‘সাহস’ দিয়ে আলোচনায় নবীন অভিনেতা কুন্তল বিশ্বাস বুকি

আফজালুর ফেরদৌস রুমন : কিছুদিন আগেই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘চরকি’তে রিলিজ পেয়েছে সাজ্জাদ খান পরিচালিত আলোচিত এবং প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘সাহস’। মফস্বল শহরের মানুষের জীবনযাত্রার সাথে মিল রেখে সাম্প্রতিক সময়ের নানা সামাজিক ইস্যু নিয়েই সিনেমার গল্প। ভিন্নধর্মী গল্প, চিত্রনাট্য এবং দক্ষ অভিনয়ের কারনে ইতিমধ্যে সুনির্মিত এই সিনেমাটি অনেকের কাছ থেকেই প্রশংসা লাভ করেছে।

মূল চরিত্রে নাজিয়া হক অর্ষা এবং মোস্তাফিজুর নূর ইমরান ছাড়াও মেহেদী চরিত্রে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন নবাগত কুন্তল বিশ্বাস বুকি। প্রথম সিনেমাতেই একজন বখাটে মাস্তানের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা প্রদর্শন করা এই সম্ভাবনাময় তরুন অভিনেতাকে নিয়েই এই বিশেষ ফিচার।

বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের দৃষ্টিনন্দিত নানা ড্রোন শট আর চমৎকার দৃশ্যায়নের সাথে ব্যাকগ্রাউন্ডে মেহেদী চরিত্রে কুন্তল বিশ্বাস বুকির বাগেরহাটের আঞ্চলিক ভাষায় সংলাপের মধ্য দিয়ে ‘সাহস’ সিনেমার যে শুরুটা হয় সিনেমা শেষ হওয়া পর্যন্ত সেই ভালো লাগা বজায় থাকে যে কয়টি কারনের জন্য তার মধ্যে অন্যতম হলো কুন্তল বিশ্বাসের অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার মধ্য দিয়ে।

স্থানীয় নেতার ছত্রছায়ায় বখাটে এক মাস্তান মেহেদী যে কিনা চাঁদা তোলে, পার্কে বা রাস্তায় মেয়েদের উত্যক্ত করে, নেশায় আসক্ত আবার দরকার পড়লে মারামারি থেকে খুন সব কিছুতেই সিদ্ধহস্ত তেমন এক যুবকের চরিত্রে এতোটাই বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় করলেন যে প্রথম সিনেমা বলে মনেই হয়না।

এতো বিশ্বাসযোগ্য ভাবে প্রথম সিনেমাতেই এমন নেগেটিভ একটি চরিত্রে অভিনয়ের গল্পটা কুন্তলের কাছে জানতে চাইলে লজ্জা মিশ্রিত হাসির সাথে কুন্তল বলেন- ‘অভিনয়ের প্রতি এই ভালোবাসা বা ভালো কিছু করার ইচ্ছাটা সেই ছোটবেলা থেকেই আমার। অভিনয় সম্পর্কে সেই সময় তেমন কিছু জানা বা বোঝা না থাকলেও অভিনয়ের প্রতি একটা টান কাজ করতো সবসময়।

মজার একটা কথা হচ্ছে- আমার বয়স যখন ৯/১০ বছর তখন আমি আমাদের গ্রামের একটা নাটকে একটা মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করি’। তারপর আরো অনেক অভিনয় করেছি। একটা সময় এভাবেই আস্তে আস্তে অভিনয়ের প্রতি একটা টান এসে যায়।’

আর সেই টানের জোরেই গ্রাম থেকে বাগেরহাট শহরে আসা। একটা সময় নাট্যগুরু শেখ নজরুল ইসলাম ( ডাকনাম মেজদা)’র কাছেই অভিনয়ের হাতেখড়ি। উনার হাত ধরে থিয়েটার চর্চা শুরু, নাচ, মঞ্চনাটক, পথ নাটক, পট গান, জারি গান এসব করতে করতে একটা সময় পরিচয় হয় মোস্তাফিজুর নূর ইমরানের সাথে।

একটা সময় এই পরিচয় গুরু-শিষ্যর মতো একটা আদল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, মোস্তাফিজুর নূর ইমরানকে মন থেকে নিজের গুরু মানেন এবং সেটা অকপটে সেকথা জানালেন কুন্তল। মোস্তাফিজুর নূর ইমরানের নেতৃত্ব এবং প্রচেষ্টার কারনে বেশকিছু অভিনয় পাগল তরুনদের নিয়ে গড়া হয় থিয়েটার রেপার্টরি বাগেরহাট(TRB)।

‘সাহস’ সিনেমার শুরুর কাহিনী বা গল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে কুন্তল বলেন, আমাদের সিনেমা ‘সাহস’ এর শুরুটা কিন্তু ‘থিয়েটার রেপার্টরি বাগেরহাট’ থেকেই। একদিন ইমরান ভাই সিনেমা বানানোর ইচ্ছা জানানোর পরে আমাদেরই বন্ধু অনুপম দাস এই চমৎকার গল্পটি আমাদের শোনায়। আমাদের চেনা এক গল্প যা চোখের সামনে প্রতিনিয়ত ঘটতে দেখি কিন্তু সেভাবে অনুধাবন করিনা এমন একটা কাহিনী নিমিষেই সবাই লুফে নেই।

একটা সময় গল্প এবং চিত্রনাট্য রেডি হলে ইমরান ভাই আমাকে মেহেদী চরিত্রটি করার জন্য বলেন। গুরুর আদেশ চির-ধার্য্য তাই দেরী না করে এই চরিত্রটি করার প্রস্তুতি নিতে থাকি। বাগেরহাট শহরকে কেন্দ্র করা এক কাহিনী, যএখানে ভালো -মন্দ দুই রকমের বিভিন্ন চরিত্র আছে সেখানে স্থানীয় এক মাস্তানের বা বলা যায় নেগেটিভ শেডের ক্যারেক্টারে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর জন্য চ্যালেঞ্জিং নানা কিছুর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে আমাকে।

তবে সিনেমা রিলিজের পর সবার প্রশংসা আর ভালোবাসা আমাকে মনে সাহস যেমন এনে দিয়েছে তেমনি সামনে এমন চ্যালেঞ্জ নেবার ভয়টা কাটিয়ে দিতে সাহায্যও করেছে।

স্ক্রিপ্টের পাতা থেকে ক্যামেরার সামনে বা বলা চলে সেলুলয়েডে এটি বিশ্বাসযোগ্য ভাবে তুলে ধরার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে কুন্তল বলেন- ‘সত্যি কথা বলতে এই চরিত্রটা নিয়ে আমি বেশ স্টাডি করেছি, সেক্ষেত্রে আমাকে গুরু এবং বন্ধু অনুপম অনেক হেল্প করেছে। আসলে মেহেদী চরিত্রের তরুনের তো আমাদের সমাজে অভাব নেই রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ে শত শত মেহেদী তবে চ্যালেঞ্জ ছিলো সেই মেহেদীকে নিজের ভিতর ধারন করা তাও নিজের মতো করে।

আমার গুরু ইমরান ভাই, গল্পকার বন্ধু অনুপম তো ছিলোই সাথে আমাদের ডিওপি নাজেরি সাগর ভাই এবং আমাদের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হাসনাত বিন মাতিন ভাই চরিত্রটা সম্পর্কে আমাকে আরো ধারনা দেয় যে কিভাবে চরিত্রটি সেলুলয়েডে তুলে ধরা উচিত। সাথে লোকাল অ্যাকসেন্টে সংলাপ বলা এবং সেটা বিশ্বাসযোগ্য ভাবে ডেলিভারি দেয়াটাও বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিলো আমার জন্য।’

‘সাহস’ সিনেমায় সহশিল্পীদের সম্পর্কে কুন্তল বিশ্বাস বুকি এককথায় বলেন- ‘আমি আসলে কৃতজ্ঞ। আমার সহ শিল্পী সবাই ছিলেন দুর্দান্ত, বিশেষ করে গুরু মোস্তাফিজুর নূর ইমরান ভাই এবং নাজিয়া হক অর্ষা আপু। উনাদের মত দক্ষ এবং নন্দিত অভিনেতা অভিনেত্রীর সাথে কাজ করতে পারা আমার জন্য নিঃসন্দেহে ভাগ্যের ব্যাপার।

এছাড়া খায়রুল বাসার ভাই, খালিদ মাহবুব তুর্য ভাই, সানি, রাজেশ সবাই যার যার জায়গায় ছিলেন অদ্বিতীয়। প্রত্যকেই যথেষ্ট সাহায্য করেছেন গল্প এবং চিত্রনাট্য অনুযায়ী চরিত্রগুলো সেলুলয়েডে ঠিকঠাক ভাবে উপস্থাপনের জন্য।’

কুন্তল আরো যোগ করেন- আমাদের ডিরেক্টর সাজ্জাদ ভাইয়ের কথা না বললে আসলে অসর্ণতা অসম্পূর্ণতা রয়ে যাবে। অসাধারন ব্যাক্তিত্বের একজন মানুষ তিনি। এবং একই সাথে ভয়ানক সাহসী একজন মানুষ না হলে আমাদের মত নতুনদের নিয়ে কাজ করার সাহস তিনি হয়তো করতেন না।

শ্যুটিংয়ের সময় কখনোই আমাদের সাথে উনি ডিরেক্টর সুলভ আচরন করেননি সব সময় বড় ভাইয়ের মত বুঝিয়েছেন যে কিভাবে কাজটা করলে সেটা ভিন্নতা আনবে। উনি এবং বাকি সবাই না হলে আজ আমি মেহেদী হতে পারতাম না।’

Ad