আবরারের ‘আধখানা ভালো ছেলে আধা মস্তান’

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : এই সময়ে এসে আমাদের দেশে গতানুগতিকের বাইরে এসে যে কয়জন নির্মাতা প্রতিনিয়ত ভিন্নধর্মী কনটেন্ট এবং ব্যতিক্রমী নির্মান নিয়ে হাজির হচ্ছেন তাদের মধ্যে আলোচিত একটি নাম আবরার আতহার। বিজ্ঞাপন, নাটক বা ওয়েবফিল্ম বিনোদনের বিভিন্ন মাধ্যমে সংখ্যায় কম হলেও তার প্রতিটা কাজই দর্শকদের কাছ থেকে প্রশংসা পায়।

নতুন সময়ের এই গুনী নির্মাতা এবার আসছেন মিউজিক্যাল ফিল্ম ‘আধখানা ভালো ছেলে আধা মস্তান’ নিয়ে। জনপ্রিয় এবং আলোচিত গায়ক শায়ান চৌধুরী অর্ণবকে নিয়ে এই মিউজিক্যাল ফিল্ম নিয়ে ইতিমধ্যেই ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর মাত্র তিনদিন পরেই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে রিলিজ পাচ্ছে এই বহুল প্রতীক্ষিত মিউজিক্যাল ফিল্মটি।

আলোচিত সংগীতশিল্পী শায়ান চৌধুরী অর্ণবের বিভিন্ন সময়ে গাওয়া এক ডজন গান নিয়ে মিউজিক্যাল ডকুমেন্টারি ‘আধখানা ভালো ছেলে আধা মস্তান’ এর পোষ্টার, ট্রেলার ইতিমধ্যে রিলিজ দেয়া হয়েছে। ভক্ত বা সাধারণ দর্শক তো বটেই সাথে সাথে দেশের অনেক আলোচিত শিল্পীদেরকেও এই মিউজিক্যাল ফিল্ম নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে।

আগামী ২৩শে সেপ্টেম্বর মুক্তি পাচ্ছে ‘আধখানা ভালো ছেলে আধা মস্তান’। আমাদের দেশে ওটিটিতে যেরকম কাজ হয় এটি সেসব থেকে অনেকটাই ভিন্ন। অবশ্য নির্মাতা যখন আবরার তখন ভিন্নতা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।

এক সাক্ষাৎকারে আবরার জানিয়েছিলেন, ‘আমরা একটা মিউজিক্যাল ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানিয়েছি। এখানে অর্ণবের নতুন এবং পুরানো মিলিয়ে ১২টি গান থাকবে। পুরোনো যেসব গান ছিল সেগুলো একদম অন্য ডিজাইনে পারফর্ম করা হয়েছে। সাথে ছোট ছোট বেশ কিছু কথোপকথন থাকছে।

একথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় যে, এই চলচ্চিত্রে পাওয়া যাবে এক অন্য অর্ণবকে। ভক্তরা এমন অর্ণবকে আগে দেখেননি। গান ও গানের বাইরে অর্ণব কেমন, তা-ই উঠে আসবে ‘অর্ণব: আধখানা ভালো ছেলে আধা মস্তান’ চলচ্চিত্রে।

আবরার আতহার আরো জানিয়েছিলেন ‘আমি আসলে ব্যক্তিগতভাবে অর্ণব ভাইকে অনেক আগে থেকেই চিনি। আমি তাঁকে যেভাবে চিনি, তিনি আমাকে যেভাবে জানেন, অন্যরা তাঁকে সেভাবে জানেন না। আমাদের দুজনের মধ্যে একটা ক্রেজি আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে। এই আধুনিক যুগে সবাই একজন পারফর্মারকে দেখে, সত্যিকারের শিল্পীর ভেতরের যে কমপ্লেক্স, তা দেখতে পায় না।

তিনি যে পারফর্মারের চেয়েও বেশি কিছু, তা–ই দেখাতে চেয়েছি আমি। খুব কাছের মানুষকে যে পয়েন্ট অব ভিউ থেকে দেখতে পেয়েছি, সেটাই এখানে তুলে ধরার চেস্টা করেছি। তবে কতোটা সফল হয়েছি তা সময়ই বলে দিবে তবে ব্যক্তিগত ভাবে এই কাজটি আমাকে স্বস্থি দিয়েছে।

নির্মাতা হিসেবে ‘লাইফ ইন আদার ওয়ার্ডস’ নামের একটি শর্টফিল্ম আবরার আতহারকে ভিন্নধারার নির্মাতা হিসেবে আলোচনায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে বায়োস্কোপে প্রচারিত টেলিফিল্ম ‘কলি ২.০’ তাকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়। এই টেলিফিল্মের সফলতা সাধারণ মানুষের কাছেও আবরার আতাহারকে পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা এনে দেয়।

ক্রিকেটের নানা মজার বিষয় নিয়ে তার পরিচালিত নাটক ‘গলিতে গন্ডগোল’ প্রশংসিত হয়। তবে ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জি-ফাইভের প্রথম বাংলাদেশী কনটেন্ট ‘মাইনকার চিপায়’ তাকে নির্মাতা হিসেবে একটি স্বতন্ত্র জায়গা এনে দিয়েছে। আফরান নিশো, শরীফুল রাজ, শ্যামল মাওলা অভিনীত এই ওয়েবফিল্ম বাংলাদেশের বাইরে ভারতেও প্রশংসা কুড়িয়েছে ভিন্নধর্মী নির্মাণের কারনে।

আবরারের শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে কিছুটা একা। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত ঢাকায় ছিলেন তারপর লেখাপড়ার জন্য ভারতে চলে গিয়েছিলেন তিনি। ইউনিভার্সিটি শেষ করে আবার ঢাকায় ফেরা। বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। পরিবারে একটাই ছেলে হবার কারনে গল্প বলার সঙ্গী খোঁজার একটা ব্যপার ছিলো। ঠিক এমন একটা সময় মিউজিকের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে।

গানে ড্রাম বাজিয়ে নিজের একাকীত্ব দূর করার একটা চেষ্টা ছিলো আবরারের। তবে এক সময় তার মনে হতে লাগলো এই পদ্ধতিটা অনেক লিমিটেড একটা বিষয়। তারপরে সময়ের পরিক্রমায় এখন পরিচালনায় মাধ্যমে নিজের গল্প এবং আইডিয়া অনেক মানুষের সাথে ছড়িয়ে দিতে পারছেন বলেই জানিয়েছেন তিনি একটি সাক্ষাৎকারে।

উল্লেখ্য, দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘চরকি’ তে এই ৭০ মিনিটের মিউজিক্যাল ফিল্মটি রিলিজ দেয়া হবে এই মাসের ২৩ তারিখে। অল্পসময়েই ‘চরকি’ বেশকিছু নান্দনিক কাজ উপহার দিয়েছে।

আদনান আল রাজীবের ‘ইউটিউমার’, শিহাব শাহীনের ‘মরীচিকা’ বা কিছুদিন আগে রিলিজের পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ মতো কনটেন্ট যেমন উপহার দিয়েছে তেমনি রবিউল আলম রবির মতো তুলনামূলক নবীন কিন্তু দক্ষ নির্মাতাও ‘ঊনলৌকিক’ এর মতো নান্দনিক অ্যান্থোলজিক্যাল সিরিজ বানিয়ে চমকে দিয়েছেন।

এবার চমক দেখানোর পালা তরুন কিন্তু এনার্জিটিক আবরার আতহারের। শিল্পীসত্তা এবং ব্যক্তিসত্তার অর্ণব সেলুলয়েডে কতোটা প্রানবন্ত হয়ে উঠতে পারেন সেটিই এখন দেখার পালা। আবরার আতহার এই বছরের শুরুর দিকে এই ফিল্মটির কাজ শুরু করেছিলেন।

ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও কক্সবাজারে শুটিং করা হয়েছে। অর্ণবের সাথে সাথে মিউজিক্যাল ফিল্মটিতে তাঁর পরিবার ও বন্ধুদেরকেও দেখা যাবে। জানা গেছে প্রতিটি গানে অর্ণবের সঙ্গে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজাবেন তাঁর অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস গানের দলের সদস্যরা।

করোনা পরিস্থিতি উদয় না হলে আবরার আতহার এতোদিনে নিজের প্রথম সিনেমার কাজ শুরু করে দিতেন। গল্প, প্রযোজক, শিল্পী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত ছিলো বলেই জানা গেছে। কিন্তু হঠাৎ করে করোনা হানা দেয়ায় আপাতত কাজ শুরু করছেন না তিনি এবং তার টিম। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অফিশিয়াল ঘোষনা দেবার মাধ্যমে নিজের প্রথম সিনেমা নির্মানের কাজ শুরু করার কথা ছিলো।

তরুন গুনী নির্মাতা আবরার আতহার বরাবরই ভিন্নতা উপহার দিয়েছেন তার কাজগুলোতে। এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কল্যানে কাজের বাজেট এবং কারিগরি নানা ধরনের সুযোগ প্রাপ্তির বিষয়টা সহজলভ্য হওয়ায় সামনের দিনগুলোতে তিনি তার নির্মানের মুন্সিয়ানা দিয়ে প্রতিটি কনটেন্ট নতুনত্বের সাথে উপস্থাপন করবেন এটাই কামনা।

Ad