‘বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের উন্নত মানের চা বাজার সৃষ্টি হয়েছে’

ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনী অফিসার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন মেহেদী হাসান। তারপর প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট-এ এবং পরবর্তীতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে তিনি ক্যারিয়ার প্রথম পাঁচ বছর এই প্রতিষ্ঠানে অতিক্রম করেন।

এছাড়াও তিনি মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট এর ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে এবং সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাশেম ফুডস লিমিটেডের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট এ ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বর্তমানে তিনি ওরিয়ন গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন টি কোম্পানি লিমিটেডের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট এর হেড অফ এক্সপোট হিসেবে কর্মরত আছেন। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এসকে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

এসকে মিডিয়া : করোনাকালে চায়ের চাহিদা কতোটা বেড়েছে?

মেহেদী হাসান : করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্ববাজারে চা এর চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে বিশ্বে চা পানের চাহিদা আগের চেয়ে অনেক বেশী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং মানুষ আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। তাই দেশের বাজারের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞগণ করোনা প্রতিরোধে চা পানের উপকারিতা অনেক কার্যকর বলে মনে করছেন। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ চা রপ্তানিতে প্রায় ১০০ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

মেহেদী হাসান

এসকে মিডিয়া : বছরে বছরে অভ্যন্তরিণ বাজারে কত শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হচ্ছে। বাজারের আকার কতো কোটি টাকার?

মেহেদী হাসান : বিভিন্ন পরিসংখ্যানের সূত্রমতে: গত বছর (২০১৯ সাল) চা শিল্প ১৬৫ বছরের ইতিহাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের নতুন রেকর্ড গড়ে। বছরটিতে রেকর্ড ৯ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। তার আগের বছর ২০১৮ সালে দেশে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে চায়ের উৎপাদন ১৪০ মিলিয়ন বা ১৪ কোটি কেজিতে উন্নীত করতে কাজ করছে চা বোর্ড।

চায়ের উৎপাদন ভালো হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে চা রফতানি করে কিছু আয়ও হচ্ছে। চা রফতানি করে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩৭ লাখ ১০ হাজার ডলার, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৮ লাখ ২০ হাজার ডলার আয় হয়েছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয়। দেশ স্বাধীনের সময় দেশে চা বাগানের সংখ্যা ছিল ১৫০টি। তখন তিন কোটি কেজির মতো চা উৎপাদন হত।

বর্তমানে সারাদেশে বিদেশি কোম্পানি, সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ছোট-বড় মিলিয়ে চা বাগানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৬টি। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে রয়েছে ৯২টি চা বাগান। বাকিগুলোর মধ্যে হবিগঞ্জে ২৪টি, সিলেটে ১৯টি, চট্টগ্রামে ২২টি, পঞ্চগড়ে সাতটি, রাঙ্গামাটিতে দুটি ও ঠাকুরগাঁওয়ে একটি। এসব বাগানে মোট জমির পরিমাণ দুই লাখ ৭৯ হাজার ৪৩৯ একর।

মেহেদী হাসান

এদিকে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদনের পরও চলতি বছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কম ধরা হয়েছে। গত বছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ মিলিয়ন বা ৮ কোটি কেজি। চলতি বছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার কেজি।

এসকে মিডিয়া : রপ্তানি বাজারের অবস্থা কি? কোন কোন দেশে আমাদের চা রপ্তানি হচ্ছে?

মেহেদী হাসান : করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্ববাজারে চা রপ্তানিতে বাংলাদেশের একটি ভালো সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটি মূলত বিশ্ব বাজারে চায়ের চাহিদা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য বড় বড় রপ্তানিকারক দেশ চীন ভারত শ্রীলংকা ভিয়েতনাম কেনিয়া ইত্যাদি দেশকে উপেক্ষা করে অনেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিশ্বে চা এর চাহিদার একাংশ মেটাতে বাংলাদেশকে চা আমদানির জন্য বেছে নিচ্ছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে চা উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের উন্নত মানের চা বাজার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ওরিয়ন টি কোম্পানি লিমিটেড ওরিয়ন গ্রুপ একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওরিয়ন নিজস্ব ব্র্যান্ডর প্যাকেটজাত চা বিশ্বর অনেক দেশে রপ্তানি করেছে। রপ্তানির জন্য কম্পানির একটি বিশেষ টিম নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, ২০২০ সালে ২০টি দেশে ওরিয়ন টি কোম্পানি লিমিটেড নিজস্ব ব্র্যান্ডর প্যাকেটজাত চা রপ্তানি করেছে; এদের মধ্যে বাংলাদেশ নতুন ৬টি দেশে চা রপ্তানি করেছে।

উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই, সৌদি আরব, গ্রীস, সাইপ্রাস, কানাডা , মালেশিয়া, মরিশাস, ব্রুনাই, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স , ইতালি, কাতার, বাহারাইন, জাপান ইত্যাদি দেশসহ আরও অনেক নতুন দেশে যা রপ্তানির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

মেহেদী হাসান

এসকে মিডিয়া : কতগুলো ফ্লেভারের চা আছে? আপনাদের চায়ের বিশেষত্ব কি?

মেহেদী হাসান : ওরিয়ন টি কোম্পানি লিমিটেড বর্তমান দেশীয় বাজারে ‘জাফলং’ ব্র্যান্ডের গ্রিন টি ও ব্ল্যাক টি অনেক ধরনের প্যাকেজিং নিয়ে দেশীয় বাজারে ভোক্তাগণের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে একটি বাংলাদেশী পণ্য হিসেবে ওরিয়ন নিজস্ব নামে ওরিয়ন ব্র্যান্ডের গ্রিন টি ও ব্ল্যাক টি, টি ব্যাগ ও লুজ আকারে অনেক ধরনের প্যাকেজিং নিয়ে বিশ্ববাজারে রপ্তানি করে যাচ্ছে। ওরিয়ন ব্র্যান্ডের চা এর বিশেষত্ব হল সেরা বাগানের সেরা চা এবং বিশেষ ব্লেন্ড।

এসকে মিডিয়া : গ্রিন টি আছে কি? এর বাজার কি হারে বাড়ছে? আপনাদের আন্তর্জাতিক কোন চায়ের মান সনদ আছে?

মেহেদী হাসান : ওরিয়ন টি কোম্পানি লিমিটেড এর নিজস্ব ‘ওরিয়ন’ ও ‘জাফলং’ ব্র্যান্ডের গ্রিন টি রয়েছে। এই চা খুবই স্বাস্থ্যকর এবং উন্নত মানের পানীয় এবং একটি অভিজাত পণ্য হিসেবে আখ্যায়িত করে, রপ্তানি বাজারে গ্রিন টি এর চাহিদা ব্যাপক। এস জি এস (SGS) এর মত একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি ওরিয়নের চায়ের গুণগতমান তাদের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে সকল গুণগতমান বিদ্যমান থাকার সনদ প্রদান করেছে।

এসকে মিডিয়া : আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?

মেহেদী হাসান : ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখেই ওরিয়ন টি কোম্পানি লিমিটেড কাজ করে যাচ্ছে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আরো অনেক নতুন নতুন স্বাদের বেশ কিছু উন্নত মানের চা বাজারে নিয়ে আসার চিন্তাভাবনা করছে। এছাড়াও আরও অনেক নতুন নতুন দেশে চা রপ্তানির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এতে করে দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সাথে সাথে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এবং বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পাবে।

Ad