না ফেরার দেশে ‘ফকির আলমগীর’

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন ছেলে মাশুক আলমগীর রাজীব।

শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কোভিড ইউনিটে ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় ফকির আলমগীরের হার্ট অ্যাটাক হয়। রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে ইউনাইটেড হাসপাতালের কোভিড আইসিইউ ইউনিটে তিনি মৃত্যুবরন করেন।

কয়েক দিন ধরে ফকির আলমগীর জ্বর ও খুসখুসে কাশিতে ভুগছিলেন। পরে তিনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসকের পরামর্শমতো কোভিড-১৯ পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন, তিনি করোনা পজিটিভ। তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাঁকে গ্রিন রোডের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিলো।

পরবর্তীতে আইসিইউ প্রয়োজন পড়লে সেখান থেকে তাঁকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আগে থেকেই তাঁর ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ছিলো। যে কারণে জটিলতা বাড়তে থাকে। হাসপাতালে ভর্তির পর দুই ব্যাগ প্লাজমা দেওয়া হলে অবস্থা কিছুটা ভালোও হয়, তবে শেষরক্ষা হলোনা।

১৯৫০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে জন্মগ্রহণ করা এই গুনী দেশপ্রেমী মানুষটি শিল্পী কালামৃধা গোবিন্দ হাইস্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ফকির আলমগীর ষাটের দশক থেকে সংগীতের সাথে জড়িত। গান গাওয়ার পাশাপাশি বাঁশীবাদক হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল।

বাংলাদেশের সব ঐতিহাসিক আন্দোলনে তিনি তাঁর গান দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও গণশিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ষাটের দশকে বিভিন্ন আন্দোলন–সংগ্রামে এবং ’৬৯-এর গণ–অভ্যুত্থানে গণসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। গণ–অভ্যুথান, ’৭১–এর মুক্তিযুদ্ধ ও ৯০–এর সামরিক শাসনবিরোধী গণ–আন্দোলনে তিনি শামিল হয়েছিলেন তাঁর গান দিয়ে।

ফকির আলমগীরের বাবার নাম মো. হাচেন উদ্দিন ফকির, মায়ের নাম বেগম হাবিবুন্নেসা। মৃত্যুকালে ফকির আলমগীরের বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে রেখে গেছেন। তার চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে এক সোনালী অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো আজ। তবে তিনি রয়ে যাবেন অনন্তকাল তার গান, এবং দেশের সংকটাবস্থায় তার সাহসী অবদানের জন্য।

Ad