নদী এবং নারীর গল্প নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে ‘পদ্মাপুরান’

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবার কারনে আস্তে আস্তে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আসার কারনে সাধারণ দর্শকদের বিনোদনের অভাব পূরনের জন্য অন্যান্য সেক্টরের মতো এখন প্রেক্ষাগৃহ গুলোও খুলে দেয়া হয়েছে।

গত সপ্তাহে ‘চোখ’ নামের একটি সিনেমা মুক্তির পরে এই শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে আরেকটি নতুন এবং প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘পদ্মাপুরান’।

পদ্মা পাড়ের মানুষের জীবনের নানা গল্প নিয়ে নির্মিত এই ‘পদ্মাপুরান’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রাশিদ পলাশ প্রথমবার নির্মাতা হিসেবে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন চলচ্চিত্রে। যদিও সুত্রমতে ‘নাইওর’ তার নির্মিত প্রথম সিনেমা তবে যেহুতু সেটি এখনও মুক্তি পায়নি তাই ’পদ্মাপুরান’কেই বলা যাচ্ছে তার প্রথম চলচ্চিত্র।

অন্যদিকে বিনোদনের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সামাজিক নানা বার্তা দেবার যে প্রচলন আগে ছিলো কিন্তু এখনকার সময়ে সেটা অমাবস্যার চাঁদ হলেও এই সিনেমার মাধ্যমে সেই বিষয়টাও ফিরিয়ে আনার একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস করেছেন ‘পদ্মাপুরাণ’ সিনেমার টিম।

ফারাক্কা বাঁধের কারণে আমাদের দেশের নদী এবং নদীকে কেন্দ্র করা বসবাস করা জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার নানা বাধা-বিপত্তি এবং তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের বিষয়গুলো এই সিনেমায় নান্দনিক ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে।

সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাবার পরেই সিনেমাটি মুক্তির জন্য নানা ধাপ পার হবার পর জানানো হয়েছিলো যে আগামী ৮ই অক্টোবর সিনেমাটি সারাদেশে মুক্তি দেয়া হবে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রমোশন বা প্রচারনার জন্য রিলিজ দেয়া হয়েছে ‘পদ্মাপুরান’ এর অ্যানিমেশন টিজার। উল্লেখ্য এই প্রথমবার বাংলাদেশে সিনেমার অ্যানিমেশন টিজার প্রকাশিত হলো বলে জানা গেছে।

এই ভিন্নধর্মী টিজারটি রিলিজ দেয়া হয় লাইভ টেকনোলজির ইউটিউব চ্যানেলে। টিজার রিলিজের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসা এবং আলোচনা পাবার পরে এবার রিলিজ দেয়া হয়েছে সিনেমার ট্রেলার। ২ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ট্রেলার রিলিজের পরেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পজেটিভ রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছে।

ড্রোনশটে এমন অসাধারণভাবে পদ্মা নদী এবং পদ্মাপাড়ের সাধারণ মানুষের দেখা আমরা পেয়েছি বলে মনে পড়েনা। বেশকিছু দেখার মতো সিন চোখে পড়েছে এই ট্রেলারে। এছাড়া সিনেমার গল্প সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া গেলেও প্রেক্ষাগৃহে যেয়ে দেখার পরেই বোঝা যাবে নদী এবং নারীর গল্পটি কতোটা মন জয় করতে সক্ষম হলো।

ট্রেলারে বেশকিছু সংলাপ যার মধ্যে কয়েকটি বেশ সাহসী এবং বাস্তবতার নিরিখেই উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলোও সিনেমা দেখার আগ্রহ যোগায়।

‘পদ্মাপুরান’ সিনেমাতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাদিয়া মাহি, প্রসূন আজাদ, শম্পা রেজা, সুমিত সেনগুপ্ত, জয়রাজ, কায়েস চৌধুরী, সূচনা শিকদার, রেশমী, হেদায়েত নান্নু, আশরাফুল আশিষ, সাদিয়া তানজিন প্রমুখ। এই সিনেমায় নিজের চরিত্রের বিশ্বাসযোগ্য উপস্থাপনের জন্য অভিনেত্রী সাদিয়া মাহী তার পুরো চুল কেটে ফেলেছিলেন।

অন্যদিকে টেলিভিশনের নন্দিত অভিনেত্রী শম্পা রেজাকে পুরোপুরি এক ভিন্নভাবে দেখা যাবে এই সিনেমায়। তার মতো নান্দনিক এক অভিনেত্রীকে এমন বৈচিত্র‍্যময় চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেয়া হয়েছে এটাও প্রশংসার যোগ্য। সুমিত সেনগুপ্ত এই সময়ের অন্যতম সম্ভাবনাময় একজন অভিনেতা।

বড়পর্দায় অভিনেতা হিসেবে ‘পদ্মাপুরান’ তার ক্যারিয়ারে আলদা মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। প্রসূন আজাদের চরিত্রটিও বেশ ভালো গুরুত্ব পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এখন দেখার বিষয় এসবের মিশেলে নির্মাতা রাশিদ পলাশ তার নির্মানের জোরে কতোটা সফল হন।

একটি সাক্ষাৎকারে পরিচালক রাশিদ পলাশ বলেছেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি আমাদের দেশের দর্শকদের নতুন কিছু উপহার দিতে। অনেকদিন পরে সিনেমা হলে গিয়ে দর্শকরা আমাদের দেশের সিনেমা দেখবে এটাই আমাদের আশা। পদ্মাপুরান আমাদের মাটি, জল এবং মানুষের গল্প। আশাকরি কেউই হতাশ হবেনা।

বছর দুই ধরেই সিনেমাটির শুটিং এবং অন্যান্য কাজ শেষ করেছে পুরো টিম। মানিকগঞ্জের পদ্মার চরে হয়েছিলো প্রতিকূল আবহাওয়া মাথায় নিয়েই সিনেমাটির শুটিং সম্পন্ন হয়েছে।’

সিনেমাটির জন্য আগ্রহ তৈরী হবার জন্য একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে এর সংগীত। টিজার, ট্রেলার এবং একটি গান রিলিজের বদৌলতে এটুকু বলা যায় যে, বাংলা সিনেমায় মাটি এবং নদীর কাছাকাছি যেয়ে মৌলিক গানের দেখা এবং শুনতে পাওয়া যাবে অনেকদিন পরে।

ক্লোজআপ খ্যাত মুহিন খান এই সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেছেন। জামাল হোসেনের কথা ও মুহিন খানের নিজেরই সুরে ‘পদ্মপুরাণ’ সিনেমার টাইটেল গানেও কন্ঠ দিয়েছেন তিনি।

আমাদের দেশের বা বলা ভালো আমাদের কিছুটা চেনা কিছুটা অজানা জীবনের এক মৌলিক গল্প, সেটির সাথে যুতসই চিত্রায়ণ, নির্মানে মুন্সিয়ানা এবং দক্ষ অভিনয় শিল্পীদের ভালো এবং ভিন্নধর্মী কিছু করার প্রচেস্টা নিয়ে ‘পদ্মাপুরান’ টিম তৈরী প্রেক্ষাগৃহে আসার জন্য।

এবার সুস্থ ধারার ব্যতিক্রমী এই কাজটির মূল্যায়ন করার পালা দর্শকদের। ভালো হলো না মন্দ তা বোঝা যাবে সিনেমাটি দেখার পরে তবে তার আগে বাংলা চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরিয়ে আনার জন্য প্রেক্ষাগৃহে ফিরে আসার পদক্ষেপ যে নিতেই হচ্ছে আমাদের তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

Ad