শুভ জন্মদিন অরুনা বিশ্বাস

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : বাংলা সিনেমার অন্যতম আলোচিত এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রী অরুনা বিশ্বাস। ১৯৬৭ সালের ১ আগস্ট তিনি মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার জাবরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের যাত্রা শিল্পের পথিকৃৎ যাত্রা সম্রাট অমলেন্দু বিশ্বাস এবং যাত্রাশিল্পের আরেক নক্ষত্র জ্যোৎস্না বিশ্বাস দম্পতির কন্যা তিনি। গুণী এই অভিনেত্রীর জন্মদিনে রইলো অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

উল্লেখ্য, অরুনা বিশ্বাসের বাবা অমলেন্দু বিশ্বাসকে ১৯৮৯ সালে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়। অন্যদিকে তার মা জ্যোৎস্না বিশ্বাসকেও ২০১১ সালে একই পদকে ভূষিত করা হয়। ১৯৮৩ সালে টাংগাইল এর ঐতিহ্যবাহী ভারতেশ্বরী হোমস থেকে তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইডেন কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৮৭ সালে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।

প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশনায় অরুনা বিশ্বাস প্রথমবার অভিনয় করেন বাংলাদেশ বেতারের একটি নাটকে। এরপর তিনি জিয়া আনসারীর নির্দেশনায় নরেশ ভূঁইয়ার লেখায় ‘এখানেই জীবন’ নাটকে অসাধারণ অভিনয় করে আলোচনায় আসেন। সেই ধারাবাহিকতায় প্রয়াত পরিচালক জহিরুল হক অরুনা বিশ্বাসকে পরিচয় করিয়ে দেন নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে।

নায়করাজ অরুনাকে দেখার পর নিজের ছেলে বাপ্পারাজের সঙ্গে জুটি করে নির্মাণ করেন ব্যবসাসফল এবং আলোচিত সিনেমা ‘চাপাডাঙ্গার বউ’। শাবানা এবং এটিএম শামসুজ্জামানের পাশাপাশি নবাগত এই দুই নতুন মুখ দর্শকের মনে জায়গা করে নেন তাদের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে। এরপরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বানিজ্যিক ঘরানার সিনেমায় একের পর এক কাজ করে গেছেন তিনি।

‘পরশ পাথর’, ‘দুর্নাম’, ‘সম্মান’, ‘কৈফিয়ত’, ‘দংশন’, ‘চরম আঘাত’, ‘বন্ধু বেঈমান’, ‘সাদী মোবারক’, ‘আবদার’, ‘প্রেম শক্তি’, ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’, ‘মাটির কসম’, ‘জনম দুঃখী’, ‘সতীনের সংসার’, ‘মিস্টার মাওলা’, ‘ত্যাগ’, ‘মায়ের দোয়া’, ‘হিংসার আগুন’, ‘অবুঝ সন্তান’সহ আরো অনেক জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সম্প্রতি চলচ্চিত্রে নিজের ৩৫ বছর পূর্ণ করলেন এই গুনী অভিনেত্রী।

১৯৮৬ সালের জুন মাসে তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘চাপাডাঙ্গার বউ’ মুক্তি পেয়েছিলো। নব্বই দশকের মাঝামাঝি এসে অভিনয়ে অনিয়মিত হলেও দর্শকদের কাছে তার আবেদন এখনো রয়ে গেছে। আক্ষেপের বিষয় হলো একক অভিনেত্রী হিসেবে তাকে নির্মাতারা সেভাবে উপস্থাপন করেননি। তাই প্বার্শ অভিনেত্রী হিসেবেই তাকে দেখা গেছে বেশিরভাগ সময়ে। তবে সেই সব চরিত্রেই দিতি, অঞ্জু ঘোষ, চম্পার মতো গুনী এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের সাথে পাল্লা দিয়েই অভিনয় করেছেন তিনি।

চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পথচলায় অরুনা বিশ্বাস এক সময় নাটক প্রযোজনা ও নির্মাণের সঙ্গেও নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। সর্বশেষ তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ঠিকানা বত্রিশ’ খণ্ড চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, যা বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়াও অরুনা বিশ্বাস ‘এক আজলা আগুন’ নামেরও একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। সম্প্রতি সরকারি অনুদান প্রাপ্ত সিনেমার লিষ্টে অরুনা বিশ্বাস পরিচালিত ‘অসম্ভব’ সিনেমাটিও স্থান করে নিয়েছে।

এছাড়া এই সময় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বিটিভিতে অনিমেষ আইচ পরিচালিত থ্রিলার ঘরনার ‘এখানে কেউ থাকেনা’ নাটকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। দীর্ঘ বিরতির পর সামনে অরুনা বিশ্বাসকে এম রাহিম পরিচালিত ‘শান’ এবং ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত ‘অন্তরাত্মা’ সিনেমায় দেখা যাবে।

Ad