জমজমাট কমেডি গল্পের ‘সুগার ফ্রি’

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : গত বৃহস্পতিবার রিলিজ পাওয়া মিনি সিরিজ ‘সুগার ফ্রি’ অন্যরকম এক বিনোদনধর্মী ফিকশন হিসেবে ইতিমধ্যে আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছে৷ সাবিলা নূর, তামিম মৃধা, মোস্তাফিজুর নূর ইমরান, তাপস কুমার মৃধা এই চারজন মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

এছাড়া বিশেষ একটি চরিত্রে মনির খান শিমুলের উপস্থিতিও নজর কেড়েছে। আর বি প্রীতম নির্মাতা হিসেবে এর আগেও বেশকিছু আলোচিত এবং জনপ্রিয় কাজ উপহার দিলেও ‘সুগার ফ্রি’ কমেডি ঘরানায় তার দক্ষ নির্মানের অন্যতম একটি উদাহরণ হিসেবে জায়গা করে নিবে।

এই সময়ে এসে দর্শকদের চাহিদা বা নির্মাতাদের স্বাচ্ছন্দ্যে অথবা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয় দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ সব কিছু মিলিয়ে এখন সিরিয়াস গল্প বা থ্রিলারধর্মী কাজ খুব বেশি দেখা যায়। গতানুগতিক রোমান্টিক গল্প নিয়ে অনেক কাজ হলেও এই ঘরনার গল্পে খুব ভিন্নধর্মী অভিনয় দেখার সুযোগ তেমনভাবে লক্ষ্য করা যায়না।

তবে হতাশাজনক হলেও সত্য একসময়ে কমেডি গল্পের নাটক বিনোদনের অন্যতম একটি ধারা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও সময়ের সাথে সাথে কমেডির নামে শুরু হয় একরমের ভাঁড়ামো। যার কারনে একটা শ্রেনীর দর্শক এই কমেডি ফিকশন থেকে একেবারেই মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

কিছুদিন আগে দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘চরকি’তে আদনান আল রাজীবের ‘ইউটিউমার’ পুরোপুরি ভিন্নধর্মী কনটেন্ট হাজির করে আলোচনায় এসেছিলো। একই প্ল্যাটফর্মে এবার দেখার সুযোগ মিললো মিনি কমেডি সিরিজ ‘সুগার ফ্রি’।

এই মিনি সিরিজ দেখার সময় যে ব্যাপারটা ভালো লেগেছিলো যে, এটা দেখার সময় থ্রিলার বা সাসপেন্স নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো ব্যাপার নাই, চিন্তা করতে হয়নি গল্প, চিত্রনাট্য বা এরকম কোনো ইস্যু নিয়ে।

সাবিলা নূর সাম্প্রতিক সময়ে অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে হাজির করছেন এতা অবশ্যই প্রশংসনীয়। নিজের দক্ষতা বা প্রতিনিয়ত আরো ভালো করার যে চেস্টা তিনি করে যাচ্ছেন তা তার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়। ‘সুগার ফ্রি’ তেও কিডন্যাপ হওয়া এক মেয়ের চরিত্রে তিনি ভিন্ন এক ছাপ রেখেছেন।

তামিম মৃধা তার চরিত্রের চাহিদা অনুযায়ী মানানসই ছিলেন। তবে এই সিরিজের লাইমলাইটে থাকা দুজন হলেন মোস্তাফিজুর নূর ইমরান এবং তাপস কুমার মৃধা। এই দুজনের জুটি আমাকে ‘মুন্নাভাই এম বি বি এস’ এর সঞ্জয় দত্ত এবং আরশাদ ওয়ার্সি র কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলো একটু সময়ের জন্য হলেও।

তাদের এক্সপ্রেশন, ডায়লগ ডেলিভারি বা বডি ল্যাংগুয়েজ দিয়ে তারা এই মিনি সিরিজের বিগ সারপ্রাইজ। বিশেষ করে মোস্তাফিজুর নূর ইমরানকে এর আগে সাধারণত একটু সিরিয়াস বা ভিন্নধর্মী চরিত্রে দেখার পরে এই সিরিজে এমন সাবলীল কমেডির উপস্থাপনা পুরোই চমক। তার সাথে তাল মিলিয়ে তাপস কুমার মৃধাও ছিলেন দশে দশ।

মিন্টু এবং নান্নু চরিত্রের দুজন দেশসেরা ছিনতাইকারী হবার ইচ্ছা থেকে রাস্তায় তামিমকে ছিনতাই, বিয়ের আসর থেকে পাত্রী সাবিলাকে অপহরণ সহ একের পর এক মজাদার যে কান্ড ঘটায় সেটায় ভর করেই এই সিরিজের গল্প এগোয়। তবে শেষে যে মেসেজটা দেয়া হয়েছে তা এককথায় অসাধারণ।

এই সময়ে দেশের যুব সমাজ এবং অপরাধ জগতের যে অবস্থা বা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা বাস্তবতারই রূপরেখা। তবে এই সিরিজ আরো ভালো হতে পারতোনা বা কোনো খুঁত নেই এমনটা নয়। বেশকিছু বিষয়ে আরো মনোযোগ দেয়াই যেতো তবে সবমিলিয়ে মন্দ লাগবেনা।

কোনো রহস্য বা সামনে কি হবে এসব নিয়ে চিন্তা না করে পুরোপুরি ভাবে নির্মল বিনোদন উপভোগ করার মতো একটি সিরিজ এটি। যারা বিভিন্ন ভাষায় সিরিয়াস কনটেন্ট দেখতে দেখতে একঘেয়েমিতে হাঁপিয়ে উঠেছেন তারা সময় করে চরকিতে দেখে নিতে পারেন এই মিনি সিরিজটি। ‘সুগার ফ্রি’ নামের সাথে মিল রেখে এটি দেখা যাবে একদমই ফ্রিতে। নির্মল বিনোদন যারা খুজছেন তারা দেখে নিতে পারেন খুব সহজেই।

Ad