এই সময়ের আস্থাশীল অভিনেতা সোহেল মন্ডল

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : এই সময়ে যে নামটি কোনো ফিকশনে দেখলেই অভিনয়ের ক্ষেত্রে আস্থা রাখা যায় নিঃসন্দেহে সেই নামটি হচ্ছে সোহেল মন্ডল। সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কল্যানে অভিনেতা হিসেবে আমাদের দেশে যে কয়জন দর্শকদের কাছে নতুনভাবে আলোচনায় এসেছেন তাদের মধ্যে সোহেল মন্ডলের নাম থাকবে শীর্ষ কাতারে। সম্প্রতি তিনি নতুন করে আলোচনায় এসেছেন ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে হইচই এর ওয়েব সিরিজ ‘রিফিউজি’র মাধ্যমে।

ইমতিয়াজ সজীব পরিচালিত এই সারভাইভাল ড্রামায় উঠে এসেছে শরনার্থী বা রিফিউজি সমস্যার নানা দিক। বিহারি জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা, মানসিক টানাপোড়েন, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী নানা কার্যক্রম, স্বাধীনতার এতো বছর পরেও বাংলাদেশী বাঙ্গালিদের বিহারিদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি সব কিছুই উঠে এসেছে এই ফিকশনে।

এক বিহারি যুবক ইকবালের চরিত্রে এই সিরিজে সোহেল মন্ডল নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিলেন। মাদক বেচাকানার সাথে জড়িত এক পুলিশের ইনফর্মার হিসেবে সিরিজের শুরু থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত নিজের অভিনয়ের দ্যুতি ছড়িয়েছেন তিনি।

ছোট ভাইকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনা, সবচেয়ে ভালো বন্ধুর সাথে দৃষ্টিভঙ্গির নানা অমিল থাকা সত্ত্বেও মানসিক এক টানাপোড়েন নিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্ক টেনে নিয়ে যাওয়া সহ জীবনের নানা উত্থান পতন সব কিছুই অসাধারণ সুন্দর দক্ষতায় সেলুলয়েডে উপস্থাপন করলেন সোহেল মন্ডল।

আফজাল হোসেন, জাকিয়া বারী মম, শরীফ সিরাজ, মনির খান শিমুলের মতো নান্দনিক এবং শক্তিশালী অভিনেতা অভিনেত্রীর সাথে একই স্ক্রিনে হাজির হয়েও নিজের আলো ছড়াতে কমতি রাখেননি তিনি।

ইন্টেলিজেন্স অফিসার মারিয়া ওরফে জাকিয়া বারী মম’র সাথে ইনফর্মার ইকবাল মানে সোহেল মন্ডল যতোটা সময় স্ক্রিনে ছিলেন একে অন্যের উপর প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে যেমন সাবলীলতা দেখিয়েছেন তিনি আবার ওয়াসিম রূপে শরীফ সিরাজের সাথে মতের অমিল, জীবনযাত্রার ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকা সত্ত্বেও মানসিক একটা টানের উপলব্ধিও তুলে ধরেছেন নান্দনিকভাবে।

জেলে ছোট ভাইকে দেখতে যেয়ে ইমোশনাল বড় ভাই হিসেবেও তিনি অনন্য। একজন বিহারি যিনি তার অস্তিত্ব, চিন্তা, ভবিষ্যত সব মিলিয়ে এক দোদুল্যমান পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন এমন এক চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে যতোটুকু লেয়ার ছিলো সোহেল মন্ডল তার অভিনয় দিয়ে প্রতিটা লেয়ারেই নিজস্বতার ছাপ রেখেছেন।

এই সিরিজে ইকবাল চরিত্রে বিশ্বাসযোগ্য ভাবে উপস্থাপনের জন্য আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো বিহারিদের মতো করে উর্দু এবং হিন্দীর সংমিশ্রণে সেই ভাষায় সংলাপ বলা এবং সেটা সিচুয়েশন এবং সিনের সাথে যেনো খাপ খায় সেই বিষয়টায় ছাড় না দেয়া।

কোনো কোনো সময় কিছু কিছু সিনে কিছুটা খাপছাড়া মনে হলেও সোহেল মন্ডলের অভিনয় নৈপূন্যতা সেসব কমতি বা খামতি মনে জায়গা করে নিতে দেয়নি। বিশেষ করে তার এক্সপ্রেশন ছিলো দেখার মতো।

দুই বাংলায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করা ওয়েব সিরিজ ‘তাকদীর’ এর সেই ভাইছা পরবর্তীতে মুগ্ধতা ছড়িয়েছিলেন আরেক প্রশংসিত ‘বলি’ সিরিজে রুস্তম হিসেব। এছাড়া ‘কাউয়া’, ‘ডোন্ট রাইট মি’, ‘৯ এপ্রিল’, ‘টান’ বা কয়দিন আগে ‘এই বিল্ডিংয়ে মেয়ে নিষেধ’এর মতো একের পর এক ভিন্নধর্মী এবং ব্যতিক্রমী কনটেন্টে অভিনয় প্রতিভার এমন ছাপ রেখেছেন যে এই সময়ের অন্যতম আস্থাশীল অভিনেতা হিসেবে তার নাম নেয়া হয় বেশ জোরেশোরেই।

ডিরেক্টরস আর্টিস্ট হিসেবে ইতিমধ্যেই ইন্ডাস্ট্রিতে এক স্বতন্ত্র জায়গা গড়ে নেয়া এই পরিশ্রমী এবং শক্তিশালী অভিনেতা টেলিভিশন, ওটিটিতে নিজের শক্ত জায়গা করে নেয়া এই অভিনেতাকে চলচ্চিত্রের মতো বিশাল মাধ্যমেও দেখা যাবে মেজবাউর রহমান সুমনের বহুল প্রতীক্ষিত এবং ইতিমধ্যে ট্রেলার রিলিজের পর হইচই ফেলে দেয়া ‘হাওয়া’য়।

এছাড়া আরো নতুন দুইটা চলচ্চিত্রে কাজের কথাও প্রায় চূড়ান্ত তবে অফিশিয়াল ঘোষণা আসার আগে সেই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু শেয়ার করতে চান না এই তরুন অভিনেতা। শিগগিরই অফিশিয়ালি সবাইকে সেই প্রজেক্টগুলো নিজেই শেয়ার করবেন বলে জানিয়েছেন সোহেল মন্ডল।

শুভ কামনা রইলো এই গুণী এবং শক্তিশালী অভিনেতা সোহেল মন্ডলের জন্য। সামনের দিনগুলোতে তার প্রতিভা আর দক্ষ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি এগিয়ে যাবেন অনেক দূরে সেই কামনা রইলো।

Ad