায় বহুগুণ !

৯. নিয়মিত লেবুর শরবত পানে কোষ্টকাঠিন্য দূর হবে! হ্যাঁ লেবুর শরবত আমাদের অন্ত্রের মধ্যে খাদ্য এবং মল এর চলাচলকে সুগম করে তোলে।

১০. কিডনীতে পাথর জমতে বাঁধা দেয় লেবুর শরবত। কিডনীতে পাথর হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে কারণ হচ্ছে পানি শূন্যতা। প্রতিদিন লেবুর শরবত পান শরীরের পানিশূন্যতা রোধ করবে। কিছু কিছু পাথরের মূল গঠন উপাদান হলো ক্যালসিয়াম লবণ। লেবুর শরবতে থাকা এসিড ক্যালসিয়াম লবণের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে একে ক্ষয়প্রাপ্ত করে। সাইট্রিক এসিড ক্যালসিয়াম অণুগুলোকে একসঙ্গে জমে পাথরে পরিণত হতে বাঁধা প্রদান করে।

১১. নি:শ্বাসে আনে সজীবতা! না, কোনো টুথপেস্টের বিজ্ঞাপনের কথা বলছি না। মুখে থাকা ব্যাকটেরিয়া প্রতিহত করতে দারুণ কাজ করে লেবুর সাইট্রিক এসিড। কিন্তু সাইট্রিক এসিড বেশিক্ষণ দাঁতের মধ্যে আটকে থাকলে তা দাঁতের এনামেল ক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে চিকিৎসকরা লেবুর শরবত পানের সময় নল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

১২. বিপাকেও (মেটাবোলিজম) দারুণ ভূমিকা রাখে লেবুর শরবত! সকাল সকাল খালি পেটে এক গ্লাস লেবুর শরবত শরীরের বিপাকের কাজে নিয়জিত অঙ্গগুলোকে তাদের কাজ আহুরু করতে দারুণভাবে সাহায্য করে। এর ফলে ওজন থাকে সুনিয়ন্ত্রিত এবং শরীর হয় কর্মচঞ্চল। যখন পেট ভরা ভরা অনুভূত হয়, তখন এক গ্লাস লেবুর শরবত টনিকের মতো কাজ করে। তবে সর্বোত্তম উপকারের জন্য পানি কুসুম গরম করে নেয়া ভালো।

তথ্য সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট।

Ad